হোক ইচ্ছের বহিঃপ্রকাশ...

ক্রিস্টাল বীচের সেই অপূর্ব সকাল

রক্তিম সূর্যের আলো মাখা একটি সুন্দর সকাল হোক, ফুলের সৌরভ মাখা একটি নির্মল বিকেল হোক জীবনের মূহুর্তগুলো তোমার সাথে হোক। দুজনের এক সাথে ভ্রমনের মূলমন্ত এটাই। কোহা সামুইতে শেষ বেলায় ক্রিস্টাল বীচের সেই অপূর্ব সকাল, আর রুফ সামুই তে অপরূপ পরিবেশে জম্বেশ খাওয়া-দাওয়া কিংবা কজি হোটেলের দারুন সুন্দর পরিবেশনা সব কিছু থাকছে আজকের এই পর্বে।

কোহ সামুই

আজকের সকালটা সত্যি চমৎকার ছিল। রুমের বারান্দা থেকে এমন অনেক দৃশ্য অবলোকন করছিলাম। ধীরে ধীরে সূর্যের উদয় হচ্ছিল। আকাশে কিছু মেঘ ছিল। তাই মেঘের ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলো এসে পরছি সমুদ্রের উপর। এ এক অসাধারণ অনুভূতি। আমরা নীচে গিয়ে সাগর পারে বসে উপভোগ করলাম এই সুন্দর সকালটা।

কোহ সামুই

আমাদের এই হোটেলটা বেশ চমৎকার বিশেষ করে এই রুমটা। অন্য সব হোটেলের মত বিছানা, লেম্প, টেবিল, চেয়ার, সোফা আলমারি সব আছে। ইলেকট্রিক কেটলি, ফ্রিজ সহ সব ধরনের সুবিধা ছিল। ছোট একটা সুইমিং পুল সহ রেস্তোরা ছিল। আমরা সোফায় বসে চা আর নাস্তা করে নিলাম রুমে বসে। এরপর ১২ টার দিকে চেক আউট করে রওনা হলাম চেওয়া, বীচের কাছে আর একটা হোটেলে। এটি সেন্ট্রাল সামুই এর এক রুম পাশে কজি সামুই হোটেল। বেশ আধুনিক এই হোটেলটি খুব চমৎকার। আধুনিক সব সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন এই হোটেলটি মাত্র ৭০০ বাথ রাত প্রতি ভাড়া নেয়। আমরা চেক ইন করে চাবি নিয়ে রুমে চলে এলাম। ছোট সুন্দর রুমটি সব রকম সুযোগ সুবিধা আছে। বিছানা বেশ বড়, কাপড় রাখার জায়গা, ফ্রিজ আছে। বড় জানালা এছাড়া সোফা টিভি টেবিল সব আছে। বাথরুম ছোট হলেও সকল সুবিধা সম্পন্ন।

কোহ সামুই

আমরা ফ্রেশ হয়ে দুপুরের রাঞ্চ করতে রওনা হলাম রুফ সামুই এর দিকে। আমরা এটা টেক্সি নিয়ে রুফ সামুই যাবার জন্য পাহাড়ের নীচে জীপ স্ট্যান্ডে চলে আসলাম। রুফ সামুই যেহেতু পাহাড়ের উপরে তাই ট্যাক্সি যেতে পারেনা। রুফ সামুই এর নিজস্ব তত্ত্বাবধানে ওদের জীপ গাড়িতে যেতে হয়। আমাদের মত আরও অনেকে ছিল। ৩০ বাথ এর বিনিময়ে এই জীপ রুফ সামুই নিয়ে যাবে আমাদের আমরা চলতে শুরু করলাম। উঁচু খাড়া রাস্তা ধরে চলতে শুরু করলাম। প্রায় ২০ মিনিট পর রুফ সামুই চলে আসলাম। রুফ সামুই পাহাড়ের উপর একটি রেস্টুরেন্ট। এখান থেকে সমুদ্রের সুন্দর দৃশ্য দেখা যায়।

রুফ সামুই তে মজাদার খাবার

বেশ বড় এলাকা নিয়ে করা হয়েছে রেস্টুরেন্টটি। ইন্সটাগ্রামে দেখে আমরা ঠিক করেছিলাম এখানে আসবো। এসে খুব ভাল লাগলো। এখানে বসার অনেক জায়গা আছে। প্রচুর মানুষ আছে দেখলাম। এখানে বিকালে বা সন্ধ্যায় প্রচুর মানুষ আসে। রাতের চমৎকার ভিউ দেখা যায়। আমরা নিরিবিলি একটি টেবিল দেখে বসে পরলাম। চারিদিকে সবুজ গাছ আর দূরে নীল সমুদ্র। বেশ সুন্দর একটি পরিবেশ। আমরা জুস, পিজা, বিফ স্টেক অর্ডার দিলাম। খাবার একটু পরে চলে আসলো। খাবারের দাম একটু বেশি। তবে এমন সুন্দর পরিবেশে কিছু বেশি দাম দিয়ে খেতে আপনার ভাল লাগবে। আর খাবারে স্বাদ ছিল খুব ভাল। আমাদের খুব ক্ষুধা লেগেছিল। তাই মন ভরে খেয়ে নিলাম। খাওয়া দাওয়া করে অনেক সময় বসে থাকলাম দুজন। ছবি তুললাম, ভিডিও করলাম। খুব ভাল লাগছিল।

