হোক ইচ্ছের বহিঃপ্রকাশ...

ঢাকা থেকে সিঙ্গাপুর

গত ২০২৪ সালের জুন মাসে আমরা থাইল্যান্ড ভ্রমনে গিয়েছিলাম। সিঙ্গাপুর এয়ার লাইনসের বিমানে করে আমরা ঢাকা থেকে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক যাই। পথে দীর্ঘ একটি টানজিট ছিল সিঙ্গাপুরের চেঙ্গি এয়ারপোর্টে। দারুন সুন্দর এই এয়ারপোর্টে আমাদের অভিজ্ঞতা সহ ঢাকা থেকে ব্যাংকক যাবার পুরো গল্প থাকছে আজকের এই পর্বে।

সিঙ্গাপুরের চেঙ্গি এয়ারপোর্ট

আমরা যেহেতু ঢাকার বাহিরে থাকি তাই সকালে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলাম। সন্ধ্যার মধ্যে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌঁছে যাই। আমাদের ফ্লাইট ছিল রাত ১২ টায়। আমরা বোর্ডিং পাস নিয়ে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করলাম। এরপর চলে এলাম EBL Sly Loange এ। এখানে কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে এশার নামাজ পরে নিলাম। এখানে রাতের খাবার সুন্দর ব্যবস্থা আছে। তাই এখানে কিছু খাবার খেয়ে নিলাম। আমরা এরপর রওনা হলাম সিঙ্গাপুর এয়ার লাইনসের গেটের দিকে। ঢাকা থেকে ব্যাংকক যেতে প্রায় ২ ঘণ্টা লাগে। সরাসরি ফ্লাইটের আগে আমাদেরে ইচ্ছে ছিল চাঙ্গি এয়ারপোর্টটি ঘুরে দেখব। তাই আমরা চাঙ্গিতে বেশি সময়ের লে অফ নিয়েছিলাম। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের বিমান সঠিক  সময়ে টেক অফ করল। রাতের ডিনার দিয়েছিল ডাল। তাবে ইকোনমি ক্লাসের সিটগুলো মোটেই আরামদায়ক ছিল না।

সিঙ্গাপুরের চেঙ্গি এয়ারপোর্ট

সিঙ্গাপুরে যখন আমরা ল্যান্ড করি তখন ঘড়িতে বাজে ভোর ৬টা। আমরা এয়ারপোর্টে নেমে কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে নিলাম। এখানে যাত্রীদের বিশ্রাম নেয়ার অনেক জায়গা আছে। অনেক বড় আর ছিমছাম এই এয়ারপোর্টটি। আমরা টার্মিনাল এ ল্যান্ড করেছিলাম। এখানে ফ্রেশ হোয়ার জন্য সুন্দর পরিস্কার ওয়াশরুম পেয়ে যাবেন। খাবার পানির ভাল ব্যবস্থা রয়েছে।

সিঙ্গাপুরের চেঙ্গি এয়ারপোর্ট

প্রথমে আমরা গেলাম বাটারফ্লাই পার্কে। অতি চমৎকার ভাবে সাজানো এই পার্কটি। নানা বর্ণের ফুল আর প্রজাপতি দিয়ে ভরপুর এই সবুজ মনোমুগ্ধকর পার্কটি। প্রচুর গাছ আর ফুল, সাথে ছোট কৃত্রিম একটি ঝর্ণা।

সিঙ্গাপুরের চেঙ্গি এয়ারপোর্ট

এরপর হেঁটে হেঁটে ঘুরতে লাগলাম এয়ারপোর্টটির ভিতর। পুরো এয়ারপোর্টটি চমৎকার মখমলের কার্পেট দিয়ে মোড়ানো। হাঁটতে হাঁটতে আমরা চলে এলাম ক্রিস্টাল গার্ডেন। ছোট নানা ধরনের ক্রিস্টাল দিয়ে সাজানো। অপূর্ব সুন্দর লাগছিল জায়গাটি। আমরা অনেক সময় এই জায়গায় বসে থাকলাম, ছবি তুললাম। নানা দেশ থেকে আসা বিভিন্ন পর্যটক সেই সকাল বেলা থেকে সমগম দেখেছি।

