হোক ইচ্ছের বহিঃপ্রকাশ...

চিউ লেন লেক

আজ আমরা খাওসোফের বিখ্যাত চিউ লেন লেকে ঘুরতে যাব। লাইম স্টোন পাহাড়ে ঘেরা ১৮৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মানবসৃষ্ট এই লেকটি অপার সৌন্দর্যে ভরপুর। আশা করি এই অপরূপ লেকের সৌন্দর্যে আপনিও বিমুগ্ধ হবেন।

খাও সোক

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করতে গেলাম। রাতে বৃষ্টি হয়েছে। তাই চারিদিকে আরও সবুজ এবং সতেজ লাগছে। নাস্তার আয়োজন বেশ চমৎকার ছিল। ব্রেড, বাটার, জ্যাম, জেলি, সবজি, ডিম, দুধ, জুস, ফল সহ অনেক রকম আইটেম ছিল। আমরা নাস্ত আর কফি খেয়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। ঠিক সময়ে গাড়ি চলে আসলো। আমাদের সাথে আরও বেশ কয়েকজন ছিল গাড়িতে। প্রায় আধা ঘন্টা পর আমরা সবাই 7-11 এ একবার দাঁড়ালাম। কারো যদি কিছু কেনাকাটা করতে হয় তাহলে এখানে করতে পারবেন। কারণ পরে তেমন কোন শপ পাওয়া যাবে না।

খাও সোক

এরপর আমরা লেকের পারে চলে আসলাম। এখানে আমাদের গাইড আমাদের কিছু নির্দেশনা দিল। সাথে লেকের ট্যাক্স বাবদ ৪৫০ বাথ জন প্রতি নিল। চিউ লেন লে ঘোরা বেশ ব্যয় সাপেক্ষ। এখানে আমাদের সারা দিনের ট্যুরের জন্য ১৫০০ বাথ করে দিতে হয়েছে। প্রায় ১২ জনের গ্রুপ। ২ জন গ্রুপ হলে প্রায় ৩৩০০ বাথ দিতে হত জন প্রতি। আমরা সবাই মিলে বোটের ঘাটে চলে এলাম হাঁটতে হাঁটতে তখন আকশে কিছু মেঘ ছিল। আমরা কিছু শঙ্কায় ছিলাম। বৃষ্টি হলে ভাল ভিউ পাওয়া যাবে না। তবে বৃষ্টি হয়নি। রোদ না থাকায় বেশ ভালই লাগছিল। তেমন গরম ছিল না।

চিউ লেন লেক

বোটে করে আমরা চলতে শুরু করলাম। চারিদিকে স্বচ্ছ জলরাশি ভেদ করে আমরা চলতে লাগলাম। দূরে আকাশের গায়ে পাহাড়ের সারি। চমৎকার দৃশ্য দেখতে দেখতে আমরা এগিয়ে গেলাম। প্রথমে আমাদের নিয়ে এলো একটি গুহা দেখাতে। গুহার ব্যাপারে তেমন আগ্রহ ছিল না আমাদের। তাই সেখানে না গিয়ে আমরা লেকের পারে বসে থাকলাম দুজনে। বাকিরা গুহা দেখা শেষ করে এলে আমরা আবার চলতে শুরু করলাম।

চিউ লেন লেক

এই লেকটি খাওসোফ ন্যাশনাল পার্কের অধীন একটি লেক। ১০০টির উপর লাইন স্টোন পাহাড় আছে এখানে। পানিতে পাহাড়ের গায়ে চুনা পাথর ক্ষয় হয়ে এক অদ্ভত নকশা তৈরি করেছে। আমরা কিছু সময় পর বনের ধারে চলে এলাম। এখন আমরা বনের ভিতর ঢুকবো সাথে আমাদের গাইড থাকবেন। এই বনটি অ্যামাজনের বন থেকেও প্রাচীন। নানা ধরনের পাখি, প্রাণী আর পোকা মাকড়ের আবাসস্থল এই বন। আমরা বনের ভিতর ঘুরে ঘুরে নানা জাতের প্রাণী আর গাছ দেখতে লাগলাম। সংক্ষিপ্ত বন ভ্রমন শেষ করে আমরা আবার বোটে উঠে বসলাম।

চিউ লেন লেক

এখন আমরা যাব এখানকার ফ্লোটিং রেস্টুরেন্টে। লেকের উপর ভাসমান এই হোটেল গুলো। চাইলে এখানে রাত্রিযাপন করা যায়। তবে বেশ করচ সাপেক্ষ। সেক্ষেত্রে রাত্রি যাপন সহ পুরো প্যাকেজ ৩০০০ বাথ নেবে জন প্রতি। আমরা এরকম একটি ফ্লোটিং হোটেলে আসলাম। এখানে আমাদের লাঞ্চের ব্যবস্থা আছে। স্থানীয় মাছ, সবজি, রাইস, সালাদ ছিল দুপুরের খাবার, সাথে পানি আর চা কপি। আমরা দুপুরের খাবার খেয়ে দু কাপ কফি নিয়ে লেকের পারে বসলাম। অনেক ** করতে গেল। কেউ বা সুইমিং করতে গেল। আকাশে মেঘের খেলা করছে। আর চারিদিকে স্বচ্ছ সুবজান্ত লেকের পানি। এই অপার্থিব সৌন্দর্যের তুলনা হয় না। আমরা মুগ্ধ হয়ে দেখতে লাগলাম এই লেকের অপরূপ সৌন্দর্য। আমাদেরকে এখানে প্রায় ২ ঘণ্টা সময় দিয়েছিল। ২ ঘণ্টা কিভাবে চলে গেল বুঝতে পারিনি।

চিউ লেন লেক

সময় শেষ হলে আমরা আবার বোটে উঠে বসলাম। বোট চলতে শুরু করল। লাইম স্টোনের পাহাড়ের সারি স্বচ্ছ লেকের পানি আর দূরে সবুজ বনের আলো ছায়া দেখতে দেখতে আমরা ছুটে চললাম পারের দিকে। বন, পাহাড় আর লেকের যেন এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছে এখানে। প্রায় ৩০ মিনিট পর আমরা ঘাটে চলে এলাম। সেখানে আমাদের জন্য গাড়ি অপেক্ষা করছিল। তাই গাড়িতে করে আবার হোটেলের দিকে রওনা হলাম।

খাও সোক

যখন হোটে পৌঁছলাম তখন প্রায় সন্ধ্যা। আমরা হোটেলের পাশে এক ট্রাভেল এজেন্সি থেকে টিকিট নিলাম আগামীকাল কোহ সামুই যাবার জন্য। জন প্রতি ৬০০ বাথ ছিল। এরপর রুমে এসে ফ্রেস হয়ে ডিনার করতে গেলাম। সারাদিনের ধকলে বেশ ক্ষুধা লেগেছিল। আর এখানে খাবারের স্বাদ দারুন। তাই পেট পুরে খেয়ে শুয়ে পড়লাম। আগামীকাল রওনা হবো কোহ সামুই এর উদ্দেশ্যে। আমাদের কোহ সামুই ভ্রমণের সঙ্গী হবার আমন্ত্রণ রইল।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp

অন্যান্য লেখা গুলো পড়ুন