হোক ইচ্ছের বহিঃপ্রকাশ...

ব্যাংকক ভ্রমণের দ্বিতীয় দিন

আজ আমাদের ব্যাংকক ভ্রমণের দ্বিতীয় দিন। আজ আমরা ব্যাংককের চাও ফ্রেয়া নদীতে টুরিস্ট বাসে করে ঘুরব এবং আইকোন সিয়াম এ ঘুরে বেড়াবো। তারপর আজ রাতে ব্যাংকক থেকে খাওসোকে যাবার উদ্দেশ্যে বাসে করে রওনা হবো। আমাদের এসকল গল্প শোনার জন্য আমাদের সাথে থাকুন।

ব্যাংকক, থাইল্যান্ড

আজ আমরা ব্যাংককের হোটেল থেকে চেক আউট করবো। তাই একটু আয়েশ করে ঘুমিয়ে সকালের নাস্তা করে নিলাম। সকালের নাস্তা সেরে ব্যাগ গুছিয়ে একবারে চেক আউট করে ঘুরতে বের হলাম। লাগেজ হোটেলের লকারে রাখার ব্যবস্থা ছিল। তাই নিশ্চিন্তে বের হয়ে গেলাম দুজনে।

ব্যাংকক, থাইল্যান্ড

প্রথমে রওনা হলাম ফেরা আরচিট নামের পিয়ারের দিকে। এটি খাওসান রোড থেকে সবচেয়ে কাছের নদী ঘাট। হেঁটে যেতে ১০ মিনিট লাগে। কোন শহরে গেলে আমরা হেঁটে হেঁটে ঘোরার চেষ্টা করি। এতে স্থানীয় জন জীবন অবলোকন করা যায়। স্থানীয়দের সাথে আলাপ আলোচনাও করা যায়। ব্যাংককের বা থাইল্যান্ডের মানুষেরা অনেকেই ইংরেজি খুব ভাল একটা জানে না বা বোঝে না। কিন্তু যথেষ্ট সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব এবং বন্ধু সূলভ। আমরা আগে পাশের জন্ জীবন দেখতে দেখতে নদী ঘাটে চলে এলাম।

ব্যাংকক, থাইল্যান্ড

সুন্দর ছিমছাম নদীর ঘাট। মাত্র ৬০ বাথ দিয়ে ২ জনের জন্য টিকিট নিয়ে নিলাম। অনেক পর্যটক অপেক্ষা করছেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই টুরিস্ট গেট গুলো চলাচল করে। প্রতি ৩০ মিনিট পর পর এগুলো ছেড়ে যায়। বোটে আসলে আমরা সবাই লাইন ধরে বোটে উঠলাম। খুব চমৎকার ব্যবস্থা। নীচের তলা এসি রুম। সুন্দর বসার জায়গা পর্যাপ্ত সিট আছে এবং সিটগুলো বেশ আরামদায়ক। আমরা প্রকৃতি উপভোগ কবর বলে উপরে চলে গেলাম। সেখানেও যথেষ্ট সুন্দর বসার সিট রয়েছে। এই টুরিস্ট বোটগুলো ফেরা আরচিট থেকে সাথোন পর্যন্ত যায়। শুধু সন্ধ্যাকালে রিডার ফ্রন্ট পিয়ারে যায়। আমরা এই বোটে করে আইকন সিয়াম ঘাটে যাব। যেতে প্রায় ২০-২৫ মিনিট লাগবে। প্রায় ১১টার মত ঘাট আছে। প্রতিটি পিয়ার বা ঘাটে আসার পর স্পিকারে ঘোষণা করা হয়। তাই আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন কোথায় আপনাকে নামতে হবে।

ব্যাংকক, থাইল্যান্ড

নদীর দুই পারে অসংখ্যা উচুঁ উচুঁ দালান। স্বচ্ছ পরিস্কার নদীর পানি। খুব ভাল লাগছিল। আর নীল আকাশের সাদা মেঘ গুলো যেন দারুন এক পরিবেশ তৈরি করেছিল স্থানীয়দের জন্য আলাদা কিছু বোট আছে। সেখানে ভাড়া কম আর বেশি সংখ্যক ঘাটে সেগুলো দাঁড়ায়। ব্যাংকক শহরের ভিতর নদী পথে এত সুন্দর যাতায়াতের আয়োজন খুব ভাল লাগলো। শুধু মনে হচ্ছিল আমাদের নদী মাতৃক দেশের কথা। ঢাকা সহ আমাদের প্রতিটি শহর তো নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে। অথচ আমরা আমাদের নদীগুলো কাজে লাগাতে পারিনি। বরং নদীগুলো একে একে ধ্বংস করে ফেলছি।