রুফ সামুই তে মজাদার খাবার

এর পর তাদের জীপে করে আবার নীচে চলে আসলাম। এবার আমাদের গন্তব্য Coco Taw এটি কোহ সামুই এর আর একটি ক্যাফে। বেশ জনপ্রিয়। আমাদের হাতে যেহেতু সময় ছিল তাই একটি বানজিতে করে চলে এলাম Coco Tam সমুদ্রের পারে একটি সুন্দর ক্যাফে। অনেক জনপ্রিয় বলে প্রচুর লোকের সমাগম। আমরা কিছু সময় এখান থেকে পাশের স্টিট মার্কেটে গেলাম। তারপর সেখান থেকে আবার বানজি তে করে চলে এলাম হোটেলে। রাতে Central Samui তে ঘুরলাম। এখানে প্রচুর দোকান আছে। বইয়ের দোকানে ঘুরলাম। এছাড়া হস্তশিল্পে অনেক দোকান আছে। বেশ ভাল লাগছিল। বিশাল বড় এই শপিং মলটি। তারপর 7-11 থেকে খাবার কিনে রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পরলাম।

কোহ সামুই

পরদিন ঘুম থেকে উঠে কজি এর ক্যাফে তে চলে এলাম কফি খাবার জন্য। এদের স্টাফরা খুব আন্তরিক। আমরা কফি খেয়ে কজি হোটেলটা ঘুরে দেখলাম। এখানে একটা সোশাল হাব আছে। বিভিন্ন দেশের পর্যটক এখানে আসেন। এখানে বসে কাজ করেন, আড্ডা দেন, গল্প করেন, একে অপরের সাথে পরিচিত হন। অনেক সোফা, টেবিল, চেয়ার দোলনা, প্রজেক্টর সব আছে দেখলাম। এছাড়া এখানে সুইমিং পুল আছে। ছোট সুন্দর কিছু কমন এরিয়া। লিফটগুলো বেশ বড় এবং পরিস্কার। সব কিছু এখানে ডিজিটাল ভাবে ব্যবস্থাপনা করা হয়।

এরপর আমরা Cozy এর পাশে কফি ক্লাবে গেলাম সকালের নাস্তা করতে। খাবার স্বাদ খুব ভাল ছিল। নাস্তা করে দেখলাম আমাদের হাতে সময় আছে। তাই পাশের একটি ডিপার্টমেন্টাল সোরে গেলাম। এত বিশাল ডিপার্টমেন্টাল স্টোর সত্যি অবাক করা বিষয়। থাইল্যান্ডে এমন ডিপার্টমেন্টাল স্টোর আছে। এমন কিছু নাই যা এখানে পাওয়া যায় না। কোহ সামুই এর মত একটি দূর্ববর্তী দ্বীপে আপনি সব কিছু পেয়ে যাবেন। তবে যে স্টোরটি সব থেকে উপকারী সেটা হল 7-11। এই 7-11 আপনি থাইল্যান্ডের সব খানে পেয়ে যাবেন। সব কিছু পাওয়া যায় এখানে। চা-কফি থেকে শুরু করে সকাল, দুপুর, রাতের খাবার। এখানকার পেস্টি গুলো দারুন। এছাড়া নিত্য প্রয়োজনীয় সকল দ্রব্যাদি এখানে পেয়ে যাবেন। মোবাইলের সিম থেকে সিগারেট সব কিছু। আর দাম কিছুটা কম পাবেন।

কোহ সামুই

আমরা 7-11 থেকে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে হোটেলে চলে আসলাম। ব্যাগ গুছিয়ে রিসিপশনে চলে এলাম। কারণ দুপুর ১:৩০ এ আমাদের জন্য গাড়ি আসবে। সেই গাড়ি আমাদের বাস স্ট্যান্ডে নামিয়ে দেবে। বাসে করে আমরা আজ ব্যাংককের উদ্দেশ্যে রওনা হবো। বাস ৩:৩০ এ। ব্যাংককে পৌঁছবে কাল ভোর ৫/৬ টায়। মাঝে আমাদের ফেরি পার হতে হবে। আমাদের বাস ৩:৩০ এ ছেড়ে দিল। বাস স্ট্যান্ড টা বেশ পরিস্কার। বাসস্ট্যান্ডও বেশ ভাল। এসি বাস সাথে পানি, জুস আর কেক দিয়েছে খাবার। বাস ৪ টার দিকে ফেরি ঘাটে আসলো। আমরা ফেরিতে উঠে বসলাম। তারপর ফেরি Don Sok ঘাটে এলো ২ ঘণ্টা পর।

কোহ সামুই

এরপর আমরা আবার সেই বাসে উঠে রওনা হলাম। বাস রাতে ডিনারের জন্য দাঁড়ালো একবার। ভোরে যখন আমরা ব্যাংকক পৌঁছলাম। তখন প্রায় ৬ টা বাজে। ব্যাংককে ২টি বাস স্ট্যান্ড আছে। একটা সাউদার্ন বাস স্ট্যান্ড আর একটা মোচিত বাস স্ট্যান্ড. মোচিত খুব জনপ্রিয় এবং সুন্দর বাস স্ট্যান্ড সব রকম সুবিধা সম্পন্ন এই বাস স্ট্যান্ডটি মনে হবে কোন এয়ারপোর্ট. আমরা এখানে কফি খেয়ে হোটেলে রওনা হলাম। এক্সিট গেট দিয়ে বের হলেই ট্যাক্সি স্ট্যান্ড.  সিরিয়াল অনুযায়ী সবাই ট্যাক্সি ভাড়া করছে। দেখে খুব বাল লাগল। আজ এবং কাল আমরা ব্যাংকক ঘুরব। আমাদের ব্যাংকক ঘুরবার রোমাঞ্চকর গল্প শোনার আমন্ত্রণ রইল।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp

অন্যান্য লেখা গুলো পড়ুন