হোক ইচ্ছের বহিঃপ্রকাশ...

হুজুগে ভারত বিরোধিতা কতটুকু যৌক্তিক?

আমরা মনে হয়, সঠিক তথ্য না জেনেই আমরা হুজুগে ভারত বিরোধিতা করছি । শ্রদ্ধেয় ডঃ ইউনূস যেমন বলেছেন, পুরো বাংলাদেশ একটি পরিবার, তেমনি ভাবে পুরো বিশ্বকে একটি পরিবার হিসেবে ভাবতে শিখি। সকল তর্কের উর্ধে উঠে আমরা মানুষের পাশে দাঁড়াই, ভেদাভেদ ভুলে আমাদের সকলের উচিত এখন বন্যার্তদের সাহায্য করা ।

বাংলাদেশে ও ত্রিপুরা রাজ্যের ওপরে যে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি ও বন্যা হলো, তার জন্য আবহাওয়া সম্পর্কিত চারটি প্রধান কারণ উল্লেখ করা হয়েছে প্রাথমিক তথ্য বিশ্লেষণ করে। ১. এল-নিনো ২. মেডেন-জুলিয়ান দোলন বা সংক্ষেপে এমজেও ৩. জেট স্ট্রিম ও ৪. বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট মৌসুমি লঘু চাপ। আবহাওয়াসম্পর্কিত এই চারটির প্রতিটিই কারণই পৃথক পৃথকভাবে যথেষ্ট বৃষ্টিপাত ঘটানোর জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়। এই ভয়াবহ বন্যাতে বাংলাদেশ যেমন বিপর্যস্ত তেমনিভাবে আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রের অসংখ্য মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আছেন।

আমাদের দেশের এই ভয়ানক বন্যা নিয়ে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের কিছু বিশ্লেষণ সংক্ষেপে উল্লেখ করলাম।

আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামালের মন্তব্য, “বাংলাদেশের মানুষকে ভারী বৃষ্টির এই পূর্বাভাস জানাতে ব্যর্থতার জন্য পুরোপুরি দায়ী বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। কেন বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এই পূর্বাভাস দিতে ব্যর্থ হলো, সেই ব্যাখ্যা বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদদের কাছে জানতে চাওয়া উচিত বাংলাদেশ সরকার ও গণমাধ্যমকর্মীদের” (সুত্র প্রথম আলো)

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, “এই বন্যার একটি কারণ হিসেবে ভারতের ত্রিপুরার ডম্বুর বাঁধের গেট খুলে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে; কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, পানি বেড়ে গেলে গোমতী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ওই স্লুইসগেট স্বয়ংক্রিয়ভাবেই খুলে যায়। পানি কমলে তা আবার স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়।” (সুত্র প্রথম আলো)

বুয়েটের পানি ও বন্যা গবেষণা ইনস্টিটিউট অধ্যাপক মাসফিকুস সালেহীন বলেন, “এবারের বন্যার একটি বড় কারণ হচ্ছে অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে লঘুচাপের কারণে এবার প্রবল বর্ষণ হয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে দেশের অভ্যন্তরের বৃষ্টি।

বন্যা পরিস্থিতির অবনতির পেছনে আরেকটি কারণ আলোচনায় এসেছে। বলা হচ্ছে, ভারতের ত্রিপুরার ধলাই জেলায় গোমতী নদীর ওপরে থাকা ডুম্বুর ড্যামের ফটক খুলে দেওয়ার কারণে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে বন্যা হয়েছে। কিন্তু শুধু এই ড্যামের ফটক খুলে দেওয়ার কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, এ রকম উপসংহারে যাওয়া ঠিক হবে না। যে বাঁধের কথা বলা হচ্ছে, তা বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে। এটির তুলনামূলক আকার, পানি সংরক্ষণের ক্ষমতা, দূরত্ব ও কৌশলগতভাবে ছেড়ে দেওয়া পানির পরিমাণ এবং ক্যাচমেন্টজুড়ে প্রবল বৃষ্টি বিবেচনায় নিলে প্রতীয়মান হয় যে ক্যাচমেন্টে কী পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে, সেটিই বাংলাদেশের সীমানায় বন্যার প্রবাহকে নির্ধারণ করেছে। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে ফেনী নদীতে কোনো ড্যাম নেই এবং নদীগুলোয় যে কয়েকটি ব্যারাজ আছে, সেগুলো বন্যায় কোনো ভূমিকা রাখেনি। কারণ, ব্যারেজগুলোর সব ফটক এ সময় খোলা ছিল।

