হোক ইচ্ছের বহিঃপ্রকাশ...

ইউনূস সরকার কোন পথে?

ডঃ মুহাম্মদ ইউনূস একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মানুষ। আমাদের সকলের কাছে শ্রদ্ধেয় একজন ব্যক্তিত্ব। মেধাবী এই মানুষটি যখন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হলেন স্বাভাবিক ভাবেই আমরা অনেকেই অনেক আশাবাদী হয়েছি।

আজ ১৫ আগস্ট, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী। পঁচাত্তরের পর আওয়ামী লীগ সরকার ছাড়া কোন সরকার এই দিনটি রাষ্ট্রীয় ভাবে পালন করতো না। কারণ তাঁরা বঙ্গবন্ধুকে আওয়ামী লীগের ভাবতো বোধকরি। তবে প্রশ্ন হল, বঙ্গবন্ধু কি আসলেই কোন বিশেষ দলের সম্পত্তি? এমন তো হবার কথা নয়। বঙ্গবন্ধু’ কোন দল নির্ভর নন, বর্তমান নির্ভর নন, তিনি ইতিহাস। জয়বাংলা ধ্বনি যেমন কোন দলের ছিলো না। তেমনি বঙ্গবন্ধু কারও একার না। বঙ্গবন্ধু কারোর পারিবারিক সম্পত্তি না। বঙ্গবন্ধু ছাড়া বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ অসম্ভব ছিল, এটা আমি-আপনি না চাইলেও চিরসত্য। ডঃ মুহাম্মদ ইউনূস চাইলে এই নতুন বাংলাদেশে একটি অনন্য উদাহরণ তৈরি করতে পারতেন। দুঃখজনক তিনি সেটা করতে পারলেন না।

আমি “শোকাবহ আগস্ট” বা “শোক দিবস” এসব পালনের কথা বলছি না। শোক দিবস, তেহারি-খিচুরি পার্টি বা ছুটি না দিয়েও রাষ্ট্রীয় ভাবে তাঁকে স্মরণ করা সম্ভব ছিল। তিনি জামায়াতে ইসলামের কাছে দেশ গঠনের পরামর্শ নিলেন। কিন্তু জাতির জনকের মৃত্যু দিনে একটা শোক বিবৃতি দিতে পারলেন না। বঙ্গবন্ধু অবিসংবাদিত নেতা ছিলেন, তাঁর সম্মানটা তো তাঁকে দিতে হবে। তাঁকে সম্মান না দিতে পারলে জাতি হিসেবে এটা আমাদের নিজেদের লজ্জার। আমরা দেশ গড়ার কারিগর হিসেবে শুধু মেধাবী মানুষ চাই না, আমাদের ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মানুষও চাই।  কারণ সহনশীলতা, সহমর্মিতা, সাম্য, ঐক্য, শ্রদ্ধা বাদ দিয়ে বৈষম্যবিরোধী সমাজ প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব।

কিছুদিন আগে আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডঃ মুহাম্মদ ইউনূস আমাদের সনাতন ধর্মের নেতাদের সাথে আলোচনায় বসেছিলেন। তাঁদেরকে তিনি খুব চমৎকার কিছু কথা বলেছেন। তাঁর বক্তব্যের মূল কথা ছিল আমরা বাংলাদেশের মানুষ সকলে মিলে একটি পরিবার। আমাদের সবচেয়ে বড় পরিচয় হল আমরা মানুষ আর মানুষ হিসেবে আমাদের সকলের অধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমেই ন্যায়বিচার এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। খুব সুন্দর কথা। তাঁর মত ব্যক্তিত্বের কাছে আমরা এমন উদারনৈতিক বক্তব্য প্রত্যাশা করি।

কিন্তু তিনি কি একটু ভেবে দেখেছেন কেন সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষেরা “হিন্দুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা” এর ব্যাপারে উদ্বিগ্ন? কেন এই “আমরা” আর “তাঁরা” এর মাঝে বিভাজন উদ্ভব হলো।  আমাদের রাষ্ট্র কি এ ব্যাপারে কিছুটা দায়ী না? রাষ্ট্রর কিছু কার্জকলাপ এই বিভাজনকে প্রকট করে মানুষের সামনে। যখন কোন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে কোন একটি বিশেষ ধর্ম গ্রন্থ থেকে পাঠ করা হয়, বা শপথ বাক্য পাঠ করানোর পূর্বে কোন বিশেষ ধর্মের দোয়া পড়া হয়, তখন অন্য ধর্মের মানুষ তো মনে করবে একটি বিশেষ ধর্ম কে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে, আমার বিশ্বাস বা ধর্ম কে এখানে প্রাধান্য দেয়া হল না। আমি বোধকরি এখানে দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিক। “আমার” বোধ করার পরিবেশটা এখানে ধ্বংস হয়ে যায়। আর অপর ধর্মের মানুষ মনে করে এখানে আমি সংখ্যাগরিষ্ঠ। এই রাষ্ট্র আমার, বাকিরা আমার অনুকম্পার পাত্রপাত্রী। তাঁদেরকে আমার পাহারা দিয়ে রাখতে হবে। রাষ্ট্রে এক ধর্মের মানুষকে আর এক ধর্মের মানুষ দ্বারা পাহারা দিয়ে রাখাটা খুব একটা সুখকর বিষয় নয়। রাষ্ট্রের বা সরকারের এমন কাজকর্ম বিভাজন সৃষ্টি করে। আমরা আশা করব ডঃ মুহাম্মদ ইউনূস রাষ্ট্রের এই বিভাজন তৈরির প্রক্রিয়াকে বন্ধ করবেন।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp

অন্যান্য লেখা গুলো পড়ুন