আমি এমন একটা সময়ের কথা বলছি যখন সারা বিশ্ব করোনার ডেল্টা ধরন দ্বারা ভীষণ ভাবে আক্রান্ত। লাখ-লাখ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে আর হাজার-হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। ইচ্ছে করলেও প্রিয়জনের পাশে কেউ থাকতে পারছে না।
হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছেন এক ভদ্রমহিলা । তার শরীরের অবস্থা মোটেই ভাল না । তাকে অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে। মাঝে মাঝেই তার জ্বর আসছে। কিছু খেতে পারছেন না। অনুমান করা হচ্ছে তার করোনা হয়েছে। টেস্ট করতে দেয়া হয়েছে, এখনও রিপোর্ট হাতে আসেনি। তার ছেলে পাশে বসে আছে। দিনের বেলা ছেলেটা হাসপাতালে সারাদিন বসে থাকে, রাতে তার বোন এসে মার সাথে থাকে। দুপুরবেলা ছেলেটিকে একবার বাসায় যেতে হয় খেয়ে আসার জন্য, খেয়ে সে আবার চলে আসে। দিন কয়েক হল এভাবে চলছে। একদিন দুপুরে খাবার সময় হয়েছে তাই ছেলেটি যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ছেলেঃ আম্মা, আমি খেয়ে আসি
মাঃ তুই যে প্রতিদিন এভেবে যাওয়া-আসা করিস, রিক্সা ভাড়া লাগে না?
ছেলেঃ লাগে তো
মাঃ আমার ব্যাগেটা দে তো
ছেলেঃ কেন?
মাঃ তোকে রিক্সা ভাড়া দেব
ছেলেঃ আমার কাছে টাকা আছে তো
মাঃ তোর অনেক টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে, আমার কাছে নিয়ে যা এখন, আমি কাউকে বলব না তো।
ছেলেটা কিছু বলতে পারে না, শুধু মার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। এমন অসম্ভব শারীরিক কষ্টের মধ্য দিয়ে যে মানুষটি যাচ্ছে, সে নিজের কোন কষ্টের কথা চিন্তা করছে না, চিন্তা করছে তার ছেলের কষ্টের কথা। এই মহানুভবতা, এমন নিঃস্বার্থ ভালোবাসা শুধু মাদের পক্ষেই সম্ভব।
উপরে উল্লেখিত বয়স্ক মহিলাটি আমার মা, আর ছেলেটি আমি।
যারা করোনার ডেল্টা ধরনে আক্রান্ত হয়েছেন তাঁরা জানেন কি অসম্ভব শারীরিক কষ্টের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। আমি নিজে একজন ভুক্তভোগী, তাই আমি জানি এই শারীরিক কষ্ট কেমন। হাসপাতালে থাকার পুরোটা সময় আমার মা আমাদের কথা চিন্তা করে গেছেন। হাসপাতালে থাকা অবস্থায় তার কিছু কথাঃ
“রকিবটা কেমন আছে? ও দ্রুত ভাল হয়ে গেলে আমি নিশ্চিত। আমার কি, আমার বয়স হয়েছে।“(রকিব ভাই আর তার পরিবার তখন করোনায় আক্রান্ত।)
“তুই তো মশারি ছাড়া ঘুমাতে পারিস না, রুদ্রকে বলবি ও মশারি টাঙ্গিয়ে দেবে ।” (তখন আমি আপার বাসায়)
“পাপ্পু এতো দূর থেকে আসলো, ওর অনে খরচ হয়ে গেলো।”
