হোক ইচ্ছের বহিঃপ্রকাশ...

খাও সোক ভ্রমণের গল্প

খাও সোক থাইল্যান্ডের স্বল্প পরিচিত একটি পর্যটন জায়গা। বিশেষ করে খুব কম সংখ্যক বাংলাদেশী এখানে বেড়াতে যান। আজ আমাদের খাও সোক ভ্রমণের গল্প আপনাদেরকে শোনাব।

খাও সোকের পথে

আমরা সন্ধ্যা ৭ টায় ব্যাংকক থেকে খাওসোফের উদ্দেশ্যে রওনা হই। ভোর বেলা বাস আমাদেরকে সুরাট থানি নামিয়ে দেয়। এই বাস স্টান্ডটিও বেশ ছিমছাম, বাথরুম, কফি শপ সব সকল সুযোগ সুবিধা এখানে ছিল। আমরা ফ্রেশ হয়ে কফি খেয়ে নিলাম। আমাদের জন্য নির্ধারিত মাইক্রোকারে করে চললাম খাওসোফের উদ্দেশ্যে। এখানে এরা ভ্যান বা মিনি বাস বলে। সব যানবাহন এসি। তাই যাত্রা পথে ক্লান্তিকর লাগে না মোটেই। প্রায় ২ ঘণ্টার মত লাগবে খাওসোফ পৌঁছাতে। ব্যাংকক থেকে ১০০০ বাথে যে টিকিট কেটেছি সেই টিকিটে এসব কিছু ছিল। বাড়তি কোন টাকা দিতে হয়নি। দুই দিকের পাহাড়ের সারি দেখতে দেখতে আমরা চলতে লাগলাম। প্রায় সাড়ে ৮ টার দিকে খাও সোক পৌঁছে গেলাম।

খাও সোক

খাও সোক ভ্যান স্ট্যান্ড থেকে কাছেই ছিল আমাদের রিসোর্টটি। তাই আমরা হেঁটে যাব বলে ঠিক করলাম। ১০ মিনিট হাঁটতে চোখে পড়ল আমাদের হোটেলটি। মনটানিয়া লাইফস্টাইল রিসোর্ট। আগোডাতে পূর্বে বুক করে এসেছিলাম। বাহির থেকে দেখে বেশ ভাল লাগছিল। চারিদিকে সবুজ আর সবুজ। আমরা প্রথমে রিসিপশনে গেলাম। আমাদের চেক ইন টাইমন ছিল বেলা ০১ টায়। কিন্তু হোটেল এর ম্যানেজার বেশ অমায়িক ও ভদ্র ছিলেন। থাইল্যান্ডে হোটেল, রেস্টুরেন্ট, দোকান সব জায়গায় মেয়েদের কাজ করতে দেখেছি। ব্যাপারটা আসলেই চমৎকার আমরা ওয়েলকাম ড্রিংক খেয়ে রুমের দিকে রওনা হলাম।

খাও সোক

বেশ বড় রিসোর্টটি। কাটের রুম। এই ধরনের ঘর এখানকার ঐতিহ্য। খাওসাক চুনাপাথারে ঘেরা বিশাল বনভূমি অঞ্চল। খাওসেকে নদীর পাশে গড়ে উঠেছে এই শহরটি। পাহাড়, জঙ্গল প্রেমী পর্যটকদের কাছে এটি খুব জনপ্রিয় একটি পর্যটন গন্তব্য। হাঁটতে হাঁটতে আমরা আমাদের জন্য নির্ধারিত কটেজে চলে আসলাম।

খাও সোক

যেহেতু আমরা সারা রাত যাত্রা করে এসেছি। তাই ফ্রেশ হয়ে কিছু সময় রেস্ট নিলাম। ব্যাংকক থেকে আসার সময় 7-11 থেকে কিছু খাবার কিনে এনেছিলাম। এখানেও ফুট বাস্কেট ছিল। তাই আমরা আমাদের সাথে থাকা কিছু খাবার আর ফ্রুট খেয়ে নিলাম। এখানে ফ্রিজেও কিছু চিপস, চকলেট, ডিংস্ক ছিল ফি খাওয়ার জন্য।

