হোক ইচ্ছের বহিঃপ্রকাশ...

ব্যাংকক যেন এক স্বপ্নময় শহর

থাইল্যান্ড ভ্রমণে শেষ দুই রাত আমরা ব্যাংককে ছিলাম। সে সময় আমরা ব্যাংককের নানা আকর্ষণীয় জায়গা যেমন এশিয়াটিক রিভার ফ্রন্ট, প্রাকৃতিক রেস্তোরা, শপিং মল, পার্ক সহ অনেক স্থানে ঘুরেছি। এছাড়া মজার মজার সব খাবার তো ছিল। এসব কিছুর বিবরণ থাকছে আজকের পর্বে।

সুবর্ণভূমি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

কোহ সামুই থেকে বাসে করে আমরা ব্যাংকক চলে আসি। ভোরে মেচিত বাস স্ট্যান্ডে নেমে ট্যাক্সি নিয়ে চলে আসি সুকুমডিট ‍Soi 22 এখানে আরিয়ানা নামের হোটেল আমাদের বুকিং ছিল। এই হোটেলটা বেশ ভাল ছিল। লোকেশনটা চমৎকার। পাশেই BTS স্টেশন। এর পাশেই ইমসপেয়ার নামে শপিংমল। লবি টা বেশ বড় এবং গোছানো। হোটেলের ভেতরে সুন্দর নান্দনিক ভাবে সাজানো। ইন্ডিয়ান খাবারের একটি রেস্তোরা আছে ওদের । আমরা যেহেতু চেক ইন সময়ের অনেক আগে চলে এসেছি তাই বাড়তি ৫০০ বাথ দিয়ে রুমে চলে গেলাম। চেক ইন টাইম বেলা ০১ টা আর আমরা সকাল ০৮ টায় হোটে পৌঁছে গেছি। আমরা রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। রুমটা বেশ বড়। King size বিছানা। বড় জানালা, এসি রুম, সোফা, ফ্রিজ সহ যাবতীয় সব কিছু ছিল। টয়লেট সাবান সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস উপস্থিত ছিল। সারা রাত যাত্রা পথে থাকায় আমরা কিছু সময় বিশ্রাম নিলাম।

জুয়েল জলপ্রপাত, সিঙ্গাপুর চানগি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

কিন্তু গত রাতে তেমন কিছু খাওয়া হয়নি তাই ভাবলাম কিছু খেয়ে নেই। আগে থেকে জানা ছিল এই রোডে ব্যাংকের বিখ্যাত মুসলিম রেস্তোরা উসমান অবস্থিত। আমরা Google Map দেখে চলে আসলাম। আমাদের হোটেলে খুব কাছে ৩ মিনিটের হাঁটা পথ। অনেকদিন পর মুসলিম খাবার দেখে খুব ভাল লাগলো। আমরা রাইস আর বিফের ২টি ডিশ অর্ডার দিলাম। খুব ক্ষুধা লেগেছিল আর খাবার ছিল অসাধারণ। দারুন স্বাদের এই খাবার বার বার খেতে ইচ্ছে করবে। স্বাদ আমাদের দেশেল রান্নার মতন। ওরা থাইল্যান্ডের নিজস্ব প্রক্রিয়ায় রান্না করে। তবে খেতে চমৎকার।

ব্যাংককের শপিং মলে চিত্র প্রদর্শনী

খাওয়া শেষ করে আমরা ইমসফিয়ার শপিং মলে গেলাম। আমাদের হোটেলের পাশেই এই মলটি। অনেক বড় সাজানো, গোছানো মল। অনেক খাবারের দোকান, বিভিন্ন দ্রব্যের সমাহার। নানা রং আর নানা রঙে সাজানো চারিদিক।

ব্যাংকক শহর

এসব ঘুরতে ঘুরতে বিকেল হয়ে গেল। আমরা একটি ট্যাক্সি নিয়ে এপিয়াটিক রিডার ফ্রান্টে গেলাম। ব্যাংকক শহরের চাও ফেরাও নদীর পাশে একটি পার্ক। বিশাল আয়তনে নানা ভাবে বর্ণিল রং এর সাজানো হয়েছে এই পার্কটি। ছোট বড় নানা বয়সের নানা দেশের মানুষের সমাগম হয়েছে। বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে আছে দোকানীরা। খাবারের অনেক দোকান। চাইনিজ, থাই, ইন্ডিয়ান, তুর্কিশ সহ নানা দেশের খাবার। হস্তশিল্প ঘর সাজানো জামা সহ অনেক দ্রব্য বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ছবি তোলার বুথ সহ বাচ্চাদের খেলার অনেক জায়গা রয়েছে। নাগরদোলতে চড়তে চাইলে আপনাকে গুণতে হবে ৫০০ বাথ। এছাড়া বাচ্চাদের জন্য Happy go round আছে। খাবার এবং জুস খাবার অনেক বার। সব কিছু এই নদীর পারে গড়ে উঠেছে। নদীতে চাইলে ফেরিতে করে ঘুরে আসতে পারেন। এটা ফ্রি। ৩০ মিনিট পর পর ফেরি যাচ্ছে যাত্রী নিয়ে। সাথে গান হচ্ছে। মানুষ জন হৈ হুল্লোর করে ঘুরছে। এছাড়া সন্ধ্যা বেলা রিভার ক্রুড এবং ডিনার হয় টাকার বিনিময়ে। আগে থেকে বুক করা লাগে। এটা বেশ জনপ্রিয়। আমাদের ইচ্ছে ছিল না তাই যাইনি। আমরা নদীর পারে বসে নৌকাদের আনাগোনা দেখছিলাম।