“সামনে পহেলা বৈশাখ, তানিয়া তো ইলিশ মাছ পছন্দ করে, ওর জন্য ইলিশ মাছ দিয়ে দেব।“
“আমি টাকা দিচ্ছি, তুই যাওয়ার সময় ৫ কেজি গরুর মাংস কিনে নিয়ে যাস, আর ১ কেজি রুদ্র-রোদসী কে কিনে দিস”
“তোর লোনের টাকা শোধ হয়েছে?” (আমি ব্যাংক থেকে কিছু লোন নিয়েছিলাম, আম্মার সেটা নিয়েও চিন্তিত)
মা শুধু এই সময়ে না, সারা জীবন শুধু তার ছেলেমেয়েদের কথা চিন্তা করে গেছেন। আজ প্রায় ১০ মাস হতে চলেছে মা আমাদের মাঝে নেই। মা ছাড়া থাকতে হবে কখনও ভাবিই নি। মা যখন আচমকা চলে গেলেন, খুব অসহায় লাগছিল। মনে হচ্ছিলো আমার সমস্ত আশ্রয় নিঃশেষ হয়ে গেলো।
মার সাথে আমার সম্পর্কটা অনেকটা বন্ধুর মতো ছিল। তার সাথে ঝগড়া করতাম, তর্ক করতাম। আব্বা-আম্মা দুজনেই আমাকে খুব প্রশ্রয় দিতেন। ছোট ছেলে বোধহয় অথবা কিছুটা একরোখা বলে হয়তো। অনেক অন্যায় আবদার মেনে নিয়েছেন।
মার উপস্থিতির অভাব আমি বোধ করি না। কারণ তাকে সব সময় অনুভব করতে পারি। রাতে যখন পানি খেতে উঠি, মনে হয় মা পাশের ঘর থেকে আমাকে দেখছেন আর মিটি-মিটি হাসছেন। বিছানায় এসে যখন ঘুমাই, আমি অনুভব করি মা মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। ভোরে প্রায় মনে হয় আব্বা আমাকে ডেকে বলছেন, “নামাজ পড়” (আব্বা মারা যাবার আগের রাতে আমি তার সাথে ছিলাম, ফজরের ওয়াক্তে তিনি নামাজ পড়ার জন্য তাওয়ামুম করলেন, আমাকেও নামাজ পড়তে বললেন। এতো অসুস্থতার মাঝেও আব্বা কে আমি কোন দিন নামাজ বাদ দিতে দেখিনি)। আব্বা-আম্মা কে অনুভব করার জন্য আমার কোন পার্থিব বস্তুর দরকার পরে না, আমার স্মৃতিতে, আমার মগজে তাঁরা বিরাজ করছেন সবসময়। পরম করুণাময় আল্লহ তাদের শান্তি দান করুন। এই লেখাটা আমার মা লিখেছিলেন তার আমেরিকা ভ্রমণের সময়। তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এখানে লেখাটি প্রকাশ করলাম।
পাপ্পু আমর বড় ছেলে আমেরিকায় চার বছর পড়াশুনা কওে পিএইচডি পাশ করে ওয়াশিংটনে সেভ-ডা-চিলড্রনেে চাকুরী নেিয় জুটিয়ে বলেছে। স্বপরিবারে থাকে, দুই ছেলে আর ওরা দুইজন, প্রায়ই বলে মা আসনা আমার এখানে বেড়ায়ে যাও।
সেদিন হঠাৎ টেলিফোন পাপ্পু বললো মা সামনে ঈদ; গ্রীষ্মের বন্ধ এবার তোমাকে আসতে হবে। আমার পাসর্পোট করাই ছিলো। ভিসা অফসিে দাঁড়াতে বললেন, কোথায় যাবেন? কার কাছে যাবেন? কার টাকায় যাবেন? ছেলে কি করে কোথায় থাকে? চটপট উত্তর দিলাম, পাঁচ বছরের ভিসা হয়ে গেল ।
