হোক ইচ্ছের বহিঃপ্রকাশ...

মানালির দিনগুলি – পর্ব ০১

পাহাড়ি শহর মানালির অন্যতম আকর্ষনীয় স্থান হল ওন্ড মানালি। এখানে রয়েছে মানালির ঐতিহ্যবাহী ক্লাব হাউস এবং হস্ত শিল্পের দারুন সব দোকান। মানালসু নদী যা ওন্ড মানালি ও মানালি কে বিভক্ত করেছে। এই নদীর উপর রয়েছে লাল বীজ যা ওল্ড মানালিকে মূল মানালির সাথে সংযুক্ত করেছে। এছাড়া মূল মানালি শহরের মূল রোডে কেনাকাটা সহ পাইন গাছে ঘেরা সুন্দর পার্কসহ অপূর্ব সব জায়গা উপভোগ করতে আমাদের সাথে থাকুন।

ওল্ড মানালি

স্পিতি উপত্যকাতে গত কয়েকদিন টানা ঘোরাÑঘুরি করে মানালিতে এসে পৌঁছেছিলাম। সন্ধ্যার দিকে। বুকিং ডক্ট কমে আগে থেকে হোটেল বুক করা ছিল। হোটেলটিতে আমরা আমাদের এক বন্ধুর রেফারেন্সে এসেছিলাম। এটি ওল্ড মানালিতে অবস্থিত, নাম ওরচার্ড হাউস -এ হিডেন ট্রাইব। এটি আসলে একটি লুকোনো জায়গাতে। ওল্ড মানালিতে অনেক ওলি গলি পার হয়ে এই হোটেলে আসতে হয়। আমাদের ইচ্ছে ছিল ওল্ড মানালিতে থাকব। কারণ মানালিতে ঐতিহ্য, ইতিহাস, সংস্কৃতি প্রকৃত প্রতিফলন এখানে পাবেন আপনি। মানালির স্থানীয়দের সাথে মিশতে চাইলে বা স্থানীয় জীবনাচার বুঝতে হলে আপনাকে আসতে হবে ওল্ড মানালিতে। আমাদের হোটেলটি অনেক ভিতরে হলেও এখান থেকে প্রকৃতির মনোরম দৃশ্য উপভোগ করা যায়। শান্ত নিরিবিলি সবুজ আপেল গাছে ঘেরা এই হোটেলটি আমাদের খুব ভাল লেগেছে। হোটেলের মালিক বাঙালি। খুব অমায়িক। ২টি বেড রুম, ১টি বড় বাথরুম এবং বিশাল কমন বারান্দা, ভাড়া মাত্র ১০০০ রুপি। এখানকার সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হল এদের খাবার। দারুন স্বাদের সব ধরনের খাবার এখানে পাওয়া যায়। হোটেলের নিজস্ব কিচেন আছে। কিচেনের পার্শ্বে খাবার জায়গা আছে। চাইলে রুমে বসে খেতে পারবেন। ওদের নিজস্ব ফিল্টার আছে। তাই আলাদা করে পানি কিনতে হবে না। স্টাফরা খুবই আন্তরিক। আমরা ৩ রাত ছিলাম এখানে। খুবই চমৎকার সময় কেটেছে আমাদের এই নান্দনিক হোটেলে। রুমের সামনে বরান্দায় বসে আপনার সুন্দর সময় কেটে যাবে।

মানালিতে আমাদের সুন্দর হোটেলটি

কুব সকালে দুজনে হোটেল থেকে বের হলাম। ইচ্ছে ছিল হেঁটে হেঁটে ওল্ড মানালি ঘুরে দেখব। হেঁটে হেঁটে একটি শহর দেখার মজা আলাদ। শহরটিকে বেশ কাছ থেকে অনুভব করা যায়। ওল্ড মানালিতে পাহাড়ি রাস্তা। আপনাকে কখনও ওপরে আবার নীচে নামতে হবে। রাস্তার দুই ধারে প্রচুর হোটেল, রেস্তোঁরা, ক্যাফে। স্থানীয়দের হাতে তৈরি নানান রকমের পণ্য। জামা, জুতো, ব্যাগ, **। মানালিতে প্রচুর ইউরোপীয় পর্যটক আসে। বিশেষ করে ইহুদে একটি মন্দির রয়েছে। প্রচুর ইসরাইলী আসে এখানে। পুরো ওল্ড মানালি জুড়ে নানা বাহারি ক্যাফে রয়েছে যেখানে মজাদার সব খাবার পাবেন। আমরা হাঁটতে হাঁটতে মানালুসু নদীর ধারে চলে এলাম। পাহাড়ি সুন্দর নদী, নদীর উপর রয়েছে রেড ব্রিজ। এই ব্রিজটি ওল্ড মানালি এবং নিউ মানালিকে সংযুক্ত করেছে। এখানে নদীর পারে একটি রেস্টুরেন্টে বলে আমরা সকালের নাস্ত খেয়ে নিলাম। চিকেন ক্লাব স্যান্ডুইচ আর আলু পরোটা। সাথে গরম গরম কফি।

