সৌন্দর্যের কলতান, কিংবা জীবনের জয়গান হয়ত অপরূপের আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে অজানা প্রকৃতি হ্যাঁ, অজানা সৌন্দর্যের খোঁজে আজ আমাদের যাত্রা শুরু। সকালের নাস্তা সেরে আবার শুরু হল অসম্ভব সুন্দর এই পথ চলা। পথে আমরা গাড়ির জন্য তেল নিয়ে নিলাম। কারণ এর পর পথে আর কোন পেট্রোল পাম্প নেই। একবারে কাজা গিয়ে আবার তেল নিতে পারব। পাহাড়গলো ক্রমে ধূসর হতে শুরু করেছে। পাহাড়ের ভূমিতে সবুজ এর আনাগোনা ক্রমে কমতে লাগলো। পথে পড়ল পুহ নামের একটি গ্রাম। এখানে যেতে হলে ট্রাকে করে যেতে হবে। সাথে গাইড লাগবে। কিন্তু আমাদের হাতে তেমন সময় ছিল না। তাই আমরা স্পিতি নদী এবং সাতলুজ নদীর সংযোগস্থল এর দিকে। এটি খুব সুন্দর একটি জায়গা। ভ্রমনকারীরা তাই এই জায়গায় এসে না থেমে পারে না। আমরাও বেশ কিছু সময় এখানে কাটালাম। দুই পাহাড়ী নদী মিলিত হয়ে এক উত্তাল সৌন্দর্যের অবতারনা করেছে। এই জায়গাটির নাম খাব, যার বাংলা অর্থ স্বপ্ন। স্বপ্নময় প্রকৃতির অপার্থিব রূপ উপভোগ করে আমরা নাকোর দিকে রওনা হলাম। নাকো এখানে একটি উল্লেখ যোগ্য জায়গা। এই গ্রামেও একটি মনেস্ট্রি রয়েছে। রয়েছে খুব সুন্দর একটা লেক। উঁচু উঁচু পাহাড় ঘেরা নাকো লেক।

স্পিতি উপত্যকা অনেক উঁচুতে তাই এখানে সারা বছর কম বেশি ঠান্ডা থাকে। জুন থেকে আগস্ট গরমগাল হলেও রাতের বেলা বেশ ঠান্ডা লাগে। তবে দিনের বেলা সূর্যের আলোর কারণে তেমন ঠান্ডা অনুভ‚ত হয় না। বেশির ভাগ মানুষ গরমকালে স্পিতি ঘুরতে আসে। কারণ এই সময়ে তাপমাত্রা সহনীয় থাকে এবং সব রাস্তা চলাচলের উপযুক্ত থাকে। তবে তুষারের সৌন্দর্য দেখতে চাইলে শীতকালে স্তিতি আসতে হবে। পুরো উপত্যকা তখন তুষারে ঢেকে যায়। তবে সেই সময় প্রচন্ড ঠান্ডা থাকে। এখানকার স্থানীয় মানুষজন পর্যন্ত তখন এখানে থাকতে পারে না। অনেকে নীচে নেমে যায় তাপমাত্রার তীব্রতার কারণে তাই শীতকালে এখানে বেড়াতে আসরে ঠিকমত প্রস্তুতি নিয়ে আসতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে শীতকালে কাজা থেকে মানালির রাস্তা বন্ধ থাকে। তাই সেই সময় শিমলা থেকে কাজা এসে আবার শিমলাতে ফিরতে হবে আপনাকে। আর এই সময় অতিরিক্ত তুষার পাতের কারণে কখনও কখনও রাস্তা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সেই সময় আপনাকে রাস্তা ঠিক না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। অক্টোবর থেকে মে পর্যন্ত এখানে ঠান্ডা থাকে।

