হোক ইচ্ছের বহিঃপ্রকাশ...

মানালির দিনগুলি – পর্ব ০৩

আজ আমাদের মানালি ভ্রমনের ৩য় এবং শেষ দিন। মানালির বিভিন্ন জায়গা ঘুরে আমরা দিল্লীর উদ্দেশ্যে রওনা হব। আজ আমরা ঘুরবো নিকোলাস রোরিচ আর্ট গ্যালারি এবং মিউজিয়াম, নগর ক্যাসেল, কুল্লু মানস্ট্রি, বিষ্ণু মাতা মন্দির, কুল্লুর শাল এবং ড্রাই ফুড মার্কেট, ন্যাচারাল পার্ক। সকল জায়গার বিস্তারিত জানতে আমাদের সাথে থাকুন।

নিকোলাস রোরিচ আর্ট গ্যালারি

সকালে চা-নাস্তা খেয়ে আমরা হোটেল থেকে চেক আউট করে নিলাম। ড্রাইভারকে আগে থেকে বলা ছিল। আমরা সকাল সকাল বের হয়ে গেলাম। মানালির অপূর্ব সুন্দর রাস্তা ধরে ছুটে চললাম নিকোলাস রোরিচ আর্ট গ্যালারি এবং মিউজিয়াম দেখতে। এই আর্ট গ্যালারি এবং মিউজিয়ামটি ইন্টারন্যাশনাল রোরিচ মেমোরিয়াল ট্রাস্টের অধীন। নিকোলাস রোরিচ ছিলেন প্রখ্যাত রাশিয়ান চিত্রশিল্পী, লেখক এবং দার্শনিক। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তিনি বসবাস করলেও জীবনের শেষ পর্যায়টি তিনি ভারতের হিমাঞ্চল প্রদেশের এই জায়গায় অতিবাহিত করেন। তাঁর স্মৃতি বিজাড়িত নানা দৈনন্দিন দ্রব্যাদি এবং তাঁর মনোমুগ্ধকর চিত্র কর্ম দিয়ে এই চমৎকার গ্যালারি এবং জাদুঘরটি সাজানো হয়েছে।

স্টেলোভ এবং ডেভিকা রানির মিউজিয়াম

সুন্দর, ছিমছাম বাড়িটির চারদিকে রয়েছে নানা ধরনের ফুলের সমারোহ। চারিদিকে পাহাড়ে ঘেরা এই শান্ত পরিবেশে ঘুরে বেড়াতে ভাল লাগে। নিকোলাস রোরিচ এবং হেলেনা রোরিচ এর ছেলে স্টেলোভ রোরিচ একজন চিত্রশিল্পী ছিলেন। তিনি ভারতের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ডেভিকা রানিকে বিয়ে করেছিলেন। এখানে আপনি স্টেলোভ এবং ডেভিকা রানির মিউজিয়াম দেখতে পাবেন। পুরো জায়গাটি জুড়ে নানান ধরনের গাছ আর ফুল ফুটে রয়েছে। মিউজিয়াম এর প্রবেশ মূল্য ১০০ রুপি। আমাদের যেহেতু শিল্প ও সাহিত্যের প্রতি আকর্ষণ বেশি তাই আমাদের এই জায়গাটি বেশ ভাল লেগেছিল।

স্টেলোভ এবং ডেভিকা রানির স্মৃতি স্মারক

অনেকটা সময় আমরা নিকোলাস রোরিচ আর্ট গ্যালারি এবং মিউজিয়ামে কাটিয়ে চলে গেলাম নাগার ক্যাসেল দেখতে। নাগার ক্যাসেল হল একটি মধ্যযুগীয় অপূর্ব স্থাপনা যা কুল্লুতে অবস্থিত। ১৪৬০ সালে রাজা সিধ সিং এই ভবনটি নির্মাণ করেছিলেন। বর্তমানে এটি একটি হেরিটেজ হোটেল হিসেবে হিমাচল প্রদেশ টুরিজম এর মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।

কুল্লু মনেস্ট্রি

নাগার ক্যাসেলের পাশে রয়েছে অনেক সুভেনির পেস্ট্রি / কফির দোকান। এই এখানে একটি কফি শপে বসে পেস্ট্রি আর কফি খেয়ে নিলাম। স্বাদ ও মানে খুব ভাল ছিল পেস্ট্রি এবং কফি দুটোই। এরপর রওনা হলাম কুল্লু মনেস্ট্রি দেখতে। পাহাড়ে ঘেরা এই মনেস্ট্রিটি অনেক সুন্দর। শান্ত নিরিবিলি পরিবেশ। বৌদ্ধ ভিক্ষু এবং শিক্ষার্থীদের থাকা খাওয়ার সুব্যবস্থা রয়েছে। সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য অবলোকন করতে পারবেন এখান থেকে প্রচুর পাখির আনাগোনা এমন চমৎকার জায়গায় কিছু সময় অতিবাহিত করে আমরা আবার পথে নেমে পড়লাম। দুই দিকে সবুজ পাহাড়ের সারি দেখে আমাদের গাড়ি ছুটে চলল। সবুজ পাহাড়ের সারি যত দেখি তত মুগ্ধ হই। কখনও যেন পুরোনো হবার নয় এই সুন্দর রাস্তা। চলতে চলতে এসে পৌঁছলাম কুল্লু শাল আর ড্রাই ফুড মার্কেট। এখানে অনেক সুন্দর শাল পাওয়া যায়। ভাল মানের ড্রাই ফুড কিনতে চাইলে এখানে কিনতে পারেন। আমাদের কেনাকাটার তেমন কোন পরিকল্পনা ছিল না। তাই চলে গেলাম বিষ্ণু মন্দির দেখতে। মন্দির দেখে চলে গেলাম কুল্লুর ন্যাচারাল পার্ক দেখতে।

ন্যাচারাল পার্ক

সবুজ গাছে ঘেরা এই ন্যাচারাল পার্ক। আমরা কিছু সময় এখানে ঘুরে একটি ভাল ক্যাফে দেখে পিৎজা খেয়ে নিলাম। দেখতে দেখতে বিকাল হয়ে গেলো। আমাদের দিল্লী যাবার বাস ছিল সন্ধ্যায়। তাই আমরা সরাসরি চলে গেলাম জি বাসের লাউঞ্জে। সেখানে পৌঁছে আমরা গাড়ি ছেড়ে দিলাম। জিং বাসের কাউন্টারটি বেশ বড় লাগেজ রাখার ব্যবস্থা আছে, খাবারের রেস্টুরেন্টও আছে। এখানে সুন্দরভাবে বসে বাসের জন্য অপেক্ষা করা যায়। বাস কাউন্টারের পাশেই বিয়াস নদী বয়ে চলেছে। অপূর্ব সুন্দর এই পাহাড়ী নদীর পাশে আমরা মুগ্ধ হয়ে বসে রইলাম। এই শেষ গোধূলী বেলায়। এই সুন্দরী পাহাড়ী শহরে আবার কখনও সুযোগ পেলে বেড়াতে আসার প্রত্যাশা রইল।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp

অন্যান্য লেখা গুলো পড়ুন