সবুজ পাহাড়ে ঘেরা অপূর্ব সুন্দর চিতকুল গ্রাম আর সাদা বরফে আবৃত সুবিশাল কিন্নর কৈলাগ পর্বত সাথে স্পিতি যাবার অনুমতি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যের বিস্তারিত থাকছে এই পর্বে।

ক্যাম্প থেকে বিদায় নিয়ে আমরা চিতকুল গ্রামের দিকে রওনা হলাম। উঁচু উঁচু পাহাড়ে ঘেরা এই গ্রামটি হিমাচল প্রদেশের কিন্নর জেলার সবচেয়ে সুন্দর গাম বলে মনে হয়েছে। শীতকালে এই গ্রামটি তুষারে ঢেকে যায়। তখন এখানকার অধিবাসীরা হিমাচলের নীচু এলাকায় চলে যায়। বলা হয়ে থাকে পুরো ভারতে সবচেয়ে নির্মল বাসাত এই এলাকায় রয়েছে।
চিতকুল থেকে বের হয়ে আমরা আবার মাস্টারাং রাফচাম হয়ে সাংলাতে আসলাম। সাংলারে হালকা চা-নাস্তা খেয়ে আমাদের টুরের সার্বিক সহযোগিতায় যিনি ছিলেন ডিক্সিট ঠাকুর তার সাথে আলাপ করে আসলাম। সাংলাতে তার হোটেল আর রেস্টুরেন্ট রয়েছে।

হালকা চা-নাস্তা আমরা রেফাংপেও এর উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। রেফাংপে তে আমাদের স্পিতি ভ্রমনের অনুমতি নিতে হবে। স্পিতি উপতক্যা বিদেশীদের জন্য সংরক্ষিত এলাকা। এখানে ভ্রমনের জন্য বিদেশীদের আলাদা ভাবে অনুমতি নিতে হয়। রেফাংপেতে টুরিস্ট ইনফরমেশন সেন্টার আছে। সেখানে গড়হশ ঞৎধাবষ নামে একটি বেসরকারি ট্রাভেল এজেন্ট আছে। তারা আমাদেরকে এই অনুমতি নিতে অনেক সাহায্য করেছিল। প্রতি পাসপোর্ট ৪০০ রুপি নিয়েছিল। সেখানে একটি ফরম পূরণ করে দিতে হবে। ওরা একবার চবি তুলবে। তবে ঘন্টাখানেক সময় লাগে এই পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে। পথে যেতে যেতে কিছু কথা বলে নেই। আমরা স্পিতি ভ্রমনের আগে এই অনুমতি নিয়ে নানা জনের কাছে নানা মতামত পেয়েছিলাম। অনেকে বলেছিল অনুমতি লাগে না। আবার অনেকে বলে অনুমতি পাওয়া যায় না। অনেকে বলেছিল মানালি থেকে কাযা চলে যাও, কোন অনুমতি লাগবে না। আমার পরিচিত একজন পাবলিক পরিবহন ব্যবহার করে পুরো স্পিতি সার্কিট ঘুরে গেছেন কোন অনুমতি ছাড়া। তবে আমাদের পরামর্শ হল অনুমতি নিয়ে সঠিক নিয়ম মেনে ভ্রমন করা। কারণ পথে অনেকগুলো চেক পোস্ট আছে। কোন একটি চেক পোস্ট যদি বুঝতে পারে আপনি অনুমতি না নিয়ে ভ্রমণ করছেন এতে যেমন আপনার ক্ষতি তেমনি এটি বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষতি করে। এতে পরবর্তীতে যেসব বাংলাদেশী সেখানে ভ্রমনে যাবে তাদের অনেক অপ্রত্যাশিত বিরম্বনার মুখোমুখি হতে হয়।