কি আর করার অন্য ছেলে মেয়েরা বলল, যাওনা বড় ছেলে এত করে ডাকছে। ৩০ শে মে ভোর ৬টায় প্লনে ছাড়বে । আমার দেবরের ছলেে রনি তারও যাওয়ার কথা । একই দিনে যাবে । আমার মেজছেলে রাকিব, ছোট ছেলে রাজিব, মেয়ে সিমকী আদরের নাতনী রায়া, বৌমা সবাই বলল মা যাও দেশ দেখে আসো ।
দোয়া দরুদ পড়ে, আমরা রাকিব,রাজিব, রনি আমি গেলাম এয়ারপোর্ট । আমারা কছিুক্ষণ অপক্ষো করে ভিতরে ঢুকে গেলাম । মনটা খুব খারাপ সবাইকে ছেড়ে দূর দেশ আমেরিকায় যাচ্ছি । পাপ্পু, কেকা, রিভ‚, ঋষি সবাই খুশি এবার দাদী, মা এক সঙ্গে ঈদ করব খুব মজা হবে ।
প্লেেন ওঠার আগে কয়কেবার চেক করল, প্লনেে উঠলাম, বেল্ট বঁেধে রনি বলল চাচী ভাল করে বসনে ।
প্লনে উড়ছে নীচের ঘরবাড়ী সব ছোট হয়ে যাচ্ছে । সূর্যি মামা দিনের আলো দিয়ে চলছে । প্লনেে সকালে খাবার দুপুরের খাবার রাত যে কখন হলো বুঝলাম না, প্লনে বদল হল কিন্তু রাত আর না? প্লনে কখন উঠে কখনও নামে তুলার মতো মেঘের ভতির দিয়ে যায় । আলোছায়ার মধ্যে প্লনেরে সংকেত দিল আমেরিকায় এসে গেছে, প্নেন থামল ।
যে যার পাসর্পোট দখেয়িে আমরা সুটকেস নেবার আশায় দাঁড়য়িে থাকলাম। রেল গাড়ীর মত সুককেস যাচ্ছে, আমরা বড় বড় তিনটা সুককেস নিয়ে যাচ্ছি । এমন সময় দেখা পেলাম কেকা অন্তরঙ্গ বান্ধবী ফারজানা পাপ্পু, ঋভু, ঋষ।ি ওরা আমাদের জাড়ায়ে ধরে কি যে খুশি। তখন রাত ৮টা, তবুও সূর্যি মামার গন্তব্যে যাওয়ার নিশানা নেই ।
কি আনন্দ বুঝায়ে উঠতে পারবো না, ফারজানা নিজের গাড়ী । আমি আর কেকা তার গাড়ীতে চললাম ।আর পাপ্পু রনি ঋভু গাড়ী নিয়ে যাচ্ছে । পথে যেতে যেতে নানা গল্প কেমন লাগল । পাপ্পুর বাড়ী বেশ বড়, রান্নাঘরও বড় চারচুলার এলাহী কারবার। গ্রলি করার মশেনি, বাসন ধোয়ার মেশিন, কাপড় ধোয়ার মেশিন, ঘর পরিষ্কার করার মেশিন, এসি, গরম পানি, ঠান্ডা পানি কোনটারও অসুবিধা নেই । কাজের লোকের বালাই নেই ।
রাস্তা সব সুন্দর, মাঝে মধ্যে ফুলের সমারোহ। বাড়ীগুলো সারি সার,ি ছোট-ছোট জানালা, প্রত্যেক বাড়ীর বারান্দায় ফুলের ঝুড়ি, সারি সারি গাড়ী যাচ্ছে, গাড়ী আসছে । ছোট ছেলে মেয়ে নিয়ে সাইড রাস্তা দিয়ে গাড়ী করে বাবা মা চলছে । সকাল-বিকাল কোন থামা নেই, পটে আঁকা ছবির মত। পাপ্পু সবার কাছে চাবি দিল , যে যার মত যাচ্ছে আসছে । যার যার খাবার ওভেনে গরম করছে। অমি সকাল বিকাল চাবি ও মোবাইল নিয়ে অনেকদুর হঁেটে আসি । কেকা দুই মাসের ছুটি নলিো। এই ভাবেই চলল দিন । একদনি দোকানে নিয়ে গেল, বাংলাদেশি দোকান,বাজার,মুসলিম হোটেল, বাঙ্গালী খাওয়া চাইনিজ হোটেল সনিমো এত সুন্দর পরিপাটি আর বাজারের তো কথাই নেই, বাংলাদেশের কোনটাই বাদ নেই যা পাওয়া যায় না । আমার কানের মেশিন, ডায়াবটেসি মেশিন, টুকিটাকি সব কিনে দিল ।