ব্যাংকক, থাইল্যান্ড

নদী সৌন্দর্য দেখতে দেখতে আমরা আইকন সিয়ামে চলে আসলাম। পিয়রি বা নদী ঘাট গুলো এরা এতো সুন্দর করে বানিয়েছে। যার প্রশংসা করতেই হয়। যেকোন বয়সের এমনকি শারীরিক প্রতিবন্ধীকের চলাচল করতে এখানে কোন সমস্যা হবে না। আইকন সিয়াম ব্যাংকের বিশাল এক শপিংমল। তবে একে শুধু শপিং মল বললে ভুল হবে বরং এটি বিনোদন কেন্দ্র যেখানে আপনি সবকিছু পেয়ে যাবেন। বিশাল এলাকা জুড়ে এই মলটি সারা দিন ঘুড়েও আপনি শেষ করতে পারবেন না। বিশ্ব বিখ্যাত সকল ব্যান্ডের দোকান রয়েছে এখানে। ফ্যাশন, কাপড়, পোষক, কসমেটিকস্, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি, বই, জুতো, ইলেকট্রনিক্স সহ যাবতীয় সকল জিনিসের সমাহার এখানে। কিছু সেমিনার স্পেস রয়েছৈ। অনেক স্কুল কলেজের বাচ্ছাদের নিয়ে আলোচনা হচ্ছে দেখলাম। বন্ধু আত্মীয়দের নিয়ে বসে বসে আড্ডা দেখার অসংখ্য জায়গা। বিভিন্ন ধরনের খাবারের দোকান।

ব্যাংকক, থাইল্যান্ড

একটা ফ্লোরে চিত্রকলা প্রদর্শনী চলছি। আমরা সেখানে গেলাম। যেহেতু আমাদের শিল্পের প্রতি বেশ অনুরাগ রয়েছে। হস্তশিল্পের অনেক দোকান রয়েছে। আমরা ঘুরে ঘুরে সেগুলো দেখতে লাগলাম। এর ঘুরতে ঘুরতে চলে এলাম ব্যাংককের জুয়েলের কাছে। কৃত্রিম এই জলপ্রপাতটি সিঙ্গাপুরের চৌদ্দি এয়ারপোর্টের জুয়েলের আদলে তৈরি করা হয়েছে। বিশাল মানবসৃষ্ট জহল প্রপাত। নানা রঙের আলোক সজ্জা করে চমৎকার এতটি প্রবাহ তৈরি করা হয়েছে। আমরা এই জলপ্রাপতের পাশে একটি রেস্তোঁরাতে বসে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম।

ব্যাংকক, থাইল্যান্ড

এরপর আমরা গেলাম এপেল স্টোরে। Apple এর সব ধরনের প্রোডাক্ট দেখলাম বিশাল বড় স্টোর। এই স্টোরের পাশেই আইকা সিয়াম পার্ক। এর উচুঁতে গাছপালা দিয়ে সাজানো সুন্দর একটি পার্ক। খোলামেলা অনেক সুন্দর। বসার অনেক জায়গা সামনে চাও ফ্রাও নদী। আমরা বিকাল পর্যন্ত এখানে বসে থাকলাম।

ব্যাংকক, থাইল্যান্ড

সন্ধ্যায় আমাদের খাওসেফ যাবার বাস। তাই সেখান থেকে ৫টার দিকে রওনা হলাম হোটেলের দিকে। হোটেলে আমাদের লাগেজ ছিল। লাগেজ নিয়ে কফি নিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম। হোটেলের রিসিপশন থেকে আমাদের নিয়ে গেল। বাস ছাড়ল সন্ধ্যা ৭ টার দিকে। সুন্দর ডাবল ডেকার বাস। নীচে টয়লেট আছে। সিটগুলো বেশ আরামদায়ক। আমরা ধীরে ধীরে চলতে লাগলাম খাওসোফের দিকে। পথে রাতের খাবার এর জন্য দাঁড়োলো একটা হোটেলে। চিকেন ফ্রাইড রাইস খেয়ে নিলাম ৮০ বাথ দিয়ে। এরপর বাসে উঠে ঘুমিয়ে পড়লাম। কাল সকালে পৌঁছে যাব খাওসোফ। আমাদের খাওসোফ ভ্রমণ গল্প দেখতে ভুলবেন না আশা করি।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp

অন্যান্য লেখা গুলো পড়ুন