আধুনিকতা আর ঐতিহ্যের অপূর্ব মিশেলে গড়ে ওঠা দিল্লী শহর। এর পরতে পরতে ইতিহাস যেন উঁকি দিচ্ছে হিমাচল ভ্রমন শেস করে আমরা দিল্লীতে চলে আসি। এখানে ৩দিন ছিলাম আমরা। দিল্লীর ঐতিহ্যবাহী খাবার, প্রাচীন স্থাপত্যশৈলী এবং আকর্ষণীয় সংস্কৃতি আমাদের মুগ্ধ করেছিল। আমাদের ভ্রমনকৃত জায়গাগুলোর বিস্তারিত বিবরণ থাকছে আজ এই ভ্রমণ গল্পে।

রেড ফোর্ট বা লাল কিল্লা হল দিল্লীর একটি প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থাপত্য। মুঘল সম্রাট শাহজাহান এই দূর্গটি তৈরি করেছিলেন। যখন তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে মুঘল সাম্রাজ্যের রাজধানী আগ্রা থেকে দিল্লীতে স্থানান্তর করবেন, তখন এটি নকশা করেন উস্তাদ আহমেদ লাহোরি। স্থপতি আহমেদ লাহোরি তাজমহল এর নকশাকারী হিসেবে সমধিক পরিচিত। লোধি গার্ডেন দিল্লী বাসীর কাছে খুব জনপ্রিয় একটি পার্ক। সিকান্দার লোধির সমাধি রয়েছে। সিকান্দার লোধি এই অপূর্ব সুন্দর সবুজে ঘেরা বাগানটি নির্মান করেছিলেন তার শাসনামলে। বর্তমানে এটি আর্কেওলোজিকাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার অন্তর্ভুক্ত একটি স্থাপনা।

খান মার্কেট দিল্লীতে অবস্থিত একটি অতি প্রাচীন মার্কেট। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের সময় অনেক মানুষ দেশান্তরিত হয়ে উদ্ধাস্তু হয়ে পরে। এদের অনেকে দিল্লীতে এসে আবাস গড়ে। ১৯৫১ সালে এই মার্কেটটি স্থাপিত হয় তাদের অর্থনৈতিক ভাবে সাবলম্বী করবার জন্য। খান আবদুল জব্বার খান যিনি খান সাহেব নামে পরিচিত ছিলেন তার নামে এই মার্কেটির নামকরণ করা হয়। দিল্লীতে অবস্থিত বিশ্বের সর্বোচ্চ ইট নির্মিত মিনার হল কুতব মিনার। ভারতের প্রথম মুসলমান শাসক কুতুবুদ্দিন আইবেক ১১৯৩ সালে এটি নির্মান করেন।

ভারতীয় মুসলিম স্থাপত্যকীর্তির গুরুত্বপূর্ণ প্রাচীন নিদর্শন হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে এই মিনারটি। দিল্লীতে রয়েছে ন্যাশনাল গ্যালারি অফ মডার্ণ আর্ট বকলা, শিল্প-সহিত্য প্রেমীদের চমৎকার মিলনস্থল। ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন এই আট গ্যালারিটি ভরপুর হাউজ নামে ১৯৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। শিল্প-সাহিত্যে যাদের আগ্রহ রয়েছে তারা অবশ্যই সময় করে এখানে ঘুরে যাবেন। বহু বাঙ্গালি শিল্পী যেমন যামিনী রায়, নন্দনাল বোস, অটুল বোসে অনেক শিল্পকর্ম এখানে সংরক্ষিত রয়েছে। দিল্লীর প্রাচীন স্থাপত্য দেখতে দেখতে যদি আপনি ক্লান্ত হয়ে যান তাহলে ঘুরে আসতে পারেন। দিল্লীর চঠজ সিনেপ্লেক্সটি ভারতের সবচেয়ে বড় সিনেমা হল। এদের ডিসপ্লে স্কিনটি অনেক বড়। শপিং, খাওয়া আর মুভি দেখে দারুন সময় কাটাতে পারেন।

দিল্লীতে অবস্থিত ভারতে অন্যতম স্থাপত্য নিদর্শন হল মুঘল সম্রাট হুমায়ুনের সমাধি সৌধ। এই সমাধি সৌধটির মাধ্যমে মুঘল স্থাপত্যশৈলীর এক বিশেষ উত্তরণ ঘটেছে বলে মনে করা হয়। পারস্য বাগিচার অনুকরণে এই সমাধি চত্বরের নন্দনকানন-প্রতিম উদ্যান নির্মান করা হয়েছে। স¤্রাট হুমাযুনের পূর্বপুরুষ তৈমুরের সমাধি গুর-ই-আমির এর আদলে এই সমাধি সৌধটি নির্মিত। আগ্রার তাজমহল সহ মুঘল আমলের সুরমা রাজকীয় স্থাপত্য নিদর্শনের পূর্বসুরী হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে এই স্থাপনাটি।

“মসজিদ-ই-জাহাননামা” বা দিল্লীর জামে মসজিদ ভারতের অন্যতম বৃহত্তম মসজিদ। মুঘল স¤্রাট শাহজাহান ১৬৪৪ থেকে ১৬৫৬ সালের মধ্যে মুঘল রাজধানী শাহজাহানবাদে এই মসজিদটি তৈরি করেন। মসজিদটি ভারতে ইসলামিক শক্তি এবং ঔপনিবেশিক শাসনে প্রবেশের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত ছিল। দিল্লীর কেন্দ্রে অবস্থিত মসজিদটির আশেপাশে চাঁদনি চক সহ অনেক ব্যবসা কেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া কাবাব, বিরিয়ানি, মিষ্টান্ন দ্রব্যের জন্য মসজিদের আশেপাশের এলাকা বিখ্যাত। করিমের কাবাব এবং বিরিয়ানি এর পাশে অবস্থিত। দিল্লীতে মিষ্টি আর ননভেজ খেতে চাইলে এখানে অবশ্যই আসবেন। তবে দিল্লী ভেজ খাবারের স্বাদ অসাধারণ।

এই ছিল আমাদের দিল্লী ভ্রমনের সংক্ষিপ্ত গল্প। আপনিও চাইলে ঘুরে আসতে পারেন এই ঐতিহ্যবাহী শহর থেকে। দিল্লীতে অটো, ট্যাক্সি, রিজার্ভ কার নিয়ে ঘুরতে পারেন। অথবা চাইলে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট যেমন বাস বা মেট্রোতে করে সব জায়গায় ঘোরা সম্ভব। তবে গরমকালে এখানকার তাপমাত্রা অনেক থাকে, তাই শীতের শুরুতে এখানে ঘোরার পরিকল্পনা করা ভাল। ছিমছাম, গোছালো শহর দিল্লীতে ৩ দিনের ভ্রমন শেষ করে আমরা চলে এলাম দেশের মাটিতে। বাড়ির পৌঁছে আবার নতুন ভ্রমনের পরিকল্পনা চলবে। আশা করব আমাদের সাথে থাকবেন।