হোক ইচ্ছের বহিঃপ্রকাশ...

শান্তিনিকেতনঃ রবির পানে যাত্রা

রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত শান্তিনিকেতনে যাবার শখ আমাদের বহুদিনের। তাই এবার ভারতের ভিসা পাবার সাথে সাথে শান্তিনিকেতন যাবার পরিকল্পনা করে ফেলি। এখানে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও আরও অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে যেমন কোপাই নদী, সোনাঝুরির বন, শনিবারের হাট, প্রকৃতি ভবন, সৃজনী শিল্পগ্রাম, সুরুল রাজবাড়ি । আমরা চার দিন শান্তিনিকেতনে ছিলাম। এই কয়দিনে এখানে বেশ কিছু জায়গা ঘুরে দেখেছি। আমাদের সেই সব ভ্রমণ অভিজ্ঞতা আজ আপনাদের শোনাব।

নান্দনিক শান্তিনিকেতন

শান্তিনেকেতন হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বীরভূম জেলার অন্তর্গত বোল্পুর নামক একটি জায়গায় অবস্থিত ছোট একটি শহর। রবীন্দ্রনাথের কারণে এই সাংস্কৃতিক মরূদ্যানটি সারা বিশ্বে সমধিক পরিচিত। ভারতে প্রথম নোবেল পুরস্কার বিজয়ীকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এখানে তাঁর বিখ্যাত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।

শান্তিনিকেতনে আমাদের গেস্ট হাউজের দেয়ালে আঁকা ছবি

আমরা ভারতের হিলি বর্ডার দিয়ে প্রবেশ করে বালুরঘাট চলে আসি। বালুরঘাট হিলির কাছে ছোট একটি শহর। এখান থেকে সহজে বোলপুর যাওয়া যায় ট্রেনে। বালুরঘাট থেকে ভোরে এবং দুপুরে দুইটি ট্রেন আছে বোলপুর যাবার। আমরা ভোরের ট্রেনে করে বোলপুর চলে আসি বেলা ১২ টার দিকে। বোলপুর রেল স্টেশনটি বেশ চমৎকার। নান্দনিক চিত্রকর্ম এবং ভাস্কর্য দিয়ে সাজানো রেল স্টেশনটি । এর পাশেই রয়েছে গীতাঞ্জলী রেল জাদুঘর। আমরা স্টেশনে নেমে এই জাদুঘরটি ঘুরে দেখলাম।

আমাদের গেস্ট হাউজ

এরপর রওনা হলাম আমাদের আগে থেকে বুক করা গেস্ট হাউজের উদ্দেশ্যে। এর নাম ছিল “মাড হাউজ” । এটি সুভাষ পল্লীতে অবস্থিত। টোটোতে করে চলতে চলতে দেখলাম পুরো শান্তিনিকেতন শহরটি যেন একটি ফুলেল বাগান। নানা রকম গাছ দিয়ে পরিপূর্ণ এক সবুজ বনানী এই শান্তিনিকেতন শহরটি। প্রকৃতির শোভা দেখতে দেখতে আমরা রতনপল্লীর কাছে সুভাশ পল্লীতে চলে আসলাম। সবুজ গাছ আর নানা বর্ণের ফুলে ঘেরা আমাদের গেস্ট হাউজটি । ছিমছাম-পরিপাটি এই গেস্ট হাউজটি আমাদের বেশ ভাল লেগেছিল। বেশ বড় একটি বেড রুম। সাথে বিশাল গোসলখানা। বড় একটি কাঠের আলমারিতে কাপড় সহ প্রয়োজনীয় সকল জিনিস রাখা যায়। এছাড়া বসার জন্য সোফা, টেবিল, চেয়ার, ইলেকট্রিক কেটলি, পানি খাবার গ্লাস, জল সহ প্রয়োজনীয় সকল দ্রব্যাদি উপস্থিত। সকালের নাস্তা সহ রুম ভাড়া ছিল ২৫০০ রুপি।

গেস্ট হাউজে বসার চমৎকার জায়গা

রুমের বাহিরে সুন্দর কিছু বসার জায়গা করে রাখা হয়েছে। অতিথিরা চাইলে এখানে বসে আড্ডা দিতে পারেবেন। অথবা চাইলে বসে খাওয়া-দাওয়া করতে পারবেন। চারিকিকে নানা রকম গাছ-পালা দিয়ে ঘেরা এই জায়গায় বসে পাখিদের গান শুনতে শুনতে আপনি কাটিয়ে দিতে পারবেন অনেকটা সময়।  

