হোক ইচ্ছের বহিঃপ্রকাশ...

দার্জিলিং ডায়েরি – পর্ব ০৪

পাহাড়ি নদীর অবিরাম ছুটে চলা আর তীরে বসে বন্য পাখিদের আনাগোনা দেখবো বলে দার্জিলিং এর পাশে বিজনবাড়ি নামের একটি জায়গায় আজ আমাদের যাত্রা। রিংগিত নদীর পাশে গড়ে ওঠা সুন্দর একটি রিসোর্টে আজ রাত থাকবো আমরা দু’জন। আমাদের এই ভ্রমন গল্পে আপনাকে স্বাগত।

রিসোর্টে সকাল বেলা

দার্জিলিং থেকে খুব সকালে আমরা রওনা হলাম বিজনবাড়ি যাব বলে। হেঁটে হেঁটে চলে আসলাম বিজনবাড়ি যাবার শেয়ার ট্যক্সি স্ট্যান্ডে। মূল বাস স্ট্যান্ড থেকে একটু দূরে বিজনবাড়ি যাবার স্ট্যান্ড। লোকাল যেকোন মানুষকে বিজ্ঞাসা করলে আপনাকে দেখিয়ে দেবে। আমরা ৭৫০ রুপিতে ৩টি সিট নিয়ে নিলাম একটু আয়েশ করে যাব বলে। বিজনবাড়ি আসতে আমাদের ২ ঘণ্টা সময় লেগেছিল। একটি ট্যাক্সি ১৫০ রুপিতে ভাড়া করে রেলিং রিংগিত রিভার সাইড রিসোর্টে চলে আসলাম।

আমরা দুজন

আমাদের রুম আগে থেকে বুক করা ছিল। সকালের নাস্তা সহ রুম ভাড়া ছিল ১৫০০ রুপি। এত কম ভাড়াতে এত সুন্দর রুম পাওয়ার সত্যি অবাক করা বিষয়। আর রুমের বারান্দা থেকে যে মনোরম দৃশ্য ছিল তা এক কথায় অসাধারণ। তবে এখানে ওয়াই ফাই সুবিধা ছিল না। কিন্তু স্টাফরা অনেক অমায়িক ছিল। আমরা রুমে এসে বারান্দায় বসে মুগ্ধ হয়ে বসে ছিলাম অনেকটা সময়। তারপর গোসল করে দুপুরের খাবার খেতে গেলাম। তাদের নিজস্ব ডাইনিং আছে, ডিম, ডাল, ভাত, পাপড়, সবজি দিয়েছিল। খাবারের স্বাদ ছিল ভাল। দুপুরে খেয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে রিসোর্টে ঘুরতে বের হলাম। নানা ধারনের ফুল গাছ দিয়ে সাজানো রিসোর্টটি একটি ছোট লেক আর ব্রিজ করেছে তারা। বেশ কয়েকটি কটেজ আছে। আরও নতুন কিছু হচ্ছে। ছিমছাম প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে ওঠা এই রিসোর্টটি আমাদের বেশ ভাল লেগেছে। এই দামে এত সুন্দর রিসোর্ট আমাদের দেশে বিরল। রিংগিত নদীর পাশে অনেক সময় বসে থেকে আমরা দু’জনে হাঁটতে বের হলাম।

রেলিং রিঙ্গিত রিসোর্ট

রিসোর্টের চারদিকে পাহাড়ি বন। প্রচুর পাখির আবাস। হাঁটতে হাঁটতে সন্ধ্যা হয়ে এলো আমরা রুমে এসে পনির পাকোড়া আর কফি ওর্ডার করলাম। বরান্দায় বসে পাহাড়ি নদীর শব্দ শুনতে শুনতে কফি খেতে লাগলাম দু’জনে গল্প করতে করতে। কখন রাতের খাবারের সময় হয়ে গেছে টের পাইনি। রিসোর্টের স্টাফ এসে রুমে ডিনার দিয়ে গেল। চিকেনের তরকারি, সবজি, ডাল, ভাত। বেশ আয়েশ করে খেয়ে ঘুমিয়ে পরলাম। পরদিনসকালে পাখির ডাকে ঘুম ভেঙ্গে গেল। সূর্য তখনও পুরো চোখ মেলে তাকায় নি। এক অপার্থিব সৌন্দর্যে যেন চারিদিক ভেসে গেছে। নি:শব্দতার এমন চমৎকার রূপ আগে কখনও দেখিনি। ধীরে ধীরে গাছের ফাঁক দিয়ে সূর্য রশ্মি পাহাড়ি নদীকে আলোকিত করতে লাগল। ক্ষণে ক্ষণে প্রকৃতির এমন রূপ পরিবর্তন আমাদের মনকে পুলকিত করতে লাগল। ইচ্ছে করছিল এই পাহাড়ি নদীর পাশে থেকে যাই বাকিটা জীবন। কিন্তু চলে যাবার সময় হয়ে এসেছে।