এর মধ্যে গেলাম ওয়ুিশংটনে “হোয়াইট হাউজ” দেখতে রওয়া হলাম। গাড়ী যাচ্ছে কখনো জোরে কখেনো আসতে বিরাট জায়গা জুড়েে “হোয়াইট হাউজ”, সামনে স্রোতস্বনিী জলাশয় । অনেক ছবি তোলা হলো, নানা রকম ফুল আমেরিকাবাসি ফুল খুব ভালোবাসে । জর্ড ওয়াশংিটন চেম্বারে গেলাম, যারা দেশ চালিয়েছিল তাদের ছবি ছিল । আর একদিন গেলাম জাহাজে “এমা পনিক” ওখানে জাপানী হোটেলে। ওখান কার খুচুরী ও সালাড খুব মজার । এরপর সালামান খান, সাইফ আলী দুইটা ছবি দেখলাম । কেকার বান্ধবীও তুনা ছিল সাথে । দুই তিনবার করে দোকান শো রুম, বাজার কিছুই পাপ্পু কেকা আমাকে দেখানো ছাড়েনি । এবার বিদায়ে পালা, সামনে রমজান, শুভ বিদায় ।
নিউ ইয়র্কের পথে যাত্রা
সুদ্দুর বাংলাদেশ থেকে এসেছি আমেরিকায় । আমার বড় ছেলে পাপ্পুর বাসায় । সে থাকে বালটিমোরে । তার কর্মস্থল ওয়াসিংটনে । পিএইচডি শেষ করে তার খুব ইচ্ছা মাকে নিয়ে ঈদ করবে । তার দুই ছেলে খুব খুশি, বৌমা কেকা ছেলে পাপ্পু। । বৌমা খুব মিষ্টি মেয়ে, রোজা আসার আগে ঠিক হল চল নিউইয়র্ক যাই, ভাবলাম এসেছি যখন বেড়াই না কেন?
সবঠিকঠাক আমরা চারজন । দুই দিন থাকব । পাপ্পু গাড়ী নিয়ে যাবে । বাসায় সব রান্না করে তবে না যাওয়া। পাপ্পু সকাল থেকে তাড়াহুড়ো, সকাল আটটায় মিটিং শেষ করে । গোছগাছ করে রওনা হলাম । মা ওষধ নিয়ছ তো ঋষি বলল দাদু ঠিক আছ? আমি বললাম, দাদু ভাই ঠিক আছি । দোয়া দরূদ পড়ে গাড়িতে উঠলাম । নিউইয়র্কে পাপ্পু গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এ আমার কত বড় ভাগ্য । হঠাৎ কেকা বলে উঠছল হেয়ার মেশিন রেখে এসেছি । একটু ঘোড়াও না, গাড়ী ব্যাক করে আনা হলো, আবার কিছুদূও গিয়ে হোচট খেলো, মনে মনে ভাবলাম কি জানি (অসনিসংকেত)। গাড়ী চলছে ত চলছে । দুই দিকে বনরাজ্য মাঝে গাড়ী চার রাস্তা যাওয়ার, চার রাস্তা আসার, থামার কোন নাম নাই কোন হর্ণ নাই । আমর ভাবতেই অবাক লাগছে । সবাই নিজের কাজে ছুটছে । ছেলে মেয়ের কোন পার্থক্য নেই । ফ্যাশানের বালাই নেই । শুধু ছোট ছোট পেন্ট আর গেঞ্জি বা ফতুয়া পড়ছে । তবে মেয়েরা হর্সটেলা ও বড় বড় কানের দুল পড়েছে । গাড়ী চলছে ত চলছে । দুই দিকে বন কখনো দেখা যাচ্ছে হরণি,ভাল্লুক । মাঝে মাঝে ঘোড়া দেখা যাচ্ছে । গাড়ীতে প্রচুর খাবার পানি । বাইরে খাওয়ার অন্য রকম এক আমেজ । নামলাম প্রয়োজনীয় কাজ সেরে নলিাম। চারদিকের দৃশ দেখে কি যে তৃপ্তি বুঝাতে পারব না। খাবার