খাও সোক

এরপর আমরা রিসোর্টটি ঘুরতে বের হলাম। বেশ বড় এই রিসোর্টটা দূরে লাইমস্টেন পাহাড় আর সবুজ গাছ গাছালি। আরও দূরে নীল আকাশ আর মেঘের খেলা। গাছে গাছে কাঠবিড়ালি ছুটে বেড়াচ্ছে। প্রচুর পাখির গান শোনা যাচ্ছে। নানা ধরনের প্রজাপতি উড়ে বেড়াচ্ছে। একই সুমিং পুল আছে দেখলাম। বিভিন্ন ধরনের কটেজ আছে এখানে চাইলে দোতলা কটেজে থাকা যায়। হাঁটতে হাঁটতে আমাদের ক্ষুধা লেগে গেল। তাই রেস্টুরেন্টে চলে আসলাম।

খাও সোক

রেস্টুরেন্টটা খুব চমৎকার। চারিদিকে খোলা মেলা। তবে জঙ্গলের মধ্যে বলে মশা আছে। মসকিউটো রিপ্লেন্ট ব্যবহার করতে হয়। লাঞ্চে আমরা ওর্ডার দিলাম পাইনাপেল রাইস আর তম খাও। এটা এখানকার স্থানীয় খাবার কোকোনাট মিল্ক দিয়ে মুরগির মাংস। সাথে বিভিন্ন রকম হার্ব আর সবজি। এছাড়া ডেজার্ট ছিল ম্যাংগো স্টিকি রাইস। আর ম্যাংগো জুস। খাবারের স্বাদ ছিল অসাধারণ। এত স্বাদযুক্ত খাবার আমরা কম খেয়েছি। খুব ভাল লেগেছিল। আর এখানকার কর্মীরা দারুন ভাল ব্যবহার। পেটপুরে খেয়ে আমরা রুমে চলে আসলাম। তখন বেশ গরম ছিল বাহিরে। তাই আমরা রুমে কিছু সময় বিশ্রাম নিলাম।

খাও সোক

এরপর কটেজের বারান্দায় বসে প্রকৃতি উপভোগ করতে লাগলাম। কিছ সময় পর মধু দিয়ে তৈরি শরবত আর নারকেলের স্নাকস্ দিয়ে গেল। এসব কিছু ফ্রি ছিল। আমরাও পাখির গান শুনতে শুনতে আয়েশ করে শরবত আর চিপস খেতে লাগলাম। দেখতে দেখতে বিকেল হয়ে এলো, রোদের তেজও কিছু কমে গেল। আমরা রিসোর্টের চারিদিকে ঘুরতে বের হলাম। কাছে খাওসোফ নদী। তাই ভাবলাম সেখানে ঘুরে আসি। যখন হাঁটতে বের হয়েছি তখন আকাশে মেঘ করেছিল। এখানে যখন তখন বৃষ্টি হয়। যেহেতু রেইন ফরেস্ট তাই বৃষ্টি হওয়াটা স্বাভাবিক। তবে বেশি সময় থাকে না এই বৃষ্টি। আমরা হাঁটতে হাঁটতেরাস্তার দুই দিকের সৌন্দর্য উপভোগ করতে লাগলাম। অনেক হোটেল, ক্যাফে, দোকান, বার গড়ে উঠেছে। ইউরোপিয়ান পর্যটক প্রচুর। পর্যটকরা এখানে আসে মূলত চিউলেন লেক আর ন্যাশনাল পার্ক ঘুরতে। আমাদের রিসোর্টে কথা বলেছি তাদের একটি গ্রুপের সাথে আগামীকাল আমরা চিউলেন লেকে ঘুরতে যাব। হেঁটে হেঁটে আমরা খাওসোক নদীর কাছে চলে আসলাম।

খাও সোক

এখানে কিছু সময় কাটিয়ে আবার ফিরতি পথে রওনা হলাম। পথে দেখলাম কোকোনাট আইসক্রিম বিক্রি হচ্ছে। তাই দুজনে সেখানে বসে কোকোনাট আইসক্রিম খেলাম। তারপর রিসোর্টের পাশে একটি ট্রাভেল এজেন্সি থেকে পরশু দিন কেতু সামুই যাবার ফেরি খোঁজ খরব নিলাম। এসব করতে সন্ধ্যা হয়ে এলো। আমরা কটেজে ফিরে কাপড় চেঞ্জ করে রাতের খাবার খেতে গেলাম। কাল সকাল সকাল উঠতে হবে। তাই রাতের ডিনার করে নিলাম আগে ভাগেই। গত রাতে যাত্রা করেছিলাম। তাই ভাবলাম আজ তাড়াতাড়ি শুয়ে পরি। কাল চিউ লেন লেকে ঘুরতে যাব। অসম্ভব সুন্দর এই লেকে ভ্রমনের গল্প শুনতে আশা করি মিস করবেন না।

খাও সোক
Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp

অন্যান্য লেখা গুলো পড়ুন