কাশ্মীরের নায়াগ্রা – হ্যাঁ ঠিক শুনেছেন। উঁচু পাহাড় থেকে ভুমিতে পতিত এক প্রকান্ড জলপ্রপাত দর্শনের গল্প আজ রয়েছে আপনাদের জন্য। ভারতের কাশ্মীরের দক্ষিণ-পশ্চিমে রয়েছে এই বিষ্ময়কর জলপ্রপাতটি, যা স্থানীয়দের কাছে আহারবাল জলপ্রপাত নামে পরিচিত। এই চমৎকার জলপ্রপাত দেখতে কিভাবে যাবেন, কত সময় লাগবে, কি কি দেখবেন এবং কত খরচ হবে তার সবকিছু আজ আপনাদের জানিয়ে দেব।

আহারবাল যাব বলে আমরা সকাল সকাল তৈরি হয়ে নিলাম। শ্রীনগরে আমরা যে হোটেলে ছিলাম তার নীচে এক বাঙ্গালী রোঁস্তোরা ছিল। দারুন স্বাদের পুরি আর সবজি বানাতো। আমরা শ্রীনগরে যে কয়দিন ছিলাম এখানেই থেকেছি। শ্রীনগর ভ্রমনের গল্প যেদিন করব সেদিন আরও বিস্তারিত বলব আপনাদের এই হোটেল সম্পর্কে। চা-নাস্তা সেরে আমরা সকাল ৯টার দিকে রওনা হলাম। ড্রাইভার সাজ্জাদ ভাইকে আগের দিন বলা ছিল। তিনি সময় মত উপস্থিত। আমরা তাই দেরি না করে রওনা হলাম।

কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগর থেকে আহারবালের দূরত্ব প্রায় ৬১ কিমি। সময় লাগে প্রায় ২ ঘন্টার মত। কাশ্মীরে গাড়ি ভাড়া প্রতি দিনের হিসেবে হয় সাধারণত। আমাদের আহারবাল যাওয়া-আসার খরচ লেগেছে ২২০০ রুপি। আপনি চাইলে অনন্তানাগ পর্যন্ত ট্রেনে বা বাসে আসতে পারেন। তারপর সেখান থেকে লোকাল গাড়িতে করে আহারবাল আসা যায়। তাবে আহারবাল কাশ্মীরের খুব জনপ্রিয় টুরিস্ট স্পট না। অফ বিট টুরিস্ট স্পট হিসেবে পরিচিত এই জায়গাটি। তাই গাড়ি ভাড়া করে আহারবাল আসাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।

আমরা বেলা এগারোটার দিকে আহারবাল পৌঁছে গেলাম। আগের দিন কুরবানি ঈদ ছিল। আজ কাশ্মীরে ছুটির দিন। প্রচুর স্থানীয় মানুষ জন এসেছে দেখলাম। এখানে খুব বেশী বাংলাদেশী আসেন না বুঝতে পারলাম। অনেকে ঘুরে ঘুরে তাকাচ্ছে আমাদের দিকে। কাশ্মীরী মানুষজন বাংলাদেশীদের খুব পছন্দ করে। অনেকে এসে আমাদের সঙ্গে আলাপ করলেন। এখানে জলপ্রপাত এ প্রবেশের মুখে টিকিট কাউন্টার পেয়ে যাবেন। ২০ রুপি দিয়ে টিকিট নিয়ে আমরা ঢুকে পরলাম। এথানে ছোট একটি পার্ক আছে। সবুজ গাছ আর পাহাড়ে ঘেরা। বেশ ভাল লাগছিল। ছোট ছোট কিছু দোকান আছে চিপস্, বিস্কিট, পানীয় বিক্রি করছে তারা। ভিতরে কিছু লোহার চেয়ার দেখলাম বসার জন্য। একটি রেস্টুন্টে আর টয়লেটও দেখলাম আছে। অন্য সব জায়গার মত কাশ্মীরের নিজস্ব পোষাক পরে ছবি তোলার ব্যবস্থা আছে।

তবে আমরা যেহেতু জলপ্রপাত দেখব বলে এসেছি। তাই প্রথমে চলে গেলাম জলপ্রপাত দেখতে। কাশ্মীরের কুলগাম জেলার মধ্যে পড়েছে এই জলপ্রপাতটি। আগে এখানে এরকম রেলিং দেখা ছিল না। খোলা ছিল এই রাস্তাটি বর্তমানে কর্তৃপক্ষ উঁচু করে লোহার রেলিং দিয়ে দিয়েছেন। অনেকে সেলফি তুলতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছেন। তাই কর্তৃপক্ষ পর্যটকদের নিরাপত্তার খাতিরে এমন করে দিয়েছেন। তারপরে আমরা দেখলাম অনেকে রেলিং এর উপরে উঠে ছবি তুলছেন। আমাদের সকলের ঘুরতে এসে নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়টি খেয়াল রাখা উচিত।

হাঁটতে হাঁটতে আমরা জলপ্রপাতের শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। দূর থেকে কিছুটা দেখা যাচ্ছিল। উঁচু পাহাড়ের সারি। সবুজ গাছে ঢাকা চারিদিকে। দূরে জলপ্রপাতের শব্দ। দারুন লাগছিল সেই অনুভূতিটি। জলপ্রপাতের সম্মুখে যাবার জন্য সিঁড়ি করে দেয়া হয়েছে। যেহেতু নামছিলাম আমরা তাই কোন সমস্যা হচ্ছিল না। তবে উচু রেলিং থাকতে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগে বাধা পরছিল।

ধীরে ধীরে আমরা জলপ্রপাতের আরও সন্নিকটে চলে এলাম। বিশাল জলপ্রপাতটি পাহাড়ের উঁচু থেকে নীচে পতিত হচ্ছে। জলের সেই গম্ভীর আওয়াজ আর মূর্তি দেখে আমরা অভিভূত। অনেক সময় নিয়ে আমরা জল প্রপাতে সৌন্দর্য উপভোগ করলাম।

জলপ্রপাত দেখে এবার ফেরার পালা। এবার উপরে উঠতে হবে। তাই কিছুটা কষ্টকর। আমরা ধীরে ধীরে উঠতে লাগলাম। মাঝে মাঝে বসে ছবি তুললাম। উপরে এসে আমরা রেস্টুরেন্ট এ বসে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। ঈদের পরের দিন হওয়াতে অনেক কর্মচারী ছুটিতে। রেস্তোঁরার মালিক নিজে আমাদের খাবার পরিবেশন করে দিলেন। খাবারের মান চলনসই। আমাদেরও বেশ ক্ষুধা লেগেছিল তাই খেয়ে নিলাম। এখানে যারা বেড়াতে এসেছেন তারা অনেকেই দেখলাম খাবার রান্না করে নিয়ে এসেছেন। পার্কে বসে পরিবার বন্ধু নিয়ে একসাথে আহার করছেন। খাবার শেষে আমরা পার্কে বসে থাকলাম কিছু সময়। সবুজ প্রকৃতির মাঝে বসে থাকতে বেশ ভাল লাগছিল। এবার ফেরার পালা। সাজ্জাদ ভাই পার্কের বাহিরে অপেক্ষা করছিলেন। পথের অপূর্ব সৌন্দর্য দেখতে দেখতে আমরা শ্রীনগর ফিরে আসলাম। আগামীকাল যাব কাশ্মীরের আরো একটি চমৎকার জায়গা ইউসমার্গ দেখতে। আমাদের ইয়ুসমার্গ ভ্রমণ গল্প উপভোগের আমন্ত্রণ রইল।