হোক ইচ্ছের বহিঃপ্রকাশ...

খাও সোক থেকে কোহ সামুই

আজ আমাদের গন্তব্য নীল জলরাশির বুকে এক টুকরো সুন্দর কোহ সামুই। থাইল্যান্ডের দক্ষিণে অবস্থিত এই চমৎকার সুন্দর দ্বীপটি যাওয়ার বিস্তারিত গল্প থাকছে এই পর্বে।

খাও সোক

আমরা খাও সোক থেকে কোহ সামুই যাব। তাই সকাল বেল ব্যাগ গুছিয়ে নাস্তা করতে বের হলাম। আগে থেকে রিসিপশনে বলে রেখেছিলাম। তাই নাস্তা রেডি ছিল। ব্রেড, মাখন, ফল আর কফি দিয়ে নাস্তা করে নিলাম। হোটেলের চেক আউটের আনুষ্ঠানিকতা আগের দিন রাতে সেরে ফেলেছি।

কোহ সামুই যাবার পথে

আমাদের গাড়ি ৭:৩০ এ চলে এলো। খাওসোফের এই রিসোর্টটি সত্যি খুব ভাল। কর্মচারীরাও খুব আন্তরিক। চলে যেতে মন চাইছিল না। মনে হচ্ছিল আরো কিছুদিন থেকে যাই। কিন্তু যেতে তো হবেই। কোহ সামুইতে আমাদের হোটেল বুক করা আছে আগে থেকে। গাড়ি আমাদের মিনি ভ্যান স্ট্যান্ডে নামিয়ে দিল। যেখান থেকে মিনি ভ্যান আমাদেরকে ডান সেফে পিয়ার বা ঘাটে নামিয়ে দিল।

সি ভিউ রিসোর্ট, কোহ সামুই

কোহ সামুই যাবার এই ফেরি ঘাটটা অসাধারণ। মনে হবে কোন বড় এয়ারপোর্টে আপনি চলে এসেছেন। শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত ছিমছাম এই ফেরি ঘাটে চেক করে আপনাকে নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাবার গেটে অপেক্ষা করতে হবে। ঘোষণা আসলে যথাসময়ে আমরা লাইন ধরে ফেরিতে উঠলাম। ফেরিটাও দারুন সুন্দর, যথেষ্ট বড়, প্রচুর বসার জায়গা, এসি পুরোটা। বড় বড় সুন্দর পরিস্কার টয়লেট। পানি খাবার ব্যবস্থা। চাইলে খাবার কিনে খেতে পারবেন। চিপস, চকলেট, লাঞ্চের জন্য রাইস প্যাকেট সব পাওয়া যায়। চা, কফি খেতে পারবেন। আমাদের সাথে খাবার ছিল। তাই আমরা সাথে করে নিয়ে ৭-১১ এর খাবার কিছু খেয়ে কফি খেয়ে নিলাম। দুজনে ফেরির সামন গিয়ে গল্প আর থাইল্যান্ডের সৌন্দর্য উপভোগ করতে লাগলাম। সমুদ্রের পানি এত নীল আগে কখনও দেখিছি। বিশাল সমুদের বুক চিরে আমাদের সিট্রান ফেরি ছুটে চলেছে। অনেক ছবি তুলেছি। নানা দেশের পর্যটক মুগ্ধ হয়ে সমুদ্রের সৌন্দর্য দেখছে।

সি ভিউ রিসোর্ট, কোহ সামুই

প্রায় ২ ঘণ্টা চলার পর আমরা কোহ সামুই চলে আসলাম। ধীরে ধীরে সবাই নামতে লাগলাম। এখানে কুলি মজুরের কোন ব্যবস্থা নেই সবাই তার নিজ নিজ লাগেজ বহন করছে। লাইন ধরে সবাই যাচ্ছি কোন হুড়াহুড়ি ধাক্কাধাক্কি নাই। ফেরি থেকে নেমে দেখলাম অনেক ট্যাক্সি। অনেক অনেক টুর অফার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তবে কোন জোরাজুরি করছে না। কারো লাগলে নিচ্ছে। আমরা দেখলাম আমাদের দেশের লেগুনার মত এক রকম যান। নাম বানজি। সেখানে অনেক যাচ্ছে লামাই। আমরা যেহেতু লামাই যাব তাই ড্রাইভারের সাথে কথা বলে উঠে বসলাম। লেগুনার মত হলেও চওড়া এবং পরিস্কার। সিটগুলো ভাল। আমরা লাগেজ সহ উঠে বসেছি। আমাদের সাথে স্থানীয় এবং পশ্চিমা পর্যটকও ছিলেন। চলতে চলতে কোহ সামুই দ্বীপটি দেখতে লাগলাম।

