হোক ইচ্ছের বহিঃপ্রকাশ...

আমরা কবে সহনশীল হবো

রিক্সায় করে দুজন যাত্রী যাচ্ছেন। হটাত দুজন ব্যক্তি এসে জিজ্ঞাসা করলেন কোথায় যাচ্ছেন? কেন যাচ্ছেন?। আরও কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করে তাঁদের ছেড়ে দেয়া হল।

এর পরে একজন ব্যক্তি হেঁটে যাচ্ছেন, তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে মোবাইল দেখতে চাওয়া হল। মোবাইল চেক করে তাঁকে ছেড়ে দিল।

আজকের ১৫ আগস্টের ধানমন্ডি এলাকার চিত্র। চিত্রগুলো কি পরিচিত মনে হচ্ছে? আগের সরকারের আমলে আমরা এসব দেখেছি। মানুষের মোবাইল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রোফাইল চেক করে তাঁর বিচার করা হতো। তাঁকে হয়রানি করা হতো। আজকে যারা এসব করেছেন তাঁরা সরকারের কোন বাহিনী বা সংস্থা নয়। তাঁরা কোন অধিকার বলে এসব করছেন, আমার জানা নেই।

এখন প্রশ্ন হল, কেন অন্য একজন মানুষ আমার মোবাইল চেক করাবে? ব্যক্তির মোবাইল খুব ব্যক্তিগত একটি জিনিস, সেটা চেক করার অধিকার তাঁদের কে দিল? আমি কোথায় যাব সেই প্রশ্নের উত্তর কেন আমি আর একজনকে দিতে বাধ্য? এটা কি মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়? বর্তমান সরকারে অনেক উপদেষ্টা মানবাধিকার কর্মী হিসেবে সমধিক পরিচিত। তাঁরা মানুষের অধিকার নিয়ে সারা জীবন কাজ করেছেন। তাঁরা ব্যাপার গুলো কেন খেয়াল করলেন না? কেন এসব নিয়ে প্রশ্ন তুললেন না? কেন ব্যবস্থা নিলেন না? কেউ যদি ফুল নিয়ে কারো প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে যায় সেখানে বাধা দেবার কি আছে? এটা কি তাঁর রাজনৈতিক অধিকার নয়? গতকাল কিছু মানুষ ধানমন্ডিতে মোমবাতি প্রজ্বলন করেছেন, সেখানে শুনলাম হামলা করা হয়েছে। এসব কি আমাদের পূর্বের স্বৈরাচারী সরকারের আচরণ গুলো মনে করিয়ে দেয় না?

আপনি হয়তো ভাবছেন, এ আর এমন কি, কাউকে তো প্রাণে মেরে ফেলা হয় নি। মনে রাখা দরকার, স্বৈরাচারিতার শুরুই হয় নার্সিসিজম দিয়ে। আজ মুখে কথা বলে বাধা দিয়েছে, কাল লাঠি দিয়ে মাইর দিবে, পরশু হত্যা করতে দ্বিধা করবে না। আমরা এসব পূর্বে দেখেছি। যে ছাত্রলীগ আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে গৌরবজনক ভূমিকা রেখেছিল, সেই সংগঠন পূর্বের কর্তৃত্ববাদী সরকারের আমলে কেমন সন্ত্রাসী বাহিনী হয়ে উঠেছিল। এসব একদিনে হয় না। ধীরে ধীরে এমন দানব তৈরি হয় আর এই দানব আমরাই তৈরি করি। একাত্তরে বঙ্গবন্ধু আমাদের মহানায়ক ছিলেন। কিন্তু সেই আবেদন তিনি ধরে রাখতে পারেন নাই। মাত্র চার বছরে তাঁর নির্মম পতন হয়েছিল। মানুষের বাকস্বাধীনতা আর মানবাধিকার হরণ করে যে বেশি দিন ক্ষমতায় থাকা যায় না তার প্রমাণ তো আমরা কিছু দিন আগেই দেখলাম। মনে রাখা প্রয়োজন, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি অবধারিত।

মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা সব সময় আইন করে বাস্তবায়ন করা যায় না। এসব চর্চার বিষয়। জীবনের সকল পর্যায়ে অনুশীলন করতে হয়। তবেই এগুলো সমাজের মানুষের দ্বারা পালিত হয়ে সংস্কৃতির অংশে পরিণত হয়। গদির সামনের চেয়ার গুলোতে বসলে আমরা সব সত্য পরিস্কার দেখতে পাই। পট পরিবর্তন হয়ে গিয়ে গদিতে বসলে আমরা অনেক কিছু দেখতে পাই না বা না দেখার ভান করি। আশা করি আমাদের নতুন বাংলাদেশের দিশারীগণ এমন নন।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp

অন্যান্য লেখা গুলো পড়ুন