হোক ইচ্ছের বহিঃপ্রকাশ...

দার্জিলিং ডায়েরি – পর্ব ০১

বাঙ্গালীর কাছে দার্জিলিং বরাবরই রোমঞ্চকর, ভ্রমণ বিলাশ। মেঘে ঢাকা পাহাড়ের সারি আর পাইন বনের ফাঁকে উকি দেয়া কাঞ্চনজংঘ বাঙ্গালিকে মাতাল করেছে বহুকাল হতে। আমাদের এবারের যাত্রা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তরে অবস্থিত দার্জিলিং শহর এবং এর আশেপাশের কিছু জায়গা। আমরা চেষ্টা করেছি দার্জিলিংয়ের জনপ্রিয় কিন্তু ঘিঞ্চি জনবহুল পর্যটন এলাকাগুলো এড়িয়ে একটু অফ বিট জায়গাগুলো ঘুরে দেখার। আশা করছি আমাদের অফ বিট দার্জিলিং ভ্রমন গল্প আপনাদের ভাল লাগবে।

ট্রেনে লালমনিরহাট যাত্রা

আজ আমাদের যাত্রার প্রথম দিন। আমরা ভারতের বুড়িমারি সীমান্ত পার হয়ে শিলিগুড়ি যাব। আমরা গাইবান্ধা থেকে প্রথমে যাব লালমনিরহাট। আমাদের ট্রেন ছিল ভোর ৫:৪০ এ। কিন্তু ট্রেন আসে ২ ঘণ্টা লেট করে ৭:৩০ এ। লালমানিরহাট পৌঁছতে সময় লাগে ১:৩০ মিনিটে। ঢাকা থেকে বুড়িমারি আসার অনেক বাস আছে। বাসগুলো আপনাকে সরাসরি সীমান্তে নামিয়ে দেবে। আমরা লালমনিরহাট পৌঁছে বাসে করে বুড়িমারি চলে আসলাম। বুড়িমারি সীমান্ত পার হয়ে আমরা একটা টেটো নিয়ে বাইপাসে চলে আসি। তারপর সেখান থেকে বাসে করে শিলিগুড়ি। শিলিগুড়ি পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। জামে মসজিদের পাশে তাজ হোটেলে আমরা চেক ইন করে নেই। হোটেলটা খারাপ ছিল না। ১ হাজার রুপিতে এখানে ভাল হোটেল পাবেন। রুমে টিভি ছিল, ফিল্টার ছিল পানি খাবার। ওয়াইফাই ছিল। পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রুম এবং ওয়াশরুম।

কালিম্পং এ আমাদের হোম-স্টে

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে আমরা চলে এলাম শিলিগুড়ি বাসস্ট্যান্ড এ। এই জায়গাটিকে ওরা জংশন বলে। এখান থেকে সব জায়গায় যাওয়ার বাস পাওয়া যায়। চাইলে শেয়ার গাড়িতে করে আপনি আপনার কাংঙ্খিত জায়গায় যেতে পারবেন। আমরা NBSTC এর বাসে করে কালিংপং এর দিকে রওনা হলাম। সবুজ সুন্দর পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে আমাদের বাস এগিয়ে গেল। বাসগুলো মন্দ নয়। সময় মত ছেড়ে সময় মত পৌঁছে গেল। প্রায় ৩ ঘণ্টা গেলেছিল আমাদের কালিংপং পৌঁছাতে।

কালিম্পং শহর

কালিংপং পৌঁছে আমরা মুগ্ধ হয়ে যাই। সবুজ গাছ আর ফুলে ফুলে ভরা এই পাহাড়ি শহরটি। আমাদের হোমস্টে আগে থেকে বুক করা ছিল। আমরা একটি ট্যাক্সি নিয়ে সেখানে চলে আসলাম। হোমস্টেটি ছবিতে যত সুন্দর মনে হয়েছিল বাস্তবে তারচেয়েও অনেক সুন্দর।

কালিম্পং ক্যাফে

দুপুরে আমরা বের হলাম লাঞ্চ করব বলে। আর ইচ্ছে ছিল হেঁটে হেঁটে এই সুন্দর শহরটি ঘুরব। হাঁটতে হাঁটতে চোখে পড়ল অনেক চার্চ। বাড়ি গুলো ফুলের গাছে সাজানো। চমৎকার রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম ক্যাফে কালিংপং এ। এটি এখানকার খুব জনপ্রিয় রেস্তোঁরা। অপূর্ব সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য অবলোকন করা যায় এখান থেকে। সাথে পাবেন খাবারের চমৎকার স্বাদ। আমরা নিয়েছিলাম চিজ বল, পাস্তা এবং চিজ স্যান্ডউইচ। সুন্দর কিছু সময় ক্যাফেতে কাটিয়ে বিকেল বেলা হাঁটতে হাঁটতে আবার হোমস্টেতে ফিরলাম।

রাতের কালিম্পং শহর

বিশাল খোলা বারান্দায় বসে বসে উপভোগ করতে লাগলাম পাহাড়ে সন্ধ্যা নামার মুহূর্তেগুলো। হাতে কফির মগ নিয়ে রাতের কলিংপং শহর দূর থেকে দেখতে বেশ লাগে। হালকা ঠান্ডা বাতাস ছিল, কিন্তু তা মন ভাল করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। আমাদের হোমস্টের খাবারের স্বাদ ছিল অসাধারণ। রাতে ভাত, চিকেন আর আলুর তরকারির স্বাদ ছিল দারুন। আমরা আয়েশ করে রাতে খাবার খেয়ে শুয়ে পড়লাম। আগামীকাল কলিংপং শহর ঘুরতে বের হবো। আশা করছি আপনিও থাকবেন আমাদের সাথে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp

অন্যান্য লেখা গুলো পড়ুন