খেলাম। বেলটা, ডোনাট, মাচাকিং ককো আর ঋষি খলেো। পাপ্পু খেল কফি আমি ঝাল চিপস খেয়ে আবার রওনা হলাম । বিরাট বিরাট পাহাড়ের মাঝ দিয়ে গাড়ী যাচ্ছে । ছোট ছোট বাড়ী দেখা যাচ্ছে । বাড়ীগুলো সুন্দর যেন পটে আঁকা ছবি । আবার সন্ধ্যায় এক কফি বারে নেমে ফুটলাং,সাবওয়ে ও স্যান্ডউইচ খেয়ে ঝিলের পাহাড়ে কাছে কত গুলো ছবি তুলল । মানে হয় ছবি তোলা এক প্রান । সূর্যি মামা হেলে যাচ্ছে । আমরা রাত আটটায় হোটেলে উঠলাম। দরজা কার্ড দিয়ে খুলতে হয় । আমরা তৈরি হয়ে বাঙ্গালি হোটেলে ভাত,মাছ,শাক,মাংস,ডাল খেলাম ভালই লাগলো । হোটেলে চলে আসার সময় এক যুবুতি মেয়ে আমাদের গাড়ীটাকেে ধাক্কা দিল । পাপ্পু ঘাড়ে ব্যথা পেল, কথা কাটা-কাটি পুলিশ ডাকা কি যে অবস্থা ! রাত একটায় হোটেল এ ফিরলাম । পরের দিন আবার গেলাম আমার ননদ (বেদানার বাড়ী) সে ছেলে বৌমা স্বামীকে নিয়ে থাকে । দুপুরের খাওয়া ও বকিলেরে চা শেষ কওে, নিউইয়রকের সর্ব উঁচু (ফ্রিডম টাওয়ার) সামনেই স্রোতস্বনিী লেকরে পার থেকে তাজমহলের মত দাড়িয়ে আছে । সন্ধ্যায় সবকয়টা লাইট জ¦লে উঠল, যেন স্বপ্নপুরী । বেদনা আমাকে একটা ব্যাগ উপহার দিল । আর হতে ডলার দিল । ফিরে গেলাম হোটেলে পর দিন সব গুছিয়ে চলে এলাম আমার গাইবান্ধার এক এলির বান্ধবী ইমনির বাসায় । আমাদেরকে পেয়ে খুব খুশি । রনির বন্ধু তব্বিওি থাকে বৌমাকে নিয়ে নিজের বাড়ী তিনতালা শ্বশুর-শাশুড়ী-ভাসুর সব এক ফ্লাটে থাকে । খুব খুশি । আমাদের থাকতে বলল ইমনি কিছুতেই ছাড়বে না । পাপ্পু বলল ইমনি পরদিন আফিস এ যেতে হবে । মাকে নিয়ে এলাম দেখা হল । ইমনি বাড়ী, তব্বিরি বৌমা, শ্বশুর-শাশুড়ী সবাই আমাদেও শুভ সম্ভাষণ দলি, আমাদের বিদায় জানলো । আমরা পথে নামলাম নিউইয়কের সেই রাতের ঝলক স্মতিরি বুকে মাঝে মাঝে মনে হবে । পথে আমারা রাতের খাবার নিয়ে বাসায় আসলাম । ঋভু আর রনি আছে না ? বিদায় নিউইয়রক, গুড বাই
রমজানের চাঁদ উঠেছে এল খুশির ঈদ
সবার মনে খুশির ছোঁয়া, নাইকে কোন দুঃখ। দেখতে দেখতে পবিত্র মাহে রমজান এসে গেল, প্রথম রোজা সবাই রাখবে । দাদীকে নিয়ে নাত,ি কেকা, পাপ্পু রনি সবার খুব আনন্দ । বৌমা কেকা ইফতারি নানা পদের ফলের তো কাথাই নেই। স্তবরে,ি ব্লুবরে,ি রাসবরে,ি পচি, এপ্রকিট কত রকম ফল। ঋভু নিয়ে এল বাহিরের ইফতারী। খুব মজা করে প্রথম রোজা করলাম । রোজায় আমি কোরআন খতম করলাম । একদিন বাঙ্গালী হোটেলে ইফতার করলাম, গেলাম ৪ঠা জুলাই আমরা । বসিপকে নদীতে আতশবাজি দখেতে আর রোজার ইফতারি করত।