সিঙ্গাপুরের চেঙ্গি এয়ারপোর্ট

বিশাল এই এয়ারপোর্টে নানা ধরনের আয়োজন করে রাখা হয়েছে। নানা ধরনের গাছ দিয়ে সবুজ প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরি করে রাখা হয়েছে। হাঁটতে হাঁটতে আমরা চলে এলাম অর্পিডের বাগানে। নানা রঙের অর্কিড এর ফুল দিয়ে সাজানো এই বাগান। ছোট একটি ব্রিজ এবং তার নীচ দিয়ে ছোট একটি জলাশয়। সেখানে নানা রং এর মাছ খেলা করছে। এত ঘোরা ঘুরি করে আমাদের ক্ষুধা লেগে গিয়েছিল। তাই আমরা ফুড কোর্টের দিকে চলে গেলাম। গিয়ে দেখি সেখানে বিশাল আয়োজন। প্রচুর খাবারের দোকান। সিঙ্গাপুরি ডলারে খাবারের দাম একটু বেশি। কিন্তু কিন্তু তো খেতেই হবে। তাই আমরা চিকেন এর একটি বান আর রোল নিলাম সাথে কফি।

সিঙ্গাপুরের চেঙ্গি এয়ারপোর্ট

এখানে পর্যটকদের জন্য বসার যথেষ্ট জায়গা আছে। কেউ চাইলে ল্যাপটপে কাজ করতে পারবে। ফ্রি WiFi এর ব্যবস্থা আছে। আমরা খাওয়া দাওয়া করে কিছু সময় মোবাইলে চার্জ দিয়ে নিলাম। নানা দেশ থেকে আগত অনেক মানুষ জনের ভীড় ছিল সেখানে। সিঙ্গাপুর এয়ারপোর্টে একটি টার্মিনাল থেকে আর একটি টার্মিনাল এ যেতে হলে আপনাকে স্কাই ট্রেন ব্যবহার করতে হবে।আমরা তাই স্কাই ট্রেনে করে টার্মিনাল ও থেকে টার্মিনাল ২ তে চলে আসলাম। টার্মিনাল ২ থেকে আমাদের ব্যাংকক যাবার প্লেন ছাড়বে। প্রতিটি টার্মিনাল বেশ বড়। তবে টার্মিনাল ০১ এ রয়েছে চেঙ্গি এয়ারপোর্টের সবচেয়ে আকর্ষণীয় মানব তৈরি সবচেয়ে বড় জলপ্রপাত। যা সারা বিশ্বের মানুষের কাছ বিশ্বয়। জুয়েল নামে পরিচিত এই কৃত্রিম জল প্রপাতটি। ইমিগ্রেশন বা ভিসা ছাড়া টার্মিনাল ০১ এর জুয়েল আপনি যেতে পারবেন না। তাই আমরা জুয়েল যেতে পারিনি। তবে স্কাই ট্রেনে টার্মিনাল ০১ থেকে টার্মিনাল ০২ তে যাবার সময় আপনি জুয়েল ট্রেনে থেকে দেখতে পারেন। এখানে ট্রেন কিছু সময়ের জন্য ধীর গতি চলে। অনেকে এই জুয়েল দেখার জন্য আগ্রহী হয়ে ওঠে। আমরাও বিস্মিত চোখে এই অপূর্ব সুন্দর জুয়েল উপভোগ করলাম।

সিঙ্গাপুরের চেঙ্গি এয়ারপোর্ট

টার্মিনাল ০২ তে এসে আমরা গেলাম একুয়া ওয়াল্ড দেখতে। এই জায়গাটি দেখলে আপনি অভিভূত না হয়ে পারবেন না। মনোমুগ্ধকর এই জায়গায় মেঝে পুরো কাচের। কাচের নিচে বিশাল জন জগত তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম ভাবে। উপরে কৃত্রিম আকাশ যেখানে পাখি মেঘের খেলা দেখতে পারেন। অপূর্ব এই জায়গায় আসলে আপনার মনে হবে কোন স্বপ্নের রূপকথার জগতে চলে এসেছেন। আমরা অনেকটা সময় এখানে বসে থাকলাম। গাছ, মাছ, পাখি ফুল দিয়ে স্বপ্নিল এই জায়গায় ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দিতে পারবেন।

