হোক ইচ্ছের বহিঃপ্রকাশ...

শিক্ষকদের গণ পদত্যাগ

ডঃ মুহাম্মদ ইউনূস ছাত্রদের পড়াশোনায় মনোযোগ দেবার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু কিছু ছাত্র তো এখনও হাতুড়ি পিটিয়ে শিক্ষকদের পদত্যাগ করাতে ব্যস্ত। সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক আব্দুল্লাহ আবু সাইদ একবার বলেছিলেন, যে ছাত্র জেনে যায় শিক্ষককে তার বাবার টাকায় কেনা যায়, সেই ছাত্রের আর যাই হোক পড়াশোনা হবে না। কারণ শিক্ষকের প্রতি সম্মান না থাকলে তাঁর কাছ থেকে শিক্ষা লাভ সম্ভব নয়। তাই যে ছাত্রদের দ্বারা শিক্ষকেরা লাঞ্ছিত, অপমানিত, নিপীড়িত হচ্ছেন, তাঁদের শিক্ষা লাভ কিভাবে সম্ভব আমি জানি না। শিক্ষা উপদেষ্টা আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ অতি সজ্জন ব্যক্তি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, প্রশাসন থেকে এখনও পর্যন্ত তেমন কোন কঠোর পদক্ষেপ লক্ষ করা যায় নাই। এমন কোন নজির স্থাপন করা যায়নি যাতে করে এমন অপকর্ম বন্ধ হয়। শুধু “আহবান” জানিয়ে, ব্যপারটা “দৃষ্টিকটু” বা “প্রশাসন ভেঙ্গে পড়তে পারে” বলে কর্তব্য শেষ করলে কি কোন লাভ হবে?

আসলে তরুণদের মাঝে বোধকরি এমন একটা ঝোঁক চেপেছে যে কিছু একটা করে দেখাতে হবে বা এই ট্রেন্ডে সামিল হতে হবে। যেহেতু সর্বোচ্চ ক্ষমতার পতন ঘটানো গেছে তেমনিভাবে সকল ক্ষমতার পতন ঘটাতে হবে। আইনের শাসন, বিচার বিভাগ, তদন্ত, সব কিছুর প্রতি অবিশ্বাস। তাই নিজের হাতে সব তুলে নেবার এই প্রবণতা। অবাক করা বিষয় শিক্ষক সংগঠন থেকেও কোন প্রতিবাদ করা হল না। শিক্ষক সমাজের মনে রাখা উচিত আজ যেভাবে আপনার সহকর্মী লাঞ্চনার শিকার হচ্ছেন, কাল হয়তো আপনাকে এমন পরিস্থিতির শিকার হতে হবে।

হতে পারে অনেক শিক্ষক অন্যায় করেছেন। কিন্তু তাঁকে এভাবে অপমানিত, শারীরিকভাবে হেনস্থা করা কোন ভাবেই কাম্য নয়। একজন খুনের অপরাধীকেও আমরা অপমানজনক কোন শাস্তি দিতে পারি না। মানুষ হিসেবে প্রত্যেকের কিছু মৌলিক অধিকার থাকে। গণঅভ্যুত্থানের পর এখন আমাদের পছন্দের সরকার ক্ষমতায়। প্রশাসন থেকে তদন্ত হবে, প্রয়োজনে পদক্ষেপ নেবে। তাঁদের প্রতি আস্থা রাখা জরুরী। আর এই পদত্যাগ করানোর হুজুগে অনেক ভাল নিরপরাধ শিক্ষক অপরাজনীতির শিকার হয়ে নির্যাতিত হচ্ছেন, পদত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছেন। সবচেয়ে আশঙ্কাজনক হল যারা এসব কর্মকান্ডকে উৎসাহ দিচ্ছেন। মনে রাখতে হবে পুর্বের সংঘটিত অন্যায়কে বর্তমানের অন্যায় দিয়ে বৈধতা দেয়া যায় না। পুর্বে অন্যায় হয়েছে বলে এখন অন্যায় করতে হবে? আর ১৫ বছর কই ছিলেন, এতদিন কিছু বলেন নাই কেন, আগে যে অন্যায় হইছে সে সময় তো চুপ ছিলেন, এসব হল বিপ্লবের হেন-তেন এফেক্ট এসব বলে অনুগ্রহ করে বর্তমানের অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবেন না।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp

অন্যান্য লেখা গুলো পড়ুন