শান্তিনিকেতনে মজাদার খাবার

আমরা রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। ঘড়িতে তখন বেলা ২ টা। আমরা গেস্ট হাউজের ডাইনিং এ বসে দুপুরে খাওয়া-দাওয়া করে নিলাম। এদের রেস্টুরেন্টটা দারুণ। আর খাবারের স্বাদ ছিল অসাধারণ। এখানকার সাদা ভাত আর মাটন কষার স্বাদ মুখে লেগে থাকবে আজীবন।

নান্দনিক শান্তিনিকেতন

দুপুরে জম্পেশ খাওয়া-দাওয়া করে বিছানায় একটু গড়িয়ে নিতে নিতে সন্ধ্যা হয়ে এলো। আমরা একটু হাঁটতে হাঁটতে শান্তিনিকেতনের সবচেয়ে নান্দনিক ক্যাফে “আমলি” তে চলে এলাম কফি খাবো বলে। ছোট্ট ছিমছাম এই ক্যাফেতে শুনেছি দারুণ স্বাদের কেক পাওয়া যায়। আমরা চিজ কেক আর কফি অর্ডার দিলাম। নিরিবিলি পরিবেশে সঙ্গীতের সুমধুর ধ্বনির সাথে দারুণ স্বাদের কফি আর কেক উপভোগ করলাম অনেকটা সময় নিয়ে।

আমলির কফি এবং চিজ কেক

এদের এখানে হস্তশিল্পের একটি দোকান রয়েছে। চাইলে এখান থেকে স্থানীয়দের তৈরি নানা দ্রব্যাদি কিনতে পারেন। এছাড়া এখানে রাত্রিযাপনের ব্যবস্থাও আছে। অনেকটা সময় আমরা এই সুন্দর ক্যাফেতে কাটিয়ে আমাদের গেস্ট হাউজে চলে আসলাম। গেস্ট হাউজের ম্যানেজারের সাথে কথা বলে শান্তিনিকেতনের সব গুলো স্পট ঘুরে দেখবার জন্য টোটো ঠিক করে নিলাম। টোটো আমাদের সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সব গুলো জায়গা ঘুরে দেখাবে, ভাড়া নিবে ১২০০ রুপি। সারাদিনের ঘুরা-ঘুরিতে আমরা বেশ ক্লান্ত ছিলাম। তাই রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পরলাম।

নান্দনিক শান্তিনিকেতন

পরদিন খুব ভোরে পাখিদের গানে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। আমরা বিছানা থেকে তাড়াতাড়ি উঠে ঘুরতে বের হবার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলাম। টোটো ড্রাইভার সময় মত চলে এলেন। আমরা বেড়িয়ে পরলাম।

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়

প্রথমে গেলাম বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় দেখতে। শান্তিনিকেতনের পূর্ব নাম ছিল ভুবনডাঙ্গা। ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এখানে একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করে নাম দেন শান্তিনিকেতন। প্রায় ৪০ বছর পর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে এখানে একটি পাঠ ভবন প্রতিষ্ঠা করেন। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি তৎকালীন সময়ে শিক্ষা চর্চার ধারাকে আমূল পরিবর্তন করে ফেলে। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে এই পাঠ ভবনটি বিশ্বভারতী মহাবিদ্যালয়ে পরিণত হয়। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে বিশ্ববিদ্যালয় ভারতের কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা লাভ করে।

শান্তিনিকেতন

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনেক ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে। আমরা প্রথমে গেলাম ছাতিমতলা দেখতে। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে রায়পুরের জমিদার বাড়িতে নেমন্ত্রণ রক্ষা করতে এসেছিলেন তখন এই ছাতিমতলায় বসে কিছু সময় বিশ্রাম করেছিলেন। তখনকার সেই ছাতিম গাছ আর এখন নেই। কর্তৃপক্ষ পরে নতুন করে একটি ছাতিম গাছ রোপণ করেছেন।

অমর্ত্য সেনের বাড়ি

এছাড়া এখানে দেখতে পাবেন ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত একটি ব্রহ্ম মন্দির। কাঁচ দিয়ে নির্মিত এই মন্দিরটির নির্মাণ শৈলী অতি মনোহর। এরপর আমরা কলা ভবন দেখতে গেলাম। নন্দলাল বসু সহ বহু গুনী চিত্রশিল্পী এই কলা ভবন চত্তরে বিচরণ করেছেন। এখানে প্রতি বছর নন্দন মেলা বসে। এছাড়া শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলা, বসন্ত মেলা বিশ্ব বিখ্যাত। ভারতের বিভিন্ন জায়গা থেকে ত বটেই, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রবীন্দ্র ভক্তরা এখানে বেড়াতে আসেন।