ব্যাংকক শহর

ধীরে ধীরে রাত হল, আর দূরে উঁচু দালান গুলো নানা রং এর আলোতে ভরে গেলো। রাতের বেলা যেন জায়গাটি আরও বেশি আলোকিত হয়ে রইল। রাত হয়ে গেলে আমরা হোটেলে ফিরে আসলাম। আসার পথে উসমানে আবার পেট পুর খেয়ে বিছানায় ঘুমিয়ে পরলাম।

ব্যাংকক শহরে নান্দনিক রেস্তোরাঁ

পরদিন দেরি করে ঘুম থেকে উঠে আমরা বান সুয়াল সাথোন নামের একটি ক্যাফেতে রওনা হলাম। কৃত্রিম একটি বনের ভিতর এই রেস্টুরেন্টটি। সাথোন নামের জায়গায় অবস্থিত ব্যাংকক শহরের ভিতর। এখানে গিয়ে আমরা অভিভূত হয়ে গেলাম। শহরের ভিতর এত সুন্দর একটি রেস্টুরেন্ট কল্পনা করা যায় না। কৃত্রিম ভাবে তৈরি ঝর্ণা দিয়ে পানি পরছে। নানা রকমের গাছ, বহু বিচিত্র অর্কিড। নীচে জলাশয়ে প্রচুর মাছ। যেন এক বনের ভিতর চলে এসেছি আমরা। বনের বিভিন্ন কোনে বসার জায়গা। সেখানে বসে খাওয়ার অভিজ্ঞতা ছিল চমৎকার। আমরা পেস্টি আর জুস অর্ডার দিলাম। দাম কিছু বেশি এখানে খাবারের। এখানে মানুষ মূলত আসে ছবি তোলার জন্য। আমরাও অনেক ছবি তুললাম। ফুল, পাখি, মাছ আর গাছের সাথে মজাদার জুস আর পেস্ট্রি উপভোগ করলাম। ভাল লাগার মত একটি জায়গা।

ব্যাংকক শহর

আমরা অনেকটা সময় এখানে কাটিয়ে দুপুরে রুমে ফিরে গেলাম। দুপুরে বেশ গম থাকে। তাই বিকালে বের হলাম দুজনে। হেঁটে হেঁটে শহর দেখতে লাগলাম। ব্যাংকক শহরটা বেশ ছিমছাম, গোছানো। চওড়া রাস্তা, পরিস্কার ফুটপাত। পাশেই একটি পার্ক ছিল। আমরা পার্কে ঘুরে বেড়ালাম। হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম। তাই দুজনে আইসক্রিম খেলাম। থাইল্যান্ডে খাবারে সুনাম করতেই হয়। সব ধরনের খাবার এখানে বেশ সুস্বাদু।

এরপর 7-11 থেকে খাবার নিয়ে রুমে বসে খেয়ে শুয়ে পরলাম। কাল সকালে আমাদের রিটার্ন ফ্লাইট তাই ঘুমানোর আগে ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম। আমাদের জন্য ট্যাক্সি আগে থেকে বলে রাখা হয়েছিল। সকাল সকাল রওনা হরাম এয়ারপোর্টে। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্লেনে উঠে পরলাম। প্রথমে আমাদের যাত্রা শুরু হল সিঙ্গাপুর এর উদ্দেশ্যে ।

আকাশ পথের যাত্রা

সিঙ্গাপুরে আমাদের ৬ ঘণ্টা ট্রানজিট। চেঙ্গিতে পৌঁছে কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে আমরা মুভি থিয়েটার এ গেলাম। এখানে ২৪ ঘণ্টা মুভি দেখানো হয় ফ্রি। Aqua Man মুভি দেখে আমরা আমাদের জন নির্ধারিত গেটে চলে গেলাম। সেখানে দেখি সব বাংলাদেশী ভাই বোন।

অপেক্ষার পালা শেষ করে আমরা প্লেনে উঠে গেলাম। প্লেন ল্যান্ড করল মাঝ রাতে। আমরা সকালে কল্যানপুর বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে বাসে উঠে বাড়ির পথে রওনা হলাম। ১৮ দিনের এই লম্বা ভ্রমণ শেষ করে আমরা বাড়ি যখন আসলাম তখন এই ভ্রমণে অপূর্ব স্মৃতিগুলো মনের কোনে উঁকি মারছিল বার বার। আবার হয়ত দেখা হবে নতুন কোন গন্তব্যে নতুন আশা আর স্বপ্ন নিয়ে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp

অন্যান্য লেখা গুলো পড়ুন