ে পাপ্পুর এক মামা উনিও নানা পদের ইফতারি নিয়ে এলনে। মামা-মামি খুবই মজার মানুষ । নিজের বাড়ী বাগান করেছে । যা কিছু হয় কেকাকে না দিয়ে খায় না । রাত ৮টায় নদীর উপর আলোর ঝালকানি দেেখ মনে হল রাত কে এক ঘন্টার দিন করে দিল । লোকে লোকারণ্য খুবই আনন্দ হচ্ছিল । রকবি, রজিব নাত-িনাতনী, মুমু, তানয়িা সবাইকে ছেড়ে এসেছি মনটা এববার খারাপ একবার আনন্দ কি আর কর।ি মনে হয় কত দিন দেখিনা।
রোজা প্রায় শেষ হয়ে এল। ঈদ প্রচুর বাজার কেকা অনকে কছিু করার প্লান করছ।ে নানা জাতীয় মিষ্টি রেজালা, ফ্রাই, চটপটি, পোলাও তো আছেই । ঈদের দিন আমরা সবাই নামাজে গেলাম মহিলারা নানা দেশের এই দিন সবার মাথায় কাপড়। এত ভালো লাগছিলো । বদিশেওে আল্লাহ ভক্ত মানুষ আছে । ঈদের দিন পাপ্পুর অনেক ডাক্তার কলিগ আমাকে ছালাম করলো, ঈদের কোলাকুলি করল । ঈদের পর সব ঈদ দাওয়াত । কত বাসায় যে গেলাম । খুবই আন্তরকি, কত কি নেওয়া হল সবার জন্য । এই করে আমি আমিেরকায় ঈদ শেষ করলাস । ঈদরে পরের মাসে ছয়টা রোজাও করালাম । ঈদ শেষ, রোজা শেষ, বিদায় “খোদা হাফেজ”।
এরপর ছলেে নাতদিরে র্কম ব্যস্ত দনি শুরু হল। দশেে ছলেে ময়েদেরে সাথে রোজ কথা হতো। একদনি প্রতি দনিরে মতো হঠাৎ মোবাাইল বেজে উঠল, পাপ্পু বলল মা ফোন ধরো। ধরে শুনি অপাশ থকেে নাতনী রোদসী বলছ,ে নানু প্রথম কলজেে যাচ্ছ,ি সালাস নিও, দোয়া করো। শুনে এতো ভালো লাগল।
এখানে পাপ্পুর এক পাতানো মামা আছ।ে তনিি একদনি নিতে এসেছিলেন । আমাকে নিয়ে গেলেন সোজা তার বাড়ী সামনে। আমরা তো আবাক একি? দেখি মামী খাবার নিয়ে দাঁড়য়িে আছেন । প্রচুর খাবার সব নেিজর গাছের টমেটো, লাউ, করলা। সাথে মাছ মাংস সব রান্না করে মামা- মামী আমাদেরকে বাড়তিে নয়িে গেল । পাপ্পুর মামা এত উদার আর আন্তরকি, আমার নিজের ভাইও অতটা করে না । মামাও বড় ডাক্তার, মামী চাকুরী কওে, সখোন থকেে একসাথে পার্ক দেখে এলাম । ঘুরে ঘুরে খুবই ক্লান্ত । দুই দিন বিশ্রাম দইে। দেখি পরে কি হয় । আজ তবে আসি । বিদায়
নায়েগ্রা
আষাঢ়ে বাদল নামে ঝরে ঝড় ঝড়
নায়েগ্রার জলরে স্রোতে অঝোড়ে আছাড়।।
সেই নায়েগ্রার পথে পা বাড়ালাম । আমরা বালটেিমার থেকে সকাল দশটায় আমি, কেকা, পাপ্পু, আর রনি রওনা হলাম । এবারও পাপ্পু গাড়ী চালিয়ে নিয়ে গেল, পথ চলতে চলতে চলা আর শেষ নেই । দুই দিকে বন রাজ্য মাঝখান দিয়ে পথ দুই পাশে পাহাড় মাঝে মাঝে আজানা সব গাছ তার মধ্য দিয়ে পাপ্পু আমাদের নিয়ে যাচ্ছে। মাঝে একজায়গায় নেমে কাজ শষেে দুপুরের খাওয়া সেরে আবারো চলা শুরু । বিকালে আলো ছায়া মাঝখান দিয়ে সূর্য্যরশ্নির অন্তমি আলোতে আকাশ যেন আমাদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে । যেন পটে আঁকা ছবি । মাঝে মধ্যে সুন্দর সুন্দর বাড়ী সামনে ফুলের বাগান, আমার মনে হচ্ছিল আমার ছোট ছেলে রাজীব থকলে ছবিগুলো মনের পটে ছুয়ে যেত।
