হোক ইচ্ছের বহিঃপ্রকাশ...

অভিনন্দন, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার দিশারী তরুণ প্রজন্মকে

অভিনন্দন, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার দিশারী তরুণ প্রজন্মকে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে একটি জাতিকে নতুন করে স্বপ্ন দেখাবার জন্য। আশা করি এই পথ চলা সফল পরিণতি পাবে। স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। জাতি একটি মাহেন্দ্রক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের। ইতিহাসের এই পট পরিবর্তনের মুহূর্তে আবির্ভাব ঘটে কিছু অশুভ শক্তির। এই সকল অশুভ শক্তিকে সমুলে উৎপাত না করতে পারলে দিনে দিনে এরা মহীরুহে পরিণত হবে।

সমস্যাকে চিহ্নিত করে সেগুলোর সমাধানের চেষ্টা করা উত্তম। সমস্যাকে এড়িয়ে গিয়ে বা অস্বীকার করলে তা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং অবশেষে বিশাক্ত ছোবল দিতে এক মুহূর্ত দেরি করবে না। পূর্ববর্তী আওয়ামী কর্তৃত্ববাদী সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন কেউ সমস্যার কথা উল্লেখ করতে পারতো না। দেশের কোন সমস্যার কথা বললেই তাকে জামাত-বিএনপি-জঙ্গী-শিবির ট্যাগ দিয়ে দেয়া হতো। দেশের কোন সমস্যা চিহ্নিত করা মানেই সে স্বাধীনতার চেতনের বিরোধী, রাজাকার। তাই সরকারপ্রধানের চারদিকে প্রদক্ষিণরত ব্যক্তিরা বলতে থাকতেন, আমরা নাকি সিঙ্গাপুর হয়ে গেছি, দেশটা এখন স্বপ্নপুরী। এমন চাটুকার মন্ত্রী, নেতা, আমলারা জনবিচ্ছিন্ন এই স্বৈরশাসকে আরও দাম্ভিক এবং ক্ষমতালোভী করে তোলে। বিরোধী মতকে চাপা দিতে আয়নাঘরের মতো বর্বরোচিত পৈশাচিক কাঠামো তৈরি করতেও দ্বিধাবোধ করে নাই এই ফ্যাসিস্ট সরকার। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক জঘন্য অধ্যায় হয়ে থাকবে। তাঁর এই আকাশ্চুম্বী দম্ভ তাঁর পতনের মুল কারণ। তাই যেকোন সমস্যা উদ্ভব হলে তা স্বীকার করতে হবে এবং সমাধানের চেষ্টা করতে হবে।

তবে আমাদের সমস্যা হল আমরা কোন ব্যক্তি, ঘটনা, দল, আদর্শ, মতবাদ, ব্যবস্থা বা সরকারকে পছন্দ করলে বা সহযোগী হলে সেই দল, ব্যক্তি বা ঘটমান বিষয়কে পূজা করতে শুরু করি। কোন সমালোচনা সহ্য করতে পারি না। আমাদের অতিভক্তি আত্মসমালোচনার পথকে রুদ্ধ করে। কেউ নিরপেক্ষ ভাবে পর্যালোচনা করতে গেলে আমরা ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাই। ভুলে যাই, আত্ম-সমালোচনা আত্ম-উন্নয়নের চাবিকাঠি। আর মহান কিছু আরও একধাপ এগিয়ে যাবে, নিজেকে ছাপিয়ে যাবে এই আত্ম-উন্নয়নের মাধ্যমে। ক্ষমতাসীনদের সমালোচনা অগ্রাহ্য করবার প্রধান কিছু অস্ত্র হল – ষড়যন্ত্র, তৃতীয়পক্ষ আর সমালোচনাকারীকে দালাল না এজেন্ট হিসেবে আখ্যায়িত করা । আমরাও যদি এই অপসংস্কৃতিকে প্রত্যাখ্যান না করতে পারি তবে সামনের ইতিবাচক ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়া কষ্টকর হবে।

গত কয়েকদিনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভাস্কর্য, জাদুঘর, মুরাল, ছবি, বাদ্যযন্ত্র ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। প্রচণ্ড ক্ষোভ থেকে এসব করা হচ্ছে। ইতিহাস, শিল্প, সাহিত্য, সঙ্গীত একটি দেশের প্রাণ। এসব আমরা কখন অবহেলা করতে পারব না। মনে রাখতে হবে এসব অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিঃশেষ হয়ে গেলে শত কোটি টাকা খরচ করেও আর ফিরিয়ে আনা যাবে না। শিল্প, ইতিহাস, সঙ্গীত, চিত্রকলার উপর এসন জঘন্য হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানাই। আশা করি তরুণ প্রজন্মের দিশারীগণ এই ব্যাপারে সজাগ থাকবেন এবং সঠিক দিক নির্দেশনা দেবেন। আমরা এক স্বৈরশাসকের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে আর এক স্বৈরশাসকের কবলে যেতে চাইনা। কোন মৌলবাদী শাসন কখনও চাই না। আওয়ামী শাসন যেমন চাইনা, বিএনপি বা জামাতের শাসনও তেমন চাই না। বৈষম্যমুক্ত, শোষণহীন, যুক্তিবাদী দেশ চাই যেখানে স্বাধীনতা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্ব চাই।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp

অন্যান্য লেখা গুলো পড়ুন