নাকো লেক দেখা শেষ করে আমরা আবার পাহাড়ের আঁকা-বাঁকা রাস্তা ধরে ছুটে চললাম। পথে দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য দাড়ালাম। এখানে তেমন বড় কোন রেস্টুরেন্ট পাবেন না, ছোট একটি ধাবা, গরম গরম খাবার পরিবেশন করছে। খাবারে ছিল ভাত, ছোলার ডাল, সবজি। এর থালি বলে একে, আমি একটি থালি নিলাম। আর আমি নিলাম ম্যাগি নুডুলাস। থালি ভাই ছিল। কিন্তু ম্যাগি নুডুলস তেমন ভাল ছিল না। যাইহোক উদর পূর্তি করে আমরা আবার রওনা হলা। এখানকার টয়লেটের অবস্থা তেমন ভাল ছিল না। তবু পাহাড়ি দুর্গম রাস্তায় এটাও কম না।

এবার আমাদের যাত্রা টাবোর দিকে টাবোতে আমরা রাতে থাকবো। টাবো পৌঁছাতে পৌঁছাতে বিকেল হয়ে গেলে। এখানেও চমৎকার একটি মনেষ্ট্রি রয়েছে। আপেল গাছে ঘেরা মনেষ্ট্রি থেকে দৃশ্যমান প্রকৃতি অনেক সুন্দর। এখানে ছোট ছোট কিছু দোকান আছে। চাইলে কিছু কিনে নিতে পারেন। দোকানিরা আমাদের দেখে অনেক আলাপ করলেন। বাংলাদেশী শুনে খুব খুশি। বললেন বাংলাদেশ তো আমাদের অনেক আপন। টাবোতে আমরা গ্রিন টাবো নামে একটা হোম স্টেতে ছিলাম। খুব ভাল আপ্যায়ন পেয়েছি। রাতের এবং সকালে খাবার খুব ভাল ছিল। বাড়ির লোকদের আন্তরিক আপ্যায়ন আমাদের মুগ্ধ করেছিল। বাড়ির ছাদ থেকে খুব সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করা যায়। রুমটাও ছিল ছিমছাম পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। সারাদিনের ভ্রমন শেষে রাতে বিছানায় শরীর দেয়ামাত্র ঘুম চলে আসতো। আমরাও রাতে খেয়ে শুয়ে পরলাম। আগামীকাল যাব কাজাতে। কাজা হলো স্পিতি এর মূল আকর্ষণ। কাজার মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য উপভোগ করতে আমাদের আগামী পর্বগুলো পড়তে ভুলবেন না।

স্পিতির এই রাস্তাগুলো বেশ ভয়ঙ্কর। যেকেনো সম বিপদ দূর্ঘটনা ঘটার সমূহ সম্ভাবনা থাকে সঠিক সাবধানতা না নিলে। আমরা যাওয়ার পথে অনেক যায়গায় দেখলাম পাথরের স্ত‚প। এত উঁচুতে বাতাসের বেগ প্রচন্ড। সেই বাতাসের কারণে পাহাড়ের পাথরগুলো গড়িয়ে গড়িয়ে নীচে নেমে আসে মাঝে মাজে। একে এখানে বলা হয় শুটিং স্টোন। শুটিং স্টোনের কারণে অনেক সময় রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। আর ভাগ্য খারাপ থাকলে পাথর চাপা পরে আহত বা নিহত হবার সম্ভাবনা তাকে। কিন্তু তারপরেও অভিযান প্রিয় মানুষের পাহাড়ী এই পথগুলোকে আপন করে নেয়। বারবার ফিরে আসে প্রকৃতির বুকে।

দুপুরে খাবার সম্পন্ন করে আমরা রওনা হলাম গিউ নামের একটি গ্রামের দিকে। এটি একটি ছোট গ্রাম যেখানে ৫০০ বছর পুরোনো একটি মানব দেহকে মমি করে রাখা হয়েছে। এটি ভারতবর্ষের একমাত্র মমি যা সংঘা টেনজিন নামের এক বৌদ্ধ ভিক্ষুর বলে ধারণা করা হয়। গিউ গ্রামটি ভারত-চীন এর সীমান্তের খুব কাছে। বৌদ্ধ ভিক্ষু ৪৫ বছর বয়স চীন থেকে ধ্যান করার উদ্দেশ্যে গিউ গ্রামে এসেছিলেন। স্থানীয়দের মতে টেনজিন গ্রামের মানুষদের জীবন রক্ষার্থে তার জীবন উৎসর্গ করেন। তার দেহের মমটি প্রাকৃতিক ভাবে সংরক্ষিত কারণ কোন রকম কৃত্রিম উপাদান এখানে ব্যবহার করা হয়ণি। স্থানীয়রা বিশ্বাস করে টেনজিন এর এই মমিটি জীবন্ত বুদ্ধ যার চুল ও নখ এখনও বড় হচ্ছে।

জীবন্ত দেবতা হিসেবে তাকে পূজা করেন অনেক স্থানীয়। বলা হয়ে থাকে টেনজিন এর আত্মা তার দেহ থেকে উড়ে আকাশে গিয়ে রংধনুর সৃষ্টি করে আর এখানে গিউ গ্রামকে অশুভ শক্তির হাত থেকে রক্ষা করে। গিউ গ্রামের এই মনেষ্টি স্থানীয়দের কাছে অনেক পবিত্র জায়গা। এখান থেকেও প্রকৃতির অপরূপ রূপ দেখে আপনি মুদ্ধ না হয়ে পারবেন না। প্রকৃতির এই বিশালতার মাঝে নিজেকে সপে দেবার এক তীব্র বাসনা নিয়ে আবার নেমে পরলাম পথে।