হোক ইচ্ছের বহিঃপ্রকাশ...

বিকশিত হবার সুযোগ অবারিত হোক

প্রকৃতির বিন্যাস কতই না মধুর। প্রকৃতির অন্য সন্তানেরা প্রতিনিয়ত আমাদের মানুষদের সহবস্থানের শিক্ষা দেয়। বৃক্ষ কিংবা পাখি, জলজ প্রাণী থেকে বনের পতঙ্গ সকলেই কী সাবলীলভাবে সহবস্থান মেনে জীবন যাপন করছে। অথচ আমরা মানুষেরা সামান্য পরমতসহিঞ্চু হতে পারি না, বড়ই পরশ্রীকাতর আমরা মানুষেরা। নিজেকে বড় করে তুলবার প্রবণতায় রুদ্ধ করে দেই অন্যের বিকাশ। আমিত্বের বড়াই করতে এতোটা অভ্যস্ত হয়ে যাই যে অন্যের মত-পথ তুচ্ছ করতে দ্বিধা করি না। আমরা ভুলে যাই প্রকৃতির এই বৈচিত্র্যের মাঝে লুকিয়ে আছে আসল সৌন্দর্য। প্রত্যেককে বিকশিত হতে দিলে পৃথিবী আরও সুন্দর হয়ে ওঠে।

এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যাপক উপযোগিতার কল্যাণে খুব সহজে অন্য কারো জীবন প্রণালী বা কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করতে পারি। তবে আমরা বাঙালিরা বোধকরি একধাপ এগিয়ে সব সময় যদি ব্যাপারটা হয় অন্য কারো ব্যাপারে নাক গলানোর মত আকর্ষণীয় একটি বিষয়।

ঐতিহ্যগতভাবে এই ব্যাপারে বাঙালি দারুণ পারদর্শী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও দেখা যায়, আমরা শুধু নাক গলাবো না অন্য সবাই কোন বিষয়ে কথা বলবে আর কোন বিষয়ে কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবে সেটাও আমি ঠিক করে দেবো। আমি যে মত বা পথে বিশ্বাসী অন্য সবাইকে সেই মত এবং পথের অনুসারী হতে হবে। তোমাকে সব সময় “সহমত, ভাই” বলে পাশে থাকতে হবে। না হলে তার উপর তীব্র আক্রোশ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পরবো। কেন তুমি আমার মত হবে না, কেন তুমি আমি যা বলছি তার সাথে একমত হয়ে “সহমত, ভাই” বলে মাথা নাড়বে না। কেন তুমি ভিন্ন মত পোষণ করবে? এত বড় অধিকার তোমাকে কে দিলো? তারপরেও অপরপক্ষ যদি তাঁর মতে দৃঢ় থাকে, তাকে শায়েস্তা করতে দল বল নিয়ে ভারচুয়াল হামলা করবো।

কিছু মানুষ আর এক কাঠি সরেস। তাঁরা আপনার প্রোফাইলে সি সি ক্যামেরা হয়ে গবেষণা করবে। আপনার অনলাইন উপস্থিতির পর্যালোচনা করে আবিস্কার করবে আপনার আদর্শ। শুধু তা করে ক্ষান্ত হবে না, আপনি কেন এটা পোস্ট করেন নি, কেন সেটা পোস্ট করলেন, কেন এই বিষয়ে না বলে আর একটা বিষয়ে বললেন। যেন তাঁর সাথে পরামর্শ করে আপনাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বা অনলাইন কাজকর্ম নির্ধারণ করতে হবে। আমরা খুব বেশি জাজমেন্টাল। আমরা সবাইকে খুব দ্রুত বিচার করে ফেলি। এমনকি শুধু অনলাইনের কিছু কাজকর্ম দেখে কারো সম্পর্কে রায় দিয়ে দেই। আথচ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আমাদের জীবন-দর্শনের কতটুকু প্রতিফলন ঘটে? ভার্চুয়াল জগতের কিছু পোস্ট বা লেখা দেখে একজন মানুষকে বিচার করা কতটুকু যৌক্তিক? একজন মানুষ এবং তাঁর মনোজগৎ অনেক বিশাল। সময়, স্থান, পটভূমি অনুযায়ী তাঁর আচরণ ভিন্ন হয়। একই মানুষ ভিন্ন প্রেক্ষাপটে ভিন্ন আচরণ করতে পারে। মানুষ খুব জটিল প্রাণী। তাকে খুব সরলরৈখিক মাপকাঠিতে বিচার করা এক ধরনের বালখিল্য শুধু নয়, অনুচিতও।

তাই উত্তম হল আপনি যে কাজ করছে সেই কাজটি মনোযোগ দিয়ে করুন। অন্যকে তাঁর মত চলতে দিন। অন্যকে বিচার করতে যাবেন না। অন্যকে আপনার মত চলার জন্য মানসিক, শারীরিক বা অন্য কোন ধরনের চাপ প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকুন। নিজে বিকশিত হোন, অন্যকে বিকশিত হতে সাহায্য করুন। অন্তত সাহায্য না করলেও বাধা দিয়েন না। সব কাজের জন্য আপনাকে জবাবদিহি দিতে বা আপনার সাথে পরামর্শ করতে বা আপনার অনুমতি নিতে কেউ বাধ্য নয়। প্রত্যেকের ইচ্ছে ভিন্ন, ইচ্ছের প্রকাশ ভঙ্গিও ভিন্ন। আর এই ভিন্নতাকে শ্রদ্ধা করতে শিখি আমরা। “সহমত, ভাই” এর প্রবণতা থেকে উত্তরণ ঘটাতে হবে, কারণ এর মাঝে ফ্যাসিজমের বীজ লুকায়িত থাকে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp

অন্যান্য লেখা গুলো পড়ুন