লামাই বিচ, কোহ সামুই

এটি থাইল্যান্ডের ২য় সর্বোচ্চ দ্বীপ। রাস্তা গুলো বেশ চওড়া আর মসৃণ। সমুদ্রের নীল জলের পাশ দিয়ে ছুটে চলেছি আমরা। অনেক হোটেল, ক্যাপে, দোকান দেখতে পাচ্ছি। প্রায় আধা ঘণ্টার মত লাগল লামাই আসতে। ড্রাইভার আমাদেরকে একদম হোটেলের সামনে নামিয়ে দিল। কোহ সামুই সহ থাইল্যান্ডের সকল ট্যাক্সি ড্রাইভারের কাছ থেকে আমরা ভাল ব্যবহার পেয়েছি। জন প্রতি ২০০ বাথ করে নিয়েছিল। কোহ সামুইতে যাতায়াত খরচ একটু বেশি। আমাদের হোটেলটির নাম সি ভিউ। একদম সমুদ্রের পাশে। আমরা বিসিপশনে ওয়েলকাম ড্রিঙ্কস খেয়ে লাগেজ নিয়ে চলে আসলাম হোটেলের রুমে। রুম ধেকে তো আমরা অভিভূত। একদম বীচের পাশে আমাদের রুমটি। প্রতিটি রুম এক একটি আলাদা কটেজ। রুমের বিছানা থেকে নীল সমুদ্র দেখা যায়। রুমটাও বেশ সুন্দর সাদা রং এর দেয়াল, বিছানা, আলমারি। এছাড়া চা কফি খাবার সরঞ্জাম, বাথরুমে সাবান শ্যাম্পু তোয়ালে সহ সকল ব্যবস্থা ছিল। একটি ছোট টেবিল, আয়না ফ্রি WiFi এর ব্যবস্থাও ছিল। রুমের সাথে একটি ছোট বারান্দা আর বসার জন্য ২টি ডেক চেয়ার। হোটেলটা আমাদের খুব ভাল লেগেছিল। আমাদের বুকিং করা রুমটা ছিল বীচ থেকে একটু দূরে। কিন্তু হোটেল ম্যানেজার রুম খালি থাকায় বীচের পাশের রুমটা দিয়েছিল।

লামাই বিচ, কোহ সামুই

আমরা একটু ফ্রেশ হয়ে হোটেলের রেস্টুরেন্ট এ গেলাম। রেস্টুরেন্টাও বেশ সুন্দর। একদম বীচের পাশে। নীল সমুদ্রের পাশে সাদা রেস্টুরেন্ট। আমরা ফ্রাইড রাইস অর্ডার দিলাম। এর পর খাওয়া-দাওয়া করে রুমের বিছানায় কিছু সময় গড়িয়ে নিলাম। রোদ একটু কমেতে শুরু করলে ঘুরতে বের হলাম। সাদা বালুকা বেলাতে সবুজ নারিকেল গাছেল সারি আর দূরে নীল সমুদ্র। এত অপরূপ সৌন্দর্য খুব কম দেখা যায়। আমরা সাদা বলুতে সমুদ্রের কিনারা ধরে হাঁটলাম। অসংখ্য বার, হোটেল, ক্যাফে গড়ে উঠেছে। তবে কোন টা এক তলার উপরে না। নানা দেশের অসংখ্য পর্যটক ঘুরছে, খেলা করছে, হাঁটছে, গোসল করছে। কেউবা সাঁতার কাটছে, কেউ আবার শুয়ে আছে। বাচ্চারা বালি দিয়ে খেলছে সমুদ্রের পারে।

লামাই বিচ, কোহ সামুই

আমরা হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে একটি ক্যাফে তে গিয়ে বসলাম। নানা রং এর বিন ব্যাগে বসার জায়গা আছে। প্রতিটি ক্যাফে অসম্ভব সুন্দর করে সাজানো। সূর্যাস্থ দেখতে দেখতে আম আর কমলার জুস উপভোগ করলাম। সন্ধ্যার পর বার বি কিউ শুরু হল। এছাড়া অনেক জায়গায় আগুনের খেলা দেখাচ্ছে। আমরা এসব উপভোগ করছিলাম বেশ। দুজনে হাঁটতে হাঁটতেচলে এলাম লামাই এর ফুড মার্কেটে। এখানকার ফুড মার্কেট আর নাইট মার্কেট বিখ্যাত। আমরা নাইট মার্কেট ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম। জামা-কাপড়, হস্তশিল্প, ঘর সাজানোর দ্রব্যাদি, খেলনা, কসমেটিকস, জুয়েলারি সহ অনেক পণ্যএখানে বিক্রি হচ্ছে। আমরা হাঁটতে হাঁটতে বেশ ক্লান্ত হয়ে গেছি। তাই ফুড মার্কেট গিয়ে অবাক হয়ে গেলাম বহু ধরনের কাবাব, রোল, চপ, জুস, আইসক্রিম, ডেজার্ট সব অনেক অনেক খাবার।

লামাই বিচ, কোহ সামুই

আমরা খুঁজে খুঁজে হালাল কিছু খাবার অর্ডার করলাম। অর্ডার করার পর তারা ডেজে দেয় গরম গরম। বসার যথেষ্ট সুন্রদ জায়গা, অনেক মানুষজন খাচ্ছে। কেউ আবার টেক ওয়ে করে নিয়ে যাচ্ছে। পরিস্কার পরিবেশ চারিদিকে। গান হচ্ছে পাশে। লাইভ গান শুনতে বেশ ভাল লাগছিল। বেশ জমজমাট একটি পরিবেশ। সন্ধ্যাবেলা এমন প্রাণ উচ্ছল পরিবেশে রাতের খাবার খেয়ে রুমে চলে আসলাম। কাল এক সামনের কয়েকটা দিন আমরা এই দ্বীপে থাকবে। আমাদের এই দ্বীপ ভ্রমণের গল্প শুনতে ভুলবেন না সেই প্রত্যাশা রইল।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp

অন্যান্য লেখা গুলো পড়ুন