আজ আমাদের বাংকক ভ্রমনের প্রথম দিন। আজ আমরা ব্যাংককের বিভিন্ন জায়গা ঘুরব। এর মধ্যে ব্যাংকক আর্ট এন্ড বালচার সেন্টার, সিয়াম ইম্বরিয়াম, সিয়াম সেন্টার, জিম থমাস মিউজিয়াম, খাওসান রোডের স্ট্রিট ফুড এবং স্ট্রিট মার্কেট। আশা করি আমাদের এই ভ্রমনের গল্পগুলো আপনাদের ভাল লাগবে।

কাল রাতে ব্যাংকক আসার পর যেহেতু খুব ক্লান্ত ছিলাম তাই সিম কেনা হয় নাই। আজ সকালে প্রথমে আমরা মোবাইল সিম কিনে নিলাম। ৭-১১ থেকে ১৫ দিনের ডাটা মেয়াদ ৭০০ বাথ নিল দাম। এরপর মানি একচেঞ্জ করে নিলাম কিন্তু এবং আগামীকাল খাওসান যাবার জন্য বাসের টিকিট করে নিলাম। খাওসান রোডে অনেক ট্রাভেল এজেন্সি আছে। আমরা আমাদের হোটেলে পাশের একটি এজেন্সি থেকে টিকিট নিলাম। খরচ হল ১০০০ বাথ জন প্রতি। আমাদের হোটেল থেকে পিক করে খাওসান বাস স্ট্যান্ডে নামিয়ে দেবে। আমরা সকাল বেলা প্রস্তুত হয়ে প্রথমে গেলাম সকালের নাস্তা করতে। আমাদের হোটেলের পাশে একটি রেস্তোঁরাতে নাস্তা করে নিলাম।

এরপর একটি টমটম ভাড়া করে চলে এলাম ব্যাংকক আর্ট এন্ড কালচার সেন্টারে। বহু তল বিশিষ্ট এই আর্ট সেন্টারে থাইল্যান্ডের সমকালীন শিল্প ও ঐতিহ্যের নাম উপকরণ রয়েছে। নানা গায়ের এবং নানা নৃতাত্তিক বৈচিত্র এখানে তুলো ধরা হয়েছে। আমরা ঘুরে ঘুরে প্রতিটি তলা অনেক সময় নিয়ে দেখলাম। প্রতিটি তলা নানা ধরনের ঐতিহাসিক উপকরণ, বর্তমান এবং প্রাচীন শিল্পকলার প্রতীকী উপকরণ দিয়ে সাজানো।

এরপর আমরা চলে এলাম সিয়াম ইম্পোরিয়াম। এটি বিশাল বড় একটি শপিং মল। নানা ধরনের পণ্য পেয়ে যাবেন আপনি এখানে। তবে ব্যাংককের শপিং মলগুলো শুধু দোকান সমাবেশ নয়। এগুলো মানুষের বিনোদনের নানা আয়োজন থাকে। মানুষজন এখানে শুধু কেনাকাটা করতে আসে এমন নয়। এখানে গল্প করতে আড্ডা দিতে আসে মানুষ। বন্ধু বান্ধব দের নিয়ে বেড়ানোর দারুন জায়গা এগুলো। এক একটি ফ্লোর এক এক ভাবে সাজানো। এক একটি কর্ণার নিত্য নতুন সাজে সজ্জিত। নানা বর্ণ নানা ডিজাইন এর সমারোহ। অনেক ব্যান্ডের দোকান পেয়ে যাবেন এখানে। কোন কিছু কিনতে চাইলে কিনতে পারেন কিংবা খাবার দোকানে বসে খেতে পারেন। কোথাও কোথাও গান হচ্ছে, চাইলে শুনতে পারেন। সিয়াম ইম্বোরিয়াম ঘোরা শেষ করে আমরা পাশের সিয়াম সেন্টারে চলে গেলাম। সেটাও অনেক বিশাল একটি শপিং কমপ্লেক্স।