আমাদেরকে অনেকে বলেছিল চেকপোটর্স কলকাতার বাঙ্গালি বলে পরিচয় দিতে। এতে সময় কম লাগবে। কিন্তু আমরা কখনও তা করিনি। আমরা সবসময় চেয়েছি একজন বিদেশী হিসেবে যতটুকু আমার পাবার অধিকার রয়েছে, সেটাই আমরা উপভোগ করব। মিথ্যা পরিচয়ে বেশি উপতোগের আকাক্সক্ষা করিনি। আর তাই ভারতের কোথাও কোন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনাকাক্সিক্ষত আচরণের মুখোমুখি হয়নি।
রেকংপে থেকে অনুমতি নিতে নিতে দুপুর হয়ে যায়। কিন্তু আমরা ঠিক করি একবারে কাল্পাতে গিয়ে হোটেলে লাঞ্চ করব। তাই আবার যাত্রা শুরু। কাল্পার যত কাছাকাছি আসতে লাগলাম কিন্নর কৈলাশ পর্বত তত আমাদের কাছাকাছি চলে এলো। হোটেলে যখন পৌঁছলা তখন প্রায় ৩টা বাজে। এখানেও হোটেল রুম থেকে অসম্ভব সুন্দর দৃশ্য। কিন্নর কৈলাশ পর্বতে শ্বেত শুভ্র চুড়া স্বমহিমায় দৃশ্যমান।

আমরা গোসল সেরে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। পুরো হিমাচলে খাবারে কোন সমস্যা। এখানে বেশিরভাগ জায়গায় পনির দিয়ে প্রস্তুত বিভিন্ন খাবার আপনি পাবেন। এছাড়া মুরগির তরকারি বা রাইসের বিভিন্ন পদ বেশিরভাগ জায়গায় পাওয়া যায়। এছাড়া মম বা নুডুলস আর ডিম তো পাবেনই। তাই খাবার নিয়ে তেমন চিন্তার কিছু আছে বলে আমাদের মনে হয় নি। খাওয়া-দাওয়া সেরে আমরা আবার ঘুরতে বের হলাম। আমাদের হোটেলের পাশে চিনি ভিলেজ। আরো কিছুদূর গেলে রুগি ভিলেজ। এখানে আপনি অনেক গ্রাম দেখতে পাবেন। ছোট-ছোট গুচ্ছ কিছু ঘর-বাড়ি একবদ্ধ হয়ে একটি গ্রাম তৈরি করেছে। ছিমছাম এসব গ্রাম গুলো যেমন সুন্দর তেমনি এখানকার অধিবাসীরাও অনেক অমায়িক। সুউচ্চ পাহাড়ের উপর এই জায়গাটির নাম সুইসাইড পয়েন্ট। এটি উল্লেখ্যযোগ্য টুরিস্ট স্পট। তাই অনেক লোকের সমাগম। সবাই এখানে ছবি তোলাতে ব্যস্ত। আমরাও ছবি তুলে কিছু সময় ঘুরে বেড়ালাম।
হোটেলে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে এলো। সন্ধ্যায় এদের পনির পাকোড়া আর মাশালা চায়ের স্বাদ নিতেই হল। আমরা প্রায় প্রতি সন্ধ্যায় পনির পাকোড়া খেয়েছি। হোটেলের দায়িত্বে থাকা লোকজন খুব ভালো ছিল। স্পিতি যাবার আগে শুনেছিলাম অনেক হোটেলে নাকি বাংলাদেশীদের থাকতে দেয় না। কিন্তু আমরা কোথায় এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়নি। বরং সব জায়গায় বেশ ভাল আপ্যায়ন পেয়েছি। অনেক বাংলাদেশী বলে আমাদের বেশ খাতির-যতœ করেছে।

রাতে এখানে বেশ ঠান্ডা পড়ে। তাই বাহিরে যেতে মন চায়নি। আমরা রুমে রাতের খাবার সেরে শুয়ে পড়লাম। নরম বিছানায়। কারণ কাল আমরা রওনা হব খুব সুন্দর আর একটি গ্রাম টাবো এর উদ্দেশ্যে। পথে পড়বে উল্লেখ্যযোগ্য কিছু দর্শনীয় স্থান পুহ, খাব, নাকো, গিউ সহ আরও অনেক জায়গা। পরবর্তী পর্ব উপভোগের আমন্ত্রণ রইল।