মানালির মল রোড

পাহাড়ি নদীর ধারে বসে নাস্তা খেতে খেতে মনে হচ্ছিল জীবনটা সত্যি সুন্দর। নাস্তা খেয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম ক্লাব হাউসে। ক্লাব হাউসটি অনেক পুরোনো। নানা ইতিহাসের সাক্ষী এই ক্লাব হাউস। নানা রকম ইনডোর গেম সব বিনোদনের কিছু আয়োজন করে রেখেছে। চাইলে কেনাকাটা করতে পারবেন। তবে এখানে ঢুকতে হলে ১০০ রুপি করে টিকিট কাটতে হবে। আমরা ক্লাব হাউজে কিছু সময় ঘুরে চললাম মল রোডের দিকে।। একটি অটো নিয়ে নিলাম, ভাড়া নিল ১০০ রুপি। মল রোডে রয়েছে জামা, কাপড়, ব্যাগ, জুতো এসবের দোকান, অনেক রেস্টুরেন্টও আছে। প্রচুর হোটেল রয়েছে থাকার জন্য। আমরা মল রোডের বিভিন্ন দোকান ঘুরে ঘুরে দেখলাম। তবে আমাদের কাছে মনে হয়েছে শিমলার মল রোডটি বেশি সুন্দর এবং পরিপাটি। আমাদের ইচ্ছে ছিল আগামী দুই দিনের জন্য একটি গাড়ি ঠিক করব বিভিন্ন স্পট ঘোরার জন্য। একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে কথা বলে ৪৫০০ রুপিতে ২ দিনের জন্য গাড়ি ঠিক করলাম। তারপর চলে এলাম মল রোডের পাশে স্থানীয়দের হাতে তৈরি বিভিন্ন পণ্যের মার্কেট দেখতে।

ওল্ড মানালির দোকান

এখানে ঘোরাঘুরি করে আবার হাঁটা দিলাম ওল্ড মানালির দিকে। পথে অনেক সুন্দর সুন্দর হোটেল ক্যাফে দেখতে পেলাম। ফ্লাইং ডাইনিং নামের একটি রেস্টুরেন্ট দেখতে পেলাম। রাতের বেলা হওয়ায় ভেসে ভেসে ডিনার করার ব্যবস্থা করে তারা। দেখে ভাল লাগল। রাস্তার দুই ধারে স্থানীয়রা তাদের হাতে তৈরি পণ্য নিয়ে বসেছে অনেকে। আমরা ঘুরে ঘুরে দেখলাম। কিছু কিনেও নিলাম। যেতে যেতে হঠাৎ পথের পাশে দেখলাম পাইন গাছে ঢাকা একটি পার্ক। দেখে ঢুকে পড়লাম। উঁচু উঁচু পাইন গাছে ঘেরা এই জায়গাটি আমাদের খুব ভাল লেগেছে। অনেক সময় আমরা এখানে বসে থাকলাম। এত ভাল লাগছিল যে কখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়েছে বুঝতে পারিনি। যখন দুজনের পেটে ক্ষুধা লাগছিল তখন বুঝলাম অনেক বেলা হয়ে গেছে। তাই দুজনে সেখান থেকে বের হয়ে আবার হাঁটতে লাগলাম। ওল্ড মানালিতে এসে একটি রেস্টুরেন্ট এ বসে পিৎজা অর্ডার দিলাম। মানালি পিৎজা আর পেস্ট্রি অসাধারণ। কম দামে এত সুস্বাদু পেস্ট্রি আর পিৎজা সত্যিই বিরল। পিৎজা খেতে খেতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এলো।

ক্লাব হাউজ

আমরাও হোটেলের দিকে রওনা হলাম। রাতে ওল্ড মানালি জমজমাট হয়ে ওঠে। সব ক্যাফে, রেস্টেুরেন্টে লাইড মিউজিক হয়। গান-বাজনা, পার্টি দিয়ে বেশ সরগরম থাকে রাতের মানালি। কিন্তু সারাদিনের হাঁটা-হাঁটিতে আমরা ক্লান্ত হয়ে ছিলাম, তাই সন্ধ্যায় হোটেলে ফিরে গেলাম।

পাইন বন

আগামীকাল আমরা যাব রোথাং পাস পথে পড়বে। কথি ভিলেজ সহ অনেক ভিউ পয়েন্ট। সে সকল আকর্ষণীয় স্থানের বিস্তারিত বিবরণ জানতে আগামী পর্ব দেখার আমন্ত্রণ রইল।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp

অন্যান্য লেখা গুলো পড়ুন