নায়েগ্রা যতই কাছে আসতে লাগল ততই পানির ¯্রােত বাড়তে লাগল । কোথায় যাব, কোন হোটেলে থাকব, কোন গাড়ী নিয়ে যাব সবই নিশানা ছিল । আমরা দূরে এক হোটেল রাতের খাবার খয়েে হোটেলে উঠলাম। তখন বাজে রাত বারোটা । আমরা পরদিন সকাল দশটায় বেরোলাম । গাড়ী ঠিক ছিল দুই দিকে জলরাশি, বেশ কিছুদুর গিয়ে আমরা নায়গ্রা কাছাকাছি এলাম । বিরাট বিরাট জলের প্লাবন। প্লাবনরে মধ্য দিয়ে নায়েগ্রার জলপ্রপাত ঝড়ঝড় করে ঝরে খাচ্ছে । কোথা থেকে এই জল ধারা আসছে কেউ বলতে পারেনা । আমাদের কাছে পানির ছিটা চলে আসছে, সাদা নীল হলুদ রাশ্নি পানির উপর। কাছ থেকে না দেখলে কেউ বুঝতে পারবেনা । কি অদ্ভ‚ত দৃশ্য যে পাহাড় থেকে বরফ ভেঙ্গে ভেঙ্গে পড়ে যাচ্ছে । আকাশ গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি, শীত শীত ভাব, সবার গায়ে গরম কাপড় যে যার মতো খাচ্ছে টুপি কিনছে । কছিুক্ষণ পর আমারা টিকিট কিনে ছোট ছোট জাহাজে চড়ে নায়েগ্রা কাছাকাছি গেলাম, সঙ্গে আমাদেরকে দিল রবারের জুতা ও রেইন কোট । বাতাসে জলের ছিটা, মানুষের ঢল নামছে ছেলে মেয়ে কচি বাচ্ছা প্যাকেট করে কোমড়ে বেধে ছুটছে মজাও লাগল আবার এক জায়গায় রেইন কোট পরে সিড়ি দিয়ে উঠে নায়েগ্রার একেবাওে কাছে গলোম । কত সে নায়্রেগার ছবি মানুষ তুলছ।ে তুলছে ত তুলছেই আর মাঝে মাঝে খাওয়া আছে । এ সুন্দর পরিবেশ সারি সারি যাওয়া কারও কোন বাধা নেই । রপর দেখলাম নায়েগ্রার ছবি । কেমন করে নায়েগ্রার সৃষ্টি হল । বরফের পাহাড় কেটে এই নায়েগ্রার সূচনা আমরা কিছু খেয়ে পানিতে ভিজে হোটলে ফিরলাস। চারিদিকে নদী আর নদীর সামনে কানাডা । হোটেলে আবার তৈরি হলাম আমার (বোন ববেরি ননদ মিনুর বাসায় যাবো) ওরা অপক্ষোয় ছিল । খুবই ভাল আপ্যায়ন করল । মিনু আমাকে জড়ায়ে মধুর সম্ভাষণ জানালো। এখন নায়েগ্রা বিদায় এর পালা।
এরপর তৃষার বাড়ী গেলাম, পথে যতেে খামার দেখলাম, কত গাছে গাছে ষ্ট্রবেরি ব্লবেরি গাছে গাছে ঝুলে আছে । ছোট বড় মিষ্টি কুমড়া, অসংখ্য ভুটার ক্ষতে শাকের ক্ষতে, কিছু ফল কিনে তৃষার বাড়ি গেলাম । নিজের বাড়,ি দুই বাচ্চাকে নিয়ে আমাদের ভালো যতœ করল। ওর শাশুড়ি ছিল, খালা শশুড়ীরা সঙ্গে থাকে। সাবাই মিলে আদর যত্ন করলো অনকে, এরপর বাড়ি ফিরলাম ।