উজানের দেশ হিসেবে ভারতের তথ্য দেওয়া দরকার। একসময় আমরা সেভাবে তথ্য পেতাম না। তবে এ কথা স্বীকার করতে হবে যে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় ৮–১০ বছর ধরে ভারতের অনেকগুলো পানি পর্যবেক্ষণ স্টেশন থেকে বাংলাদেশকে তথ্য সরবরাহ করা হয়।” (সুত্র প্রথম আলো)

আমাদের সীমাবদ্ধতা ছিল বন্যার পূর্বাভাস সঠিকভাবে দিতে না পারা। এটা আমাদের আবহাওয়া অধিদপ্তর এর ব্যর্থতা। আমাদের তাঁদের প্রশ্ন করা উচিত। সঠিক পুর্বাভাস পেলে মানুষ প্রস্তুতি নিয়ে অন্যত্র বা আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে পারতেন। আমাদের আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরাও কিন্তু বলেছেন, এই বন্যার মুল কারণ উজানে অতি বৃষ্টি এবং এতদিনের নদী দখলের এবং নদী ভরাটের কারণে নদীতে প্রয়োজনীয় নাব্যতার অভাব। আমাদের নদী কমিশন এবং নদী রক্ষা কমিশনকে কার্যকর করতে হবে এবং নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় রাখার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। নদীর স্বাভাবিক নাব্যতা থাকলে এত বিপুল পরিমাণ এলাকা প্লাবিত হতো না। বর্তমানের ভয়াবহ বন্যার ব্যাপারে ভারতের কেন্দ্রীয় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে কোনো বিশেষ সতর্কবার্তা বাংলাদেশকে দেওয়া হয়নি। এ ব্যাপারে দুই দেশের মধ্যে তথ্য বিনিময়ের বাধ্যবাধকতাসহ চুক্তি হওয়া উচিত।

গুটিকতক ভারতীয় হলুদ সাংবাদিক, নীতিহীন মিডিয়া আর তাঁদের সরকারের অশুভ কিছু শক্তির বাহিরেও কিন্তু ভারতের অসংখ্য সাধারণ মানুষ আছেন যারা আমাদের পাশে ছিলেন, ভালোবাসা দিয়েছেন এবং আশা করি ভবিষ্যতেও দেবেন। ব্যক্তিগতভাবে আমার অনেক ভারতীয় বন্ধু, পরিচিতজন আছেন। তাঁরা সব সময় আমাদের প্রতি সহানুভূতিশীল। সাম্প্রতিক জুলাই গণ অভ্যুত্থানের সময় আমাদের জন্য বিচলিত ছিলেন তাঁরা। অনেক ভারতীয় কিন্তু আমাদের সমর্থনে কথা বলেছেন। তাই আসুন আমরা ঘৃণা, বিদ্বেষ, অস্থিরতা না ছড়িয়ে ভালোবাসা, সৌহার্দ, ভাতৃত্ব, শান্তির চর্চা করি। হিংসার পথে না গিয়ে আমরা বরং পারস্পরিক বন্ধুত্বের হাত বাড়াই।

সৃষ্টিকর্তা আমাদের সকলকে এই দুর্যোগ থেকে রক্ষা করুন।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp

অন্যান্য লেখা গুলো পড়ুন