এত বড় বড় শপিং সেন্টার ঘুরে গুরে আমাদের ক্ষুধা লেগে গিয়েছিল। তাই আমরা দুপুরের খাবার খেতে চলে গেলাম একটি রেস্টুরেন্টে। প্রচুর রেস্টুরেন্ট পাবেন আপনি এখানে। সেখান থেকে পছন্দের রেস্টুরেন্ট খুঁজে বের করাই মুশকিল। তবে আমরা যেখানে খাওয়া-দাওয়া করলাম বেশ ভাল ছিল।

এরপর আমরা সিয়াম সেন্টারটা ঘুরে ঘুরে দেখলাম। অসংখ্য খাবারের দোকান, জুস, মুদি, আইসক্রিম, বেকারি সহ সব রকমের খাবার এখানে আছে। এরপর আমরা রওনা হলাম জিম থমসন মিউজিয়াম দেখতে। আমরা গুগল ম্যাপে দেখে হেঁটে হেঁটে চলতে লাগলাম। হাঁটতে বেশ ভাল লাগছিল। বিশাল চওড়া রাস্তা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। স্থানীয় মানুষের সাহায্য নিয়ে চাও ফাও নদীর পাশে জিম থমসন মিউজিয়াম দেখতে চলে আসলাম। জন প্রতি ৩০০বাথ করে টিকিট কাটতে হল এখানে।

বেশ ছিমছাম গোছানো একটি পুরোনো বাড়ি। জিম থমসন একজন আমেরিকান ব্যবসায়ী। তিনি থাইল্যান্ডে সিল্কের ব্যবসার প্রসার ঘটান। তাকে এই অঞ্চলে সিল্কের ব্যবসার প্রথিকৃতি বলা হয়। তিনি শিল্প সাহিত্যের বিশেষ অনুরাগী ছিলেন। নানা রকম সমৃদ্ধ শিল্প স্থাপত্য ভাস্কর্য দিয়ে সাজানো তার এই বাড়িটি। আমরা অনেক সময় নিয়ে হেঁটে হেঁটে ঘুরলাম। তখন দেখলাম তার পুরোনো বাড়িটি। এখানে একটি ক্যাফে আছে। আমরা সেখানে বসে কোল্ড কফি, জুস আর ডোনাট খেয়ে নিলাম।

এরপর আমরা রওনা হলাম খাওসান রোডের দিকে। সেখানে পৌঁছে দেখি দিনের বেলাতেও খাওসান রোড বেশ সরগরম। আমরা ঘুরে ঘুরে দোকান পাট আর জিনিসপত্র দেখতে লাগলাম। পাশাপাশি নানা ধরনের স্ট্রিট ফুড টেস্ট করলাম। খাওসান রোডে অসংখ্য স্ট্রিট ফুডের দোকান। রাস্তার দুই ধারে নানা জন নানা ধরনের খাবারের পশরা নিয়ে বসেআছে। ততক্ষণে সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। নানা দেশের পর্যটকদের আনা গোনা শুরু হয়ে গিয়েছে।

খাওসানের নাইট মার্কেট এবং নাইট লাইফ বিখ্যাত। নানা ধরনের কাবাব, রোল, তেলে ভাজা জিনিস, জুস, পানীয় এখানে পাওয়া যায়। অনেকে রাস্তায় গান করছে। কেউ বা বন্ধুদের নিয়ে গল্প করছে। যেন প্রাণের এক মহোৎসব বসেছে। আমরা খাওয়া-দাওয়া করে গান শুনে যখন হোটেলে ফিরলাম তখন অনেক রাত হয়ে গিয়েছে। আমরাও দু’জনে খুব ক্লান্ত ছিলাম। তাই ঘুমিয়ে পড়লাম দুজনেই। কাল সকালে আবার ব্যাংকক শহর ঘুরতে বের হবো। আমাদের সেই ব্যাংকক ভ্রমণ অভিজ্ঞতার গল্প উপভোগের আমন্ত্রণ রইল।