কোকোপাম বীচ রিসোর্টে আমরা দুই রাত ছিলাম। দারুন সুন্দর ছিমছাম। গোছানো এই রিসোর্টটি। বীচের একদম পাশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই জায়গাটি। আমাদের সেই সব গল্প থাকছে আজ আপনাদের জন্য।

সকাল বেলা সমুদ্রের পাশে এক চমৎকার আবহা থাকে। চারিদিকে চুপচাপ। নিরিবিলি পরিবেশে সমুদ্র অন্য রকম সুন্দর লাগে। সমুদ্রের ছোট ছোট ঢেউ আছড়ে পরার শব্দ আর পাখির কিচির মিচির। তাই সকাল হলেই এই সমুদ্রের কাছে বসে থাকতে খুব ভাল লাগে। আজ সকালেও তাই দুজনে সমুদ্রের কাছে চলে গেলাম। সাগরের কোল ঘেষে প্রাত ভ্রমন শেষ করে রুমে এসে সকালের নাস্তা খেয়ে নিলাম। ৭-১১ থেকে আনা কিছু খাবার এখনও ছিল আমাদের কাছে। সকালে সেসব নাস্তা করে নিলাম।

এই রিসোর্টটা বেশ বড়। তাই যাতায়াতের জন্য ছোট গাড়ি গুলো ব্যবহার করা হয়। ছোট ছোট অনেক বসার জায়গা আছে। প্রচুর গাছ সেখানে অর্কিড ফুল ধরেছে। এছাড়া স্পা এবং ম্যাসেজ করার ব্যবস্থা আছে। পুরো থাইল্যান্ড জুড়ে স্পা এবঙ ম্যাসেজ খুব জনপ্রিয়। আমরা নাস্তা করে মা নীম ভিউ পয়েন্টের দিকে গেলাম। এখানে একটি ভিউ পয়েন্ট জনপ্রিয়। ক্লিফের উপর থেকে সমুদ্র দেখা যায়।

আমাদের রিসোর্ট থেকে কাছে। তাই হেঁটে হেঁটে পৌঁছে গেলাম। ভিউ পয়েন্ট থেকে চমৎকার ভিউ পাওয়া যায়। নীল সমুদ্রের বিশাল জলরাশি আর দূরে নীল পাহাড়ের সারি। এক কথায় অপূর্ব। এখানে এসে খুব ভাল লাগছিল। নীচে প্রবালের সারি আর দূরে নীল সমুদ্র যেন এক অপার্থিব সৌন্দর্যের সন্নিবেশ ঘটিয়েছে।

এখানে একটি মন্দির দেখলাম। থাইলান্ডের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বৌদ্ধ। আমরা অনেক সময়এখানে বসে সে সুন্দর প্রকৃতি উপভোগ করলাম। তারপর নীচে নেমে গেলাম। নীচে নেমে দেখি প্রবাল গুলো নানা রং রূপ নিয়ে হাজির হয়েছে। প্রবালের এত রং হয় জানা ছিল না। অপূর্ব সুন্দর লাগছিল। বিভিন্ন রংয়ের প্রবাল দেখে আমরা অভিভূত।

এভাবে ঘুরতে ঘুরতে কখন এত বেলা হয়েছে বুঝতে পারি নাই। আমরা দুজনে তখন বেশ ক্লান্ত। তাই দুজনে দুটো আমের জুস নিয়ে ডেকে বসলাম। ক্লান্ত শরীরে আধ শোয়া হয়ে নীল সমুদ্রের জলরাশি আর হাতে দারুন স্বাদের আমের শরবত। এখানে শরবত গুলো খুব ভাল বানায়।

এরপর আমরা আমাদের রুমে চলে আসলাম। এই রুম বা কটেজটা বড় ছিল। বড় বিছানা, আলমারি, এসি, টেবিল, ফ্রিজ সবই ছিল। পরিস্কার টয়লেট, বড় দুটো জানালা সামনের বসার দুটো চেয়ার। তবেবীচের সামনে ছিল না। তাই আজ আমরা একদম বীচের সামনে একটি কটেজে থাকবো। সেভাবে কথা বলেছি। তাই ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম। গাড়ি আমাদেরকে সেখানে নিয়ে গেল।

বীচের পাশে এই কটেজটিও দারুন সুন্দর। বিশাল বিছানা, সোফা, আলমারি, ফ্যান, এসি সব আছে। বিশাল বড় বাথরুম, টয়লেট। এত সুন্দর কটেজ দেখে আমরা মুগ্ধ। বীচের পাশে একটি সুইমিং পুল আছে। আর একটি সুন্দর বড় বারান্দাও আছে। আমরা রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে খাবার অর্ডার দিলাম। বিফ with oyster sauce আর Sea fish এর একটা ডিশ। যেহেতু রুমে সোফা চেয়ার টেবিল সব চিল তাই রুমে বসে লাঞ্চ করে নিলাম।

বীচের পাশে এমন চমৎকার একটি পরিবেশে রিলাক্স করার জন্য দারুন জায়গা। কফি হাতে ডেক চেয়ারে বসে সমুদ্র দেখবেন আর গান শুনবেন। কিংবা আধ শোয়া হয়ে বই পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পরবেন আবার জেগে উঠবেন সমুদ্রের গর্জনে। রিলাক্স করার জন্য এর চেয়ে সুন্দর জায়গা হয় না।খুব ভাল লেগেছিল আমাদের এই রিসোর্টটি। কর্মীরা দারুন আন্তরিক আর সহযোগীতাপূর্ণ।

আমরা পুরো বিকেল সন্ধ্যা সমুদ্রের পারে ঘুরলাম, দাঁড়ালাম, শুয়ে থাকলাম। এমন মধুর সুন্দর সময় চিরজীবন মনে থাকবে। আর এখানকার খাবারের কথা না বললে নয়। খাবারের স্বাদ খুব ভাল ছিল। আমরা রাতের বেলা রুমে খাবার অর্ডার করলাম। কটেজটা এত সুন্দর ছিল যে এখান থেকে বের হতে ইচ্ছে করছিল না। খাওয়া-দাওয়া করে ঘুমিয়ে পরলাম। কাল সকালে সূর্য উদয় দেখবো আর কাল দুপুরে যাব ক্রিস্টাল বীচে। সেই সব গল্প শুনতে আমাদের সাথে থাকবেন আশা করি।