সিঙ্গাপুরের চেঙ্গি এয়ারপোর্ট

এরপর আমরা গেলাম সূর্যমুখী ফুলের বাগান দেখতে। সারি সারি সূর্যমুখী ফুলের বিশাল সমারোহ এখানে। আমরা এতসব বাগান ফুল মাছ পাখি দেখে ক্ষুধার্থ আর ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম। তাই একটি রেস্টুরেন্ট দেখে দুপুরের খাবার খেতে বসলাম। রাইস আর চিকেন নিলাম। কারণ হালাল খাবার খুঁজে এটাই পেলাম। খাওয়া-দাওয়া করে মনে হচ্ছিল একটু শুয়ে বিশ্রাম নেই। আগেই বলেছি এই এয়ারপোর্টে বসা, শোয়া আরাম করার অনেক আয়োজন রয়েছে। কারণ সারা পৃথিবী থেকে প্রচুর মানুষ এখানে ট্রানজিটের জন্য আসে। এগুলো সব ফি। কিছু কিছু ট্রানজিট হোটেল আছে। এছাড়া আপনি পে করে বিভিন্ন লাউঞ্জ ব্যবহার করতে পারবেন। আর আপনার ক্রেডিট কার্ডের পাস থাকলে লাউঞ্জ ব্যবহার করতে পারবেন। আমরা এক ফ্রি বিছানা দেখে সেখানে কিছু সময় গড়িয়ে নিলাম।

সিঙ্গাপুরের চেঙ্গি এয়ারপোর্ট

ততক্ষণে বিকাল হয়ে গেছে। আমাদের ফ্লাইট সন্ধ্যা ৭ টায়। তাই আবার একটু কফি খেয়ে রওনা হলাম সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের নির্দিষ্ট গেটের দিকে। আমাদের বোডিং ঢাকা থেকে নেয়া হয়েগেছে তাই আর বোডিং নেবার ঝামেলা নেই। আমরা সিকিউরিটি গেট ক্রস করে গেটের ভিতর ঢুকে প্লেনের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। ফ্লাইট নির্দিষ্ট সময়ে ছাড়ল। এবারও ডাল স্নাক্স দিয়েছিল। সারা দিন হাঁটা হাঁটি করে আমাদেরও ক্ষুধা লেগেছিল। ফ্লাইট যখন ল্যান্ড করল এখন প্রায় রাত ৮টা। চট করে ইমিগ্রেশন শেষ হয়ে গেল। কিছুই জিজ্ঞাসা করেনি। শুধু ছবি তুলল আর আঙ্গুলের ছাপ নিল। ব্যাংককের সুবর্ণভূমি বিমানবন্দরটি একটু গোলক ধাঁধার মত। আমরা যেহেতু প্রথমবার গিয়েছি তাই ট্যাক্সি স্ট্যান্ড খুঁজে পেতে বেগ হয়েছিল। এয়ারপের্টে মানি একচেঞ্জ খুজে পাইনি পরে বাহিরে এসে কিছু ডলার একচেঞ্জ করলাম। কারণ ট্যাক্সি ভাড়া দিতে হবে তবে এয়ারপোর্ট থাই পুলিশরা বেশ ভাল আমাদের হেল্প করেছিল। ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে টোকেন নিয়ে সিরিয়াল অনুযায়ী ট্যাক্সি নিতে হয়। আমরা ৫০০ পথে খাওয়ার রোডে চলে আসলাম। আসার পথে অনেক মসজিদ দেখতে পেলাম।

ব্যাংকক, থাইল্যান্ড

আমাদের হোটেলটি ছিল খাওসান রোডে। রাতের বেলা এই রোডটি জমজমাট থাকে। আমরা হোটেলে এসে চেক ইন করলাম। দেশে থাকতেই Agoda তে সব হোটেল বুক করে এসেছি। তাই এখানে কোন সমস্যা হয়নি। বাওসান প্যালেস হোটেলটি বেশ ভাল ছিল। আমরা ফ্রেস হয়ে রাতের খাবার খেতে বের হলাম। রাস্তার দুই ধারে খাবারের অনেক হোটেল বার, জিনিস পত্রের দোকান। গান-বাজনা হৈ-হুল্লুর করছে নানা বয়সের নানান দেশের পর্যটক। আমরা 7-11 দেখে সেখানে দুই প্যাকেট খাবার আর পানি কিনে হোটেলে চলে আসলাম। যেহেতু খুব ক্লান্ত ছিলাম তাই খেয়ে দুজনে শুয়ে পরলাম দেরি না করে। কাল ব্যাংকক শহর ঘুরতে বের হবো। আমাদের সাথে ভ্রমনের আমন্ত্রণ রইল।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp

অন্যান্য লেখা গুলো পড়ুন