স্পিতি উপত্যকা আপনি এখানকার গণপরিবহন ব্যবহার করে ঘুরতে পারবেন। এতে খরচ অনেক কম হবে। শিমলা থেকে ঐজউঈ এর বসে আছে কাজা পর্যন্ত যায়। তবে এভাবে ঘুরলে আপনি আপনার পছন্দ মত জায়গায় দাঁড়াতে পারবেন না। ওরা কিছু কিছু জায়গায় দাঁড়াবে আপনাকে সেখানে নেমে উপভোগ করতে হবে। টেম্পু ট্রভেলার নামে কিছু পরিবহন আছে। ১৬ জনের জন বসার ব্যবস্থা আছে। শিমলা বা কাজার অনেক ট্রাভেল এজেন্সেতে বললে ওরা ব্যবস্থা করে দেয়। তবে সম্পূর্ণ নিজের মত করে ঘুরতে চাইলে গাড়ি ভাড়া করে ভ্রমণ করাটা বুদ্ধিমানের। তবে যে পরিবহন আপনি ব্যবহার করেন না কেনো তা পাহাড়ি পথে চলার উপযুক্ত হতে হবে। কারণ পুরো স্পিটি উপত্যকা জুড়ে যে রাস্তা রয়েছৈ তা যেমন অসম্ভব মনোমুগ্ধকর তেমনি ভয়ঙ্কর। যথেষ্ট অভিজ্ঞতা সম্পন্ন চালক না হলে এখানে গাড়ি চালানো মুসকিল। সমতলে গাড়ি চালানো আর পাহাড়ী এই দুর্গম রাস্তায় গাড়ি চালানো সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাই চালক নির্বাচনের সময় খেয়াল রাখবেন যেনো চালক এখানকার স্থানীয় হয়।

এবার স্পিতি ভ্রমনের খরচের ব্যাপারে কিছু ধারণা দেই। খরচ প্রকৃতপক্ষে ভ্রমনকারীর ভ্রমনের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে। তাই একই জায়গায় ভ্রমনে এক এক জনের খরচ এক এক রকম হবে। আপনি যদি ৪ জনের একটি দল নিয়ে স্পিতি ভ্রমনে আসেন তবে একটি ইনোভা ভাড়া করে নিতে পারেন ৫ দিনের জন্য যা আপনাদের শিমলা থেকে স্পিতি সার্কিট ঘুরিয়ে মানালিতে নামিয়ে দেবে। তবে চন্ডতাল থাকার খরচ বেশি। প্রতিদিনের জন্য আপনার কাছে গাড়ি ভাড়া নেবে ৫হাজার রুপি। সকালের নাস্তা ও রাতের খাবারসহ থাকার খরচ এখানে গড়ে ১৫০০ রুপি জন প্রতি। তবে চন্ডতালে ৩ হাজার রুপি পরবে। আর দুপুরের খাওয়া আর চা-নাস্তার খরচ বাবদ ৫০০ রুপি রাখতে পারেন। ৪ জনের ভ্রমন দলের জন্য পুরো স্থিতি ভ্রমনের জন্য ২০ হাজার রুপির বাজেট করলে যথেষ্ট। আর ঢাকা থেকে শিমলা এবং মানালি থেকে ঢাকা যাবার খরচ নির্ভর করছে। আপনি কিভাবে যাতায়াত করবেন তার উপর। বাসে কিংবা ট্রেনে গেলে একরকম খরচ হবে আর বিমানে যাতায়াত করলে একরকম। এছাড়া শিমলা বা মানালিতে আপনি বেশিদিন থাকলে এবং ঘুরলে তার জন্য বাড়তি খরচ গুনতে হবে।

যাই হোক, আমরা খাব দেখে নাকো এর দিকে রওনা হলাম। পরবর্তী পর্বে নাকো লেক এবং সেখান থেকে টাবো নামের একটি চমৎকার পাহাড়ে ঘেরা একটি জায়গায় যাওয়ার গল্প নিয়ে হাজির হবো।