শান্তিনিকেতন

এরপর আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবন ঘুরে দেখলাম। অমর্ত্য সেনে বাড়ি এই ক্যাম্পাসের ভিতরে, সেটাও দেখতে পেলাম। এসব দেখা শেষ করে বেশ বেলা হয়ে গেল। আমাদের সকালের নাস্তা করা হয় নি। তাই রাস্তার ধারে একটি রেস্তোরাঁ দেখে ঢুকে পরলাম। লুচি আলুর দম দিয়ে দারুণ একটা নাস্তা হয়ে গেল। শান্তিনিকেতনে এসে খাবার খেয়ে দারুণ ভাল লেগেছে বলতেই হবে।

শান্তিনিকেতনে দারুণ স্বাদের খাবার

এরপর গেলাম সোনাঝুরির বন দেখতে। শান্তিনিকেতনের সোনাঝুরির বন বিখ্যাত এখানকার হাটের কারণে। আগে শনি-রবিবার এখানে হাট বসতো। কিন্তু এখন প্রতিদিন বসে। স্থানীয়রা এখানে নানা হস্তশিল্পের পসরা সাজিয়ে বসে। ছেলেদের শার্ট, ফতুয়া, পাঞ্জবি, মেয়েদের শাড়ি, কামিজ সহ ঘর সাজানোর নানা দ্রব্যাদি এখানে পাওয়া যায়।

সোনাঝুরির হাট

এখানকার রাবড়ি আর দই বিখ্যাত। আমরা ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে দই আর রাবড়ি খেয়ে নিলাম। এছাড়া সাঁওতালি মেয়েদের নাচের সাথে তাল মিলিয়ে আপনি চাইলে কিছু সময় নাচতে পারবেন তাঁদের গানের তালে তালে। এখানে অনেকটা সময় ঘুরে আমরা চললাম কঙ্কালিতলা মন্দির দেখতে। এটা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে বেশ প্রসিদ্ধ একটি মন্দির। আমরা কিছু সময় এখানে ঘুরে চলে এলাম কোপাই নদী দেখতে। রবীন্দ্রনাথের সেই বিখ্যাত ছড়া; আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে। বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে’ এই নদীকে উদ্দেশ্য করে লেখা। যদিও এখন এই নদীর বেশ করুণ অবস্থা। তারপরেও আমরা এই নদী পরিদর্শন করে চললাম দুপুরের খাবার খেতে। কারণ এত সময় হাটা-হাটি করে আমাদের বেশ ক্ষুধা লেগে গিয়েছিল। দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য চলে এলাম “সোনাঝুরি আড্ডা” নামে একটি রেস্টুরেন্টে। এটি মূলত একটি রিসোর্ট । কোপাই নদীর পাশে এই রিসোর্টটি বেশ সুন্দর। খাবার ভেজ এবং নন-ভেজ দুটোই ছিল। আমরা দুটো ভেজ থালি নিয়ে নিলাম। বাঙালি ভোজন। বেশ ভাল লাগছিল এমন সুন্দর একটি পরিবেশে দারুণ স্বাদের বাঙালি খাবার খেতে। শান্তিনিকেতনে এসে নিখুঁত বাঙালি ভোজ না হলে কি চলে। তাই বেশ আয়েশ করে এখানে খাওয়া-দাওয়া করে আমরা চললাম সুরুল রাজবাড়ি দেখতে। এটি বেশ পুরন একটি জমিদার বাড়ি। মালিকেরা কেউ থাকেন না এখানে। দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। একটি মন্দির আছে দেখলাম। প্রতি বছর নাকি বেশ ঘটা করে এখানে দুর্গাপূজা হয় ।

