ওই ঝিনুক ফোঁটা সাগর বেলায় সকালের ইচ্ছে করবে ঢেউয়ের ছোয়ায়মন ভেজাতে। এমন শুভ্রু বালুকাবেলায় নীল জলের অবিরাম খেলা দেখলে কার না মন উদাস হবে। কোহ সামুই এর মা নীম বীচের পাশে কোকপাম বীচ রিসোর্টে আজ আমাদের শেষ দিন। এখান থেকে আজ আমরা দারুন সুন্দর আর একটি বীচ ক্রিস্টাল বীচ এ রাত্রিযাপনে যাব। এই সকল বিষয়ে আজকে আমাদের পর্বে জানতে পারবেন।

আজ সকালেও সাগর পারে দুজনে হেঁটে বসে উপভোগ করলাম। মেঘের ফাঁক দিয়ে সূর্যের উকিঁ দেয়া আর গাঙ্গচিলের মুক্ত আকাশে উড়ে বেড়ানো দেখে মধুর সকাল অতিবাহিত হলো। এর অনেকটা বেলা গড়িয়ে গেলে আমরা নাস্তা করতে গেলাম। বুফে নাস্তা ছিল। প্যানকেক, চিজ ওমলেট এর সাথে সসেজ বেকন, ব্রেড, বাটার, জ্যাম, জেলি, দুধ, জুস সব ছিল। এছাড়া রাইস, চিকেন এর আইটেমও ছিল। বেশ আয়েশ করে নাস্তা করে আমরা দুই কাপ কফি হাতে সাগর পারে এসে বসলাম।

এমন সুন্দর জায়গা ছোড়ে যেতে ইচ্ছে করছিল না। কিন্তু আমাদের চেক আউট করে ক্রিস্টাল বীচে রিসোর্টে যেতে হবে। আগে থেকে সেখানে বুকিং করা ছিল। আমরা ব্যাগ গুছিয়ে গাড়িতে করে রিসিপশনে চলে আসলাম। সেখানে সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে একটা ট্যাক্সি নিয়ে চলতে লাগলাম ক্রিস্টাল বীচের দিকে। আগেই বলেছি কোহ সামুই বেশবড় দ্বীপ। এখানে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় যেতে বেশ সময় লাগে। তবে রাস্তায় কোন জ্যাম নাই। খুব সুন্দর রাস্তা সব খানে। আমরা ৩০ মিনিট পর চলে আসলাম ক্রিস্টাল বীচ রিসোর্টে।

এখানে রিসিপশনে ওয়েলকাম ড্রিংক্স খেয়ে আর ফরম ফিল করে চললাম। আমাদের জন্য নির্ধারিত রুমে। এই রিসোর্টটি একদম ক্রিস্টাল বীচের পাশে। বেশ বড় এই রিসোর্টটি অনেক ধরনের রুম আর কটেজ রয়েছে। আমরা সি ভিউ হিল রুম নিয়েছিলাম। পাহাড়ের উপর একটি রুম। সামনে খোলা বারান্দা। বিশাল বড় বিছান, পরিস্কার টয়লেট, টিভি, এসি সহ যাবতীয় সব আছে। কোহ সামুইতে যে কয়টি হোটেলে ছিলাম তার প্রতিটি বেশ ভাল ছিল। প্রতিটির ডিজাইন আলাদা। কর্মীদের কোন খারাপ ব্যবহার আমরা পাইনি। সবাই বেশ আন্তরিক ছিল। সবগুলো আগে থেকে বুক করে গিয়েছিলাম।

এখানেও বড় সুন্দর সুইমিং পুল আর তার পাশে রেস্টুরেন্ট। আমরা দুপুরে খাওয়ার জন্য রেস্টুরেন্টে গেলাম। পাস্তা অর্ডার দিলাম। তাবে এখানে দাম কিচু বেশি মনে হল। আর লোকজনের সমাগম বেশি মনে হল। লাঞ্চ করে আমরা রুমে চলে আসলাম। কারণ আকাশে মেঘ করে ছিল। কিছু সময় পর বৃষ্টি শুরু হল। পাহাড়ের উপর এই কটেজ থেকে দূরে সাগর আর বৃষ্টি দেখতে বেশ বাল লাগছিল। রিসোর্টটায় প্রচুর গাছ। নানা রং এর কাঠগোলাপ দিয়ে সাজানো। আমরা বারান্দায় বসে চা হাতে নিয়ে বৃষ্টি উপভোগ করতে লাগলাম।

একটু পর বৃষ্টি থেমে গেল। আকাশ পরিস্কার হয়ে গেলো। বিকালে দুজনে ঘুরতে বের হলাম। এখানেও অনেক প্রবাল পাথর রয়েছে। এক অন্য রকম আবহা তৈরি করেছে। সাদা বালু আর প্রবাল পাথর। দূরে নীল সমুদ্র। খুব সুন্দর এক সমন্বয় ঘটেছে প্রকৃতিতে। প্রচুর পর্যটক ছিল তখন। যদিও জুন-জুলাই অফ সিজন। তারপরেও অনেক পর্যটক দেখলাম। তাহলে বোঝা যায় সিজনে কেমন পর্যটক আসে এখানে।

আমরা বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত বীচে সময় কাটালাম। রাতে 7-11 থেকে খাবার এনে রুমে বাসে খেয়ে নিলাম। রাতে আবার বৃষ্টি শুরু হল। বৃষ্টির শব্দ আর দূরে সাগরের ঢেউ দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পরলাম। কাল হয়ত অপেক্ষা করছে প্রকৃতির ভিন্ন নতুন রূপ আমাদের জন্য। আশা করি আমাদের সাথে থাকবেন সবসময়।