হোক ইচ্ছের বহিঃপ্রকাশ...

মাথায় কিছু প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে

আকস্মিক ভাবে ফ্যাসিবাদ বিরোধিতা থেকে মুজিববাদ বিলোপের এই ঝোঁক কেন?

মুজিববাদ আসলে কি? শেখ মুজিব কি কোন “বাদ” প্রবর্তন করে গিয়েছিলেন?

আমাদের সংবিধান নাকি দলীয়, শঙ্কা করছি কোনদিন মুক্তিযুদ্ধকে না আবার অস্বীকার করে বসি আমরা। নতুন করে নাকি সংবিধান লিখতে হবে। কিন্তু দেশের মানুষ কি এই সরকারকে নতুন সংবিধান রচনার জন্য মেন্ডেট দিয়েছে?

যাই হোক, এমনিতেই আমার মাথায় বুদ্ধিশুদ্ধি কম, বোকা-সোকা মানুষ, এসব ভেবে কি হবে। দেখেন আপনারা যা ভাল মনে করেন। আমি বরং নীল সাগরের ঢেউ দেখি।

কিন্তু নীল জলের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে আবার কিছু চিন্তা মাথায় এলো। বেকুব মানুষের বোকা-সোকা চিন্তা আর কি!

দেশে এখন নিষিদ্ধ, বাতিল, পদত্যাগের হুজুগ চলছে। এটা অবশ্য নতুন কিছু না। দেশের ইতিহাসে এমন ঘটনা অনেক ঘটেছে। একাত্তরে নিষিদ্ধ হয়ে সাতাত্তরে আবার কার্যক্রম চালু করেছে। নতুনরা এসে পুরনো সব কিছু বাতিল করে দেয়। অপছন্দনীয় সব কিছু নিষিদ্ধ করার প্রবণতা দেখা যায়। প্রকৃতপক্ষে নিষিদ্ধ করে কোন মত, পথ, বিশ্বাস বা আদর্শ বন্ধ করা যায়নি কখনও, ভবিষ্যতেও যাবে না বলে মনে হয়।

পরিতাপের বিষয় হল, বিগত স্বৈরাচারী সরকার প্রধান তাঁর নিজ স্বার্থসিদ্ধির জন্য সকল কিছুর অপব্যবহার করেছেন। তিনি শুধু দেশকে, দেশের মানুষকে ধ্বংস করেন নাই, তিনি তাঁর রাজনৈতিক দলকে, দলের সকল অঙ্গসংগঠনকে, দলের নেতা-কর্মীদের ধূলিসাৎ করে দিয়ে পালিয়ে গেছেন। তিনি নিজের স্বার্থের জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বঙ্গবন্ধু, প্রগতিশীলতা, ধর্মনিরপেক্ষতা, উদারনৈতিকতাকে পুঁজি করে গেছেন বছরের পর বছর। নিজের ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে আমাদের অনুভুতি নিয়ে ব্যবসা করেছেন। আজ “সুশীল” যেন একটা গালি হিসেবে পরিচিত সমাজে। প্রগতিশীলতা, ধর্মনিরপেক্ষতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বঙ্গবন্ধু, বুদ্ধিজীবী এসব যেন ফ্যাসিবাদের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আজ দেশে চলমান সকল অস্থিরতার এই দায় বিগত সরকার প্রধানকে নিতে হবে এবং ইতিহাসের কাছে একদিন জবাবদিহি করতে হবে। বিজয়ীদের হাতে ইতিহাস লিখিত হয়। বিজয়ীদের গুণ-গাঁথা সেখানে লিপিবিদ্ধ থাকে। তবে কালের পরিক্রমায় ইতিহাস তার নিজের গতিতে বহমান। আমরা যতই একে নিজের অনুকূলে আনার চেষ্টা করি না কেন, ইতিহাস সত্য পথ খুঁজে নেবে অবধারিতভাবে। ।

আমি আশা করেছিলাম তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাবো। জ্ঞানে, মেধায়, যুক্তিতে, প্রগতিতে আগ্রসর হবো।

আমাদের কত রকম বাস্তব সমস্যা আছে, তরুণদের কর্মসংস্থান, ব্যবসার নতুন উদ্যোগ, দর্শনের নতুন অধ্যায় উন্মোচন, গবেষণায় মনোনিবেশ, কত কত সৃষ্টিশীল কাজ আছে জগতে। পৃথিবী জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রযুক্তিতে কোথা থেকে কোথায় চলে যাচ্ছে। আর আমরা সেই পুরনো তর্কে আটকে আছি। সেই পূরনো সংবিধান, মূলনীতি, স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্ব, জাতীয়তাবাদ তর্কে লিপ্ত হয়ে দেশকে বিভক্ত করেছি গত ৫৩ বছর, এখনও মনে হচ্ছে একই পথে আমরা ধাবমান, সেটাই কাম্য নয়। সেই ব্রিটিশ সহ সকল শাসকেরা চেয়েছে আমাদের মাঝে বিভক্তি তৈরি করে শাসন করতে। কারণ তাঁরা জানতো আমাদের প্রগতি রোধ করা সম্ভব আমাদের মাঝে ভেদ তৈরি করে। তাঁরা কখনও চায়নি আমরা একত্রিত হয়ে সামনে এগিয়ে যাই। এখনও সেই একই প্রক্রিয়া বা ষড়যন্ত্রের বলি হতে যাচ্ছি মনে হয়। একতাবদ্ধ হলে আমরা উন্নতি করব। আর সেটাই হয়তো কেউ কেউ চায় না। তাঁরা আমাদের মাঝে নানা বিষয় নিয়ে এসে আমাদের বিভক্ত করতে চায়, যেন আমরা নিজেদের মধ্যে হানাহানি করে নিজের সকল শক্তির অপচয় করি। আর তাঁরা এই ক্ষেত্রে সফল। আমরা বরাবর নিজেদের মাঝে হানাহিনি করে সময়, মেধা এবং শক্তি খরচ করি যা দুঃখজনক।

তারপরেও প্রত্যাশা করি দেশে সত্য প্রতিষ্ঠিত হবে। প্রতিহিংসার এই দুষ্টুচক্র থেকে আমরা বেড়িয়ে আসবো। একটি যুক্তিবাদী, বিজ্ঞানমনস্ক, প্রগতিশীল সমাজ গঠন হবে যেখানে সকলের অধিকার থাকবে স্বপ্ন দেখার।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp

অন্যান্য লেখা গুলো পড়ুন