শান্তিনিকেতন

আমাদের পরবর্তী গন্তব্য “প্রকৃতি ভবন” গাছের গুড়ি এবং কান্ড দিয়ে নির্মিত দারুণ সব ভাস্কর্যের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়েছে এই জাদুঘরটি। প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত কিছু পাথর দিয়ে নানা ভাস্কর্য তৈরি করেছেন শিল্পী। শিল্প রসিকদের জন্য দারুণ একটা জায়গা। আমাদের যেহেতু ভাস্কর্য শিল্পে অনেক আগ্রহ, তাই অনেকটা সময় নিয়ে আমরা এখানে ঘুরে ঘুরে দেখলাম। চারটি গ্যালারি আছে এখানে । টিকিট কেটে এখানে ঢুকতে হয়। ভিতরে পরিবেশটিও চমৎকার। অনেক গাছ-গাছালি দিয়ে ঘেরা একটি চমৎকার জায়গা – আমাদের খুব ভাল লেগেছে।

সৃজনী শিল্পগ্রাম

এরপর আমরা চলে এলাম সৃজনী শিল্পগ্রাম দেখতে। এটিও একটি পার্ক। এখানে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের শিল্প, সাহিত্য, ঐতিহ্য, ইতিহাস উপস্থাপন করা হয়েছে। বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর জীবন যাপন প্রণালীর প্রক্রিয়া দেখানো হয়েছে বিভিন্ন স্থাপত্য এবং ভাস্কর্য দিয়ে। এখানেও প্রচুর গাছে সমারোহ। নানা বর্ণের ফুল ফুটে রয়েছে। কিছু কৃত্রিম লেক এবং লেকের উপর সাঁকো করে রাখা হয়েছে। কিছু বাউল শিল্পী গাছের নিচে বসে গান করছে। বেশ চমৎকার একটি পরিবেশ। বিকেল বেলা এখানে বেড়াবার একটি আদর্শ স্থান। অনেক হস্তশিল্পের দোকান আছে এখানে। চাইলে কিছু কেনাকাটা করে নিতে পারবেন। এসব ঘুরতে ঘুরতে সন্ধ্যা হয়ে এলো। আমাদের গেস্ট হাউজে ফিরবার সময় হয়ে এলো। আমরা রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে রাতের খাবার খেয়ে নিলাম। সাড়া দিনের ঘুরা-ঘুরিতে বেশ ক্লান্ত ছিলাম। তাই হালকা কিছু খেয়ে শুয়ে পরলাম।

শান্তিনিকেতনে সকাল বেলা

পরদিন খুব ভোরে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। আমরা দুজনে প্রাত ভ্রমণে বের হলাম। সকাল বেলা শান্তিনিকেতন যেন আরও মনোহর লাগে। প্রতিটি বাড়ি যেন এক একটি কবিতা। নানা বর্ণের ফুলের গাছ দিয়ে ভরপুর প্রতিটি বাড়ির আঙ্গিনা। এত চমৎকার লাগছিল সকালবেলাটি। পাখিদের গান আর নানা রঙের বাগানবিলাস দেখতে দেখতে অনেকটা বেলা হয়ে এলো। আমরা গেস্ট হাউজে ফিরে গিয়ে জলখাবার খেয়ে নিলাম। এরপর ব্যাগ গুছিয়ে গেস্ট হাউজ থেকে চেক আউট করে নিলাম। টোটো ড্রাইভারকে আগে থেকে বলে রেখেছিলাম। তিনি সময় মত চলে এলেন। আমরা চললাম রবীন্দ্র জাদুঘর দেখতে।

১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে শান্তিনিকেতনে স্থাপন করা হয় রবীন্দ্র ভবন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যবহৃত বিভিন্ন দ্রব্যাদি এখানে রক্ষিত রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে তাঁর আঁকা চিত্রকর্ম এখানে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। তাঁর পরিবারের সদস্যবৃন্দের পরিচয় এখানে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের জীবনের বিভিন্ন পর্যায়, তাঁর কর্মকাণ্ড এবং তাঁর অর্জন গুলো বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে এখানে খুব চমৎকার ভাবে। শান্তিনিকেতনের পর্যটক এবং রবীন্দ্র ভক্তদের মূল আকর্ষণ হল এই ভবনটি। সারা বছর এখানে অসংখ্য পর্যটক আসেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। রবীন্দ্র ভবনের পাশে রয়েছে উত্তরায়ন কমপ্লেক্স। উদয়ন, কোনার্ক, শ্যামলী, পুনশ্চ, উদীচী সহ কবির স্মৃতি বিজড়িত কয়েকটি বাড়ি রয়েছে এখানে। কবি তাঁর জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে এসকল বাড়িতে অবস্থান করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বহু কালজয়ী সাহিত্য এসব ভবনে রচিত হয়েছে।

রবীন্দ্র ভবন

রবীন্দ্র জাদুঘর দেখে আমরা চললাম আমাদের আগে থেকে বুক করা একটি রিসোর্টে। এখানে আমরা শান্তিনিকেতনের শেষ রাত্রিটি অতিবাহিত করব। রিসোর্টটির নাম আনন্দ রিসোর্ট। সাদা নীল রঙের দারুণ এক সমন্বয় করা হয়েছে এই রিসোর্টটিতে। আমরা এখানে প্রবেশ করে অভিভূত। যেন বাংলার বুকে একটুকরো গ্রিসের সান্তরিনি। প্রচুর গাছ আর খোলামেলা এই রিসোর্ট এর কর্মীরাও বেশ আন্তরিক। বেশ কয়েক ধরনের রুম আছে এখানে। আমরা যে রুমটিতে ছিলাম সেই রুমটির ভাড়া ছিল রাত প্রতি ৩৫০০ রুপি।

আনন্দ রিসোর্ট, শান্তিনিকেতন

বেশ বড় একটা কিং সাইজ খাট, সাথে আলমারি, ড্রেসিং টেবিল, সোফা, চেয়ার, টেবিল, টিভি সহ সকল প্রয়োজনীয় আসবাব ছিল। পরিস্কার পরিছন্ন টয়লেটে সকল দ্রব্যাদি উপস্থিত। ইলেকট্রিক কেটলি সহ চা কফি খাবার জন্য পেয়ালা, দুধ কফি চিনি পরজাপ্ত পরিমাণে রাখা হয়েছে। ছোট একটা ফ্রিজ ছিল। দারুণ সুন্দর ডিজাইনে সাজানো গছানো রুম। আমরা রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেতে গেলাম। ৩ তলা বিশিষ্ট এই রিসোর্টে আমরা ২য় তলায় ছিলাম। এক তলার এদের রেস্টুরেন্ট। আমরা সেখানে গিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। এরপর রুমে এসে কিছু সময় বিছানায় গড়াগড়ি করে বিকেলে সুন্দর এই রিসোর্টে ঘুরতে বের হলাম। নিচে একটা প্লে গ্রাউন্ড আছে চাইলে সেখানে পরিবারের সদস্য দের নিয়ে খেলাধুলা করা যেতে পারে। দোলনা আছে সেখানে। এছাড়া বসার কিছু জায়গা আছে। চাইলে চেয়ারে বলে পাখিদের গান শুনে সময় কাটাতে পারবেন।

আনন্দ রিসোর্ট, শান্তিনিকেতন

খুব সুন্দর একটা সুইমিং পুল আছে। আমরা পুলের পাশে আধ শোয়া হয়ে কফি পান করলাম। প্রকৃতির এমন সৌম্য রূপ দেখতে দেখতে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে গেল। আমরা রাতের খাবার খেতে আবার এদের ডাইনিং এ চলে আসলাম। রাতে কাশ্মীরি পোলাও আর চিকেন অর্ডার করলাম। খাবারের স্বাদ অতি চমৎকার ছিল। পেট পুরে খেয়ে আমরা রাতে নরম বিছানায় শুয়ে পরলাম। সকালে বেশ বেলা করে ঘুম ভাঙলো। আমরা ফ্রেশ হয়ে রিসোর্টের বুফে জলখাবার খেয়ে নিলাম। বাঙালি এবং পশ্চিমী দুই ধরনের জলখাবার ছিল। আমরা সব আইটেম কিছু কিছু খেয়ে কফি নিয়ে নিলাম।

আনন্দ রিসোর্ট, শান্তিনিকেতন

আজ আমাদের শান্তিনিকেতন থেকে ফেরার পথে রওনা হতে হবে। তাই রুমে এসে ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম। টোটো ড্রাইভার ঠিক করা ছিল। আমরা রিসোর্ট থেকে চেক আউট করে টোটো তে করে রেল স্টেশন চলে আসলাম। ট্রেনে করে বোলপুর থেকে চলে এলাম বালুরঘাট। সেদিন রাতে বালুরঘাট থেকে আমারা পরদিন হিলি হয়ে দেশে চলে আসি। তিন রাত এবং চার দিনের এই সংক্ষিপ্ত ভ্রমণটি ছিল দারুণ উপভোগ্য। স্মৃতি পটে চির জাগ্রত হয়ে থাকবে এই ভ্রমণের প্রতিটি ক্ষণ। 

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp

অন্যান্য লেখা গুলো পড়ুন