বিকেল বেলা আমরা দুজন

হোটেলের মালিক আমাদের অফার করেছিলেন তার সাথে দার্জিলিঙ যাবার। আমরা তাই নাস্তা খেয়ে তাদের সাথে এক গাড়িতে চলে যাই দার্জিলিঙ। ড্রাইভারকে ৫০০ রুপি দিয়েছিলাম। রিসোর্টের মালিক বেশ ভদ্র ও আন্তরিক ছিলেন। আমরা ১১:৩০ এ চলে দার্জিলিং এ। সেখানে NBSTC এর একটি বাস পেয়ে গেলাম ১২ টায়। বাসটি দার্জিলিং থেকে শিলিগুড়ি যাবে। ভাড়া নিল ১০০ রুপি জন প্রতি। ঠিক সময়ে বাস চলতে শুরু করল। সিটগুলো মন্দ ছিল না। পথে একটু বিরতি নিল। সেখানে দেখলাম আলুর ডালের সাথে ঝুরিভাজা বিক্রি করছে। আমরাও ভাবলাম একটু চেখে দেখি। বেশ মজাই লাগল খেয়ে। বিরতির পর বাস আবার চলতে লাগল শিলিগুড়ি আসতে আসতে প্রায় ৩ টা বেজে যায়। আমরা আসার সময় যে হোটেলে ছিলাম আবার সেই হোটেলে উঠলাম। হোটেলে এসে ফ্রেশ হয়ে সন্ধ্যায় বের হলাম শিলিগুড়ি শহরটা ঘুরব বলে। প্রথমে গেলাম শিলিগুড়ির বিখ্যাত মার্কেট বিধান মার্কেটে। সেখান থেকে হংকং মার্কেট। সেখানে ঘুরে ঘুরে দেখলাম। হঠাৎ চোখে পরল জিলাপি ভাজা হচ্ছে। তাই দু’জনে লোভ সামলাতে না পেয়ে খেয়ে নিলাম ২ প্লেট জিলাপি। এরপর অটো নিয়ে ঘুরতে লাগলাম। ঘুরতে ঘুরতে চলে এলাম Cormos shopping complex এ। এখানে বিরাট Food Court এ বসে চিকেন রোল আর চিজ রোল খেয়ে নিলাম পাশে দেখলাম মিত্র ক্যাফে। কলকাতার বিখ্যাত মিত্র ক্যাফের শাখা সেখানে বসে এক কাপ চা খেয়ে হোটেলে ফিরে আসলাম।

সুন্দর সময় কেটেছিল এই পাহাড়ি নদীর পাশের রিসোর্টে

পরদিন সকালে চা-নাস্তা খেয়ে রওনা হলাম বাড়ির পথে। প্রথমে বাসে করে শিলিগুড়ি থেকে বাইপাস। তারপর বর্ডার ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে বুড়িমারি। ২ পাশের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে আধা ঘণ্টা সময়ও লাগে নাই। এরপর আমরা SR এর ওয়েটিং রুমে বিশ্রাম নিলাম কিছু সময়। কারণ আমাদের ট্রেন ৪ টায়। মাঝে বুড়ির হোটেলে গরুর মাংস, ছোট মাছ দিয়ে ভাত খেয়ে নিলাম। তারপর একটি অটো নিয়ে চলে আসলাম টেন স্টেশনে।

“করতোয়া” এই ট্রেনটি বুড়িমারি সীমান্ত থেকে গাইবান্ধা হয়ে বগুড়ার সান্তাহার যায়। আমরা রাত ৮:৩০ এ গাইবান্ধাতে চলে আসি। ৪ রাত ৫ দিনের সংক্ষিপ্ত এই যাত্রাটি সব মিলিয়ে বেশ উপভোগ্য ছিল। আমাদের এই অফবিট দার্জিলিং ভ্রমণ অভিজ্ঞতা আশা করছি আমাদের ভাল লেগেছে। প্রত্যাশা করি আগামীতে আবার কোন নতুন জায়গার নতুন গল্প নিয়ে হাজির হবো আমরা খুব শীঘ্রই।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp

অন্যান্